ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর বা জন্মস্থান হলো ব্রিটেন। সে হিসেবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে যেটুকু উন্মাদনা থাকার কথা, স্টেডিয়ামের বাইরে তার ছিঁটেফোঁটাও চোখে পড়ছে না। অথচ ফুটবল নিয়ে এদের কী মাতামাতি! প্রিমিয়ার লীগের একটা ফুটবল খেলা থাকলেও ব্রিটেনের শহরগুলো যেন ভাসতে থাকে আনন্দের জোয়ারে। পানশালাগুলো লোকারণ্য হয়। মাতাল লোকজনের চিৎকার-হইচইয়ে সরগরম থাকে পথ-ঘাট। সে তুলনায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে নেই কোনো উন্মাদনা। রাস্তায়-অফিসে এ নিয়ে নেই খুব একটা আলোচনা।
তবুও ইংল্যান্ডেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ এখানে এসেছে নান্দনিক ব্যাটিং আর তুখোড় বোলিং দেখতে। আপামর জনগণের কাছে এ খেলার খুব একটা জনপ্রিয়তা না থাকলেও ক্রিকেটপ্রেমী কিংবা ক্রীড়ায় মত্ত মানুষেরও কমতি নেই এ দেশে। তাছাড়া দুই দশক পর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসেছে ব্রিটেনে, সুতরাং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কোনো ঘাটতি নেই। ব্রিটেনের রানিও যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করছেন অংশগ্রহণকারী ১০ দলের অধিনায়ক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খুব সহজেই সাক্ষাৎ করতে পারে এ দেশের নাগরিকরা, কিন্তু চাইলেই রানির সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবেই রানির সঙ্গে সাক্ষাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এবার ল্যাঙ্কাশায়ারের ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হবে ৬টি খেলা। এর মাঝে দুটো সেমিফাইনালও এখানেই হবে। কিন্তু ১৬ জুনের ম্যাচটি নিয়ে ম্যানচেস্টার রীতিমতো তটস্থ হয়ে আছে। রাজনৈতিক কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে সবসময় একটা অস্থিরতা বিরাজ করে, যার রেশ আছে ক্রিকেটেও। এ দুটি দেশের প্রতিটি ম্যাচেই থাকে টান টান উত্তেজনা।
ল্যাংকাশায়ার ক্রিকেট গ্রাউন্ড পুনর্নির্মাণ করে এখানে ২৩ হাজার দর্শকের আসন সংকুলানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ ১৬ জুনের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকেটের জন্য বিস্ময়করভাবে প্রায় ৫ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন। বিক্রি শুরুর অল্প ক’দিনের মধ্যেই এই ম্যাচের সব টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। আর এখন চলছে টিকেটের জন্য হাহাকার। কেউ কেউ এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন। আগে কিনে রাখা টিকেট এখন কালোবাজারে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ ২৫০০ পাউন্ড অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে টিকেট সংগ্রহের খবর দিয়েছে জনপ্রিয় পত্রিকা ম্যানচেস্টার ইভিনিং নিউজ। ইতোমধ্যে আইসিসি ভিন্ন কোন মাধ্যমে টিকেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।
কিন্তু ম্যানচেস্টার কাউন্সিল লাখো ক্রীড়ামোদিদের আশাহত করছে না। সম্প্রতি কাউন্সিল এক বিশেষ ‘ফান ভিলেজ’ খোলার ঘোষণা দিয়েছে। সিটি সেন্টারের ক্যাথেড্রেল গার্ডেনে এই ফান ভিলেজে থাকবে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের ঐতিহ্যবাহী খাবার, গাইবেন সেখানে খ্যাতিমান শিল্পীরা, থাকবে ভিন্ন ধরনের বিনোদনের আয়োজন। আর ঐ ফান ভিলেজে থাকবে বিশাল স্ক্রীন, যেখানে মানুষ উপভোগ করবে ঐদিনের ভারত আর পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ। সারা শহরে ঐদিন বিশেষ পুলিশ টহল থাকবে। উত্তেজনা না ছড়াতে এখন থেকেই সমর্থকদের সতর্ক বার্তা দিয়ে রেখেছে স্থানীয় পুলিশ।