­
­
বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সুইডেনে অতর্কিত বন্দুক হামলায় নিহত ৩  » «   ইতালিতে বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের  » «   ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে চমক: চীনের ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশ  » «   কানাডায় লিবারেলদের জয়, কী কারণ  » «   রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «   গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আটক  » «   ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নিতে পারে?  » «  

ইলবার্ট বিল ও বর্তমান বাস্তবতা



ব্রিটিশ ভারতে বিতর্কিত ইলবার্ট বিল কেন লর্ড রিপনকে সংশোধন করতে হয়েছিল, তার পেছনেও আছে লজ্জাজনক ইতিহাস!

ভাইসরয় লর্ড রিপন ভারতীয় ইতিহাসবিদদের নিকট যথেষ্ট সম্মানের পাত্র। তাঁর ১৮৮৪ সালে প্রবর্তন করা ‘Local self Govt’ অর্থাৎ স্বায়ত্তশাসন এখনও ভারতবর্ষে পঞ্চায়েতরাজ নামে সমধিক জনপ্রিয়। সেই লর্ড রিপন ১৮৮৩ সালে ইলবার্ট বিল এনে ভারতীয় ও ব্রিটিশ নাগরিকদের বিচারের ক্ষেত্রে “সমতা” আনতে চেয়েছিলেন। আগে কোনও ভারতীয় বিচারক কোনও ব্রিটিশ নাগরিকের(অভিযুক্তের) বিচার করার অধিকারী ছিলেন না! লর্ড রিপন ইলবার্ট বিলের মাধ্যমে আইন প্রণয়নপূর্বক সেই বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিলের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন ব্রিটিশ নাগরিকরা! বিশেষত, ব্রিটিশ মহিলারা! কারণ, ইতিপূর্বে কতিপয় ব্রিটিশ মহিলা কতিপয় ভারতীয় পুরুষদের দ্বারা বলাৎকারের শিকার হয়েছিলেন এবং তাঁরা আতঙ্কিত ছিলেন, বিলটি আইনে পরিণত হলে ভারতীয় বিচারকদের নিকট থেকে তাঁরা “ন্যায় বিচার” পাবেন না! ফলে, তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে লর্ড রিপনকে বিলে সংশোধনী আনতে হয়েছিল! সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ নাগরিকদের (অভিযুক্তদের) বিচারের ক্ষেত্রে জুরি বোর্ড গঠন করা হবে ও সেই বোর্ডে কমপক্ষে ৫০শতাংশ ব্রিটিশ সদস্য থাকতে হবে। ২৫ জানুয়ারি,১৮৮৪ সালে বিলটি লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে পাশ হয় ও ১লা মে,১৮৮৪ সালে তা কার্যকর হয়। এতে দেখা গেল যে, ব্রিটিশ শাসনেও এক শ্রেণির বিচারকের বিরুদ্ধে “পক্ষপাতিত্ব” করার অভিযোগ ওঠেছিল ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রনয়ণের সময় তা ভারতে বসবাসকারী ব্রিটিশ জনগণের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল!

বর্তমান প্রেক্ষিতেও, অর্থাৎ বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিতর্কে গত বছর নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও গত কাল অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর, বুধবার, লক্ষ্ণৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত যে রায় প্রদান করেছে, তাতে একটি জনগোষ্ঠী তীব্র অসন্তুষ্ট! বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ বিচারের নামে এই রায়কে “প্রহসন” বলে আখ্যায়িত করেছেন! “পক্ষপাতিত্ব”-এর অভিযোগে বিচারব্যবস্থার প্রতি একটি জনগোষ্ঠী যখন আস্থা হারাতে বসেছেন, তখন গুরুত্ব অনুসারে জুরি বোর্ড গঠন করে সেই বোর্ডে অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্য সেই আস্থা হারানো মুসলিম জনগোষ্ঠী থেকে অন্তর্ভুক্তির দাবি কি অযৌক্তিক হবে?

সাচার কমিশনের রিপোর্টে মুসলিমদের প্রতি অসাম্য ও বঞ্চনা নিরসনে সরকারি নিযুক্তির সময় ইন্টারভিউ বোর্ড/সিলেকশন বোর্ড, মুসলিম অধ্যুষিত থানা ইত্যাদিতে মুসলিম প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ড০ মনমোহন সিং তাঁর পনেরো দফায় তা কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিভিন্ন সরকারি নিযুক্তির ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ বোর্ড/সিলেকশন বোর্ডে মুসলিম এক্সপার্ট, বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত থানায় কমপক্ষে একজন মুসলিম আধিকারিক রাখার ব্যবস্থা সেই পনেরো দফা কার্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। তাই, কোনও বিচারাধীন মামলায় দুটি সম্প্রদায় যখন সরাসরি সংশ্লিষ্ট, তখন উভয় সম্প্রদায় থেকে সমসংখ্যক বিচারক-এর প্যানেল তৈরি করে বিচার কার্য সম্পন্ন করা হোক। প্যানেলের নিরপেক্ষতা রক্ষার লক্ষ্যে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিও অন্তর্ভক্ত করা সময়ের দাবি। না-হলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় “ন্যায়” থেকে এভাবেই বঞ্চিত হতে থাকবেন বার বার!

০১.১০.২০২০
বৃহস্পতিবার

লেখক: কবি,গবেষক ও শিক্ষাবিদ । প্রকাশক, দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। করিমগঞ্জ। অসম।

আরও পড়ুন:

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন