সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাকিয়ে ছিলেন টিভি সেটের দিকে। বিশ্বকাপের প্রথম খেলাটা দেখার জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩১২ রানের টার্গেট দিয়ে ইংল্যান্ড যখন তাদের ব্যাটিং শেষ করে, তখনই ধারণা করা গিয়েছিল বড়োসড়ো জয় পেতে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। বোলিং নৈপুণ্যে ঠিকই ১০৪ রানের বিশাল জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ড।
বিস্ময়কর হলেও সত্যি, ইংল্যান্ডের এ বিজয় দেশটির ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মাঝে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। শীর্ষ ক্লাব দূরে থাক, স্থানীয় ফুটবল লীগে কোনো শহরের টিম যেদিন খেলে; ওই শহরে সেদিন পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। আর জাতীয় দলের খেলা হলেতো কথাই নেই। শহরগুলো জেগে ওঠে। সারা দেশের ট্রেন-বাস-রেস্টুরেন্ট-পানশালায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে সেই একই আলোচনা।
কিন্তু ক্রিকেটের এই বিজয়ে সেই উন্মাদনার ছিটেফোঁটাও নেই। একজন বয়স্ক লোকের কাছে বিশ^কাপ ক্রিকেট নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলাম। উত্তরে তিনি বললেন- আমি খেলা দেখিনি, শুনেছি আজ ইংল্যান্ডের ক্রিকেট গেম ছিল, আমিতো সিটির (ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাব) ফ্যান।
এই হলো ক্রিকেট নিয়ে ব্রিটেনের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ভাবনা। এ যেন এক সাহেবি খেলা! সাধারণ মানুষের যেন এ নিয়ে নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়। আমি যে শহরটাতে থাকি, মনে হয়েছে ইংল্যান্ডের জয়েও সে শহরটি যেন ঘুমে নিমগ্ন।
কিন্তু বিশ্ব তাকিয়ে আছে এ দেশটির দিকে। বিশেষত বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারত তথা এশিয়ার দেশগুলোর চোখ এখন ব্রিটেনের দিকে। আর এতেই লাভবান হচ্ছে ব্রিটেন। বিদেশিদের আদর-আপ্যায়নের ঘাটতি নেই। নিরাপত্তাও আছে তাদের। প্রত্যেকটা জায়গা অর্থাৎ যে শহরগুলোতে খেলা হচ্ছে, সেই শহরগুলোতে আছে বিশেষ নজরদারি। স্থানীয় কাউন্সিল, পুলিশ বিভাগ গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করছে সবকিছু। ব্যবসায়িক কমিউনিটি সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা দেবার চেষ্টা করছে।
ব্রিটেনের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর বার্মিংহাম। ব্যাপক সংখ্যক বাংলাদেশি, পাকিস্তানি আর ভারতীয় মানুষের আবাস এই শহর ঘিরে। এই শহরের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হবে বিশ্বকাপের পাঁচটি খেলা। এরমধ্যে ইংল্যান্ড-ভারত ম্যাচও আছে। ওই দিন ইংল্যান্ড সমর্থকদের ঘাটতি থাকতে পারে, কিন্তু ভারতীয় সমর্থকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাবে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বাংলাদেশ-ভারতও মুখোমুখি হবে বার্মিংহামেই। যে খেলার টিকেট ফুরিয়ে গেছে অনেক আগেই। এই খেলাটি নিয়ে টান টান উত্তেজনা আছে। কারণ ভারতীয় সমর্থক যেমন এ খেলায় উপস্থিত হবে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশি হাজার হাজার সমর্থকও জানান দেবেন তাদের সপ্রাণ উপস্থিতি।
বার্মিংহামের স্থানীয় অর্থনীতিতে একটা বড় ধরনের সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে মাত্র এই পাঁচটি দিন। একাউন্টেন্সি ফার্ম ‘ই ওয়াই’ জানিয়েছে, শুধুমাত্র এই পাঁচটা দিনকে ঘিরে বার্মিংহাম কম করে হলেও ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থনৈতিক বাণিজ্য করবে। এই পাঁচদিনে এই শহরে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে হোটেলগুলোয় অই কটা দিনের জন্য রুম সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার, পানীয়, ট্রান্সপোর্ট, ভ্রমণ, বিদেশি পর্যটক এবং শহরটির সেবা খাত মিলিয়ে এই ৩২ মিলিয়ন পাউন্ড রাষ্ট্রটির অর্থনীতির একটা অংশ হবে।
এই-ই হলো ব্রিটেন। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা না থাকলেও এর পেছনে দেশটির বিনিয়োগের কোনো কমতি নেই। আর তাই এশিয়ার জনপ্রিয় এই খেলাটির স্বাগতিক দেশ হয়ে তারা তাদের সেবা ঠিকই দিয়ে যাচ্ছে এবং বাণিজ্য করছে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড।