­
­
বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
মানবিক করিডর আসলে কী, বিশ্বের আর কোথায় আছে, কতটা কার্যকর?  » «   বিএনপি না জামায়াত কোন দিকে ঝুঁকছে ইসলামপন্থি দলগুলো?  » «   সুইডেনে অতর্কিত বন্দুক হামলায় নিহত ৩  » «   ইতালিতে বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের  » «   ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে চমক: চীনের ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশ  » «   কানাডায় লিবারেলদের জয়, কী কারণ  » «   রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «  

স্পেনে অবৈধ অভিবাসী‌দের বৈধতার দাবীতে বিক্ষোভ মি‌ছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত



স্পেনের রাজধানী অনিয়‌মিত অভিবাসী‌দের নিয়‌মিতকরণসহ বি‌ভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ মি‌ছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল‌টি দেশটির রাজধানী মাদ্রিদের জিরো পয়েন্ট খ্যাত সোল থেকে শুরু হ‌য়ে সংসদ ভবনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় সংকিপ্ত সমাবেশ শেষে দেশটির প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও অভিবাসী বিষয়ক মন্ত্রীর নিকট স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।

পূর্বঘো‌ষনা অনুযায়ী ২৬ জুন বেলা ১২টায় মাদ্রিদের সোল এলাকায় দলে দলে লোকসমাগম হতে থাকে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে। হাজারো মানু‌ষের অংশগ্রহণ‌ আর স্লোগ‌নে মুখরিত হয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন। ‘সবাইকে নিয়‌মিত করা হোক। আমরা যারা নিয়মিত, আমাদের যাদের কাগজ আছে, তাঁরাও একাত্মতা প্রকাশ কর‌ছি সবাইকে নিয়‌মিত করা হোক।’

বি‌ক্ষোভে অন্য দে‌শের অভিবা‌সীদের সঙ্গে বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলাসহ ২৯ টি বিভিন্ন দেশী ও স্প্যানিশ মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার অভিবা‌সী আন্দোলনে অংশ নেন। সমাবে‌শ শেষে বি‌ভিন্ন সংগঠ‌নের প্রতি‌নি‌ধিরা বক্তব্য দেন। সমা‌বে‌শে বক্তারা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দো‌লন চা‌লিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

একটি সূত্রে জানা যায়, স্পেনে ১০ হাজার বাংলাদেশিসহ অবৈধ হয়ে পড়া মোট অনিয়মিত বা অভিবাসীর সংখ্যা দুই লাখ। তাঁরা বাংলাদেশ, পা‌কিস্তান, সি‌রিয়া, ‌তিউনি‌সিয়া, আফগা‌নিস্তান, ইরাক, নাইজে‌রিয়া, সেনেগাল, আলজেরিয়া, মরক্কো,সোমা‌লিয়া, ‌তিব্বত ও আফ্রিকার অভিবাসী।

মহামারি ক‌রোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় ইউরোপের দেশগুলো ভীষণ ক্ষ‌তিগ্রস্ত। এর ম‌ধ্যে ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স উল্লেখযোগ্য। আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশ ইতিম‌ধ্যে অনিয়‌মিত অভিবাস‌ীদের বৈধকর‌ণের ঘোষণা দি‌য়েছে। স্পেনে বসবাসরত অনিয়‌মিত অভিবাসীরা ও ভেবেছিলেন, অন্যান্য দে‌শের মতো স্পেন সরকারও অনিয়‌মিত অভিবাসীদের নিয়‌মিতকরণের ঘোষণা দেবে দেশটির সরকার।

করোনার এ সংকট সম‌য়ে স্পেনে অনিয়‌মিত অভিবাসীদের নিয়‌মিতকরণের জন্য স্পেনের পার্লামেন্টের সদস্য, ক‌মিশনার, বি‌শিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারকে অনুরোধ করেন।গত ১৯ মে স্পেনের সংসদ অধিবেশনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতাকরণে একটি প্রস্তাব ও উঠে।

সিনেটর পিকরনেল গ্রেন্সনা দেশটির অভিবাসীবিষয়ক মন্ত্রীর উদ্দেশে এ প্রস্তাবটি আনেন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর সরকার জোর দাবি দিয়ে বলে যাচ্ছে, এই ভাইরাস আমরা সবাই একত্রে মিলে প্রতিহত করবে এবং এর থেকে কাউকে পেছনে পড়ে থাকতে দেবে না। সরকার যদি আসলেই তা মনে করে, তাহলে স্পেনে যত অবৈধ অভিবাসী আছে, তাদের সবাকেই এখন বৈধতা প্রদান করা উচিত। যদি বৈধ কাগজ না থাকে তাহলে তারা তাদের অধিকার ঠিকমতো আদায় করতে পারে না। এটা আসলে এই সময় খুবই বড় ভাবনার বিষয়, বিশেষ করে কোভিড-১৯–এর এই মহামারির সময়। যদি কাগজ না থাকে, তাহলে কাজ থাকে না, থাকে না একটা ভালো বেতন, কোনো ভালো বাসা থাকে না, না থাকে একটা মর্যাদাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা সমাজ থেকে তাদের আলাদা করে দেয়। তাই আমাদের এদের প্রয়োজনে যা কিছু করা দরকার তা করা উচিত।’ তিনি পর্তুগাল ও ইতালির উদাহরণ টেনে দেখান যে বর্তমান এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই দুই দেশের সরকার তাদের দেশের অভিবাসীদের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

জবাবে দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা ও অভিবাসীবিষয়ক মন্ত্রী খোসে লুইস এসক্রিভা বেলমন্তে, সিনেটরের প্রস্তাব গ্রহণ করে জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে এই প্রস্তাবনার আলোকে কাজ করে যাচ্ছে, এবং তাঁরা নিজেরা আরও খুঁজে দেখছেন যদি আরও কিছু করা যায়। তাঁরা কিছু সুবিধা ব্যবস্থা পেয়েছেন আর দেখছেন যদি আরও কিছু পাওয়া যায়। বিশেষত ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রের অভিবাসী সচিব এই বিষয়ে কাজ করছেন এবং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বিষয়টির ওপর অবগত আছেন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, বছরের পর বছর অবৈধ অভিবাসীরা ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের পেশায় নিয়োজিত থেকে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অথচ এসব অবৈধ অধিবাসীর বৈধতা দিলে বৈধ কাজ করে নিয়মিত সরকারকে ট্যাক্স-পে প্রদানের মাধ্যমে স্পেনের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। অভিবাসীরা সব সময়ই স্পেনের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু।

বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে এলাহী, সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিনসহ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জুলহাস উদ্দীন, আল আমীম পালওয়ান, মকবুল হোসেন, মানিক আহমদ, শাহ আলম প্রমুখ।

এসময় মানবাধিকার সংগঠনগুলো দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার দাবিতে সরকারের পক্ষ‌ থেকে কোনো সন্তোষজনক সাড়া না পেলে আগামী ৩০ জুন দেশটির প্রতিটি শহরে সিটি কউন্সিল (ayotamento) অফিসে পৃথক পৃথকভাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানায়, স্পেনে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার অভিবাসী বান্ধব সরকার হিসেবেই পরিচিত। বর্তমান সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকারের আমলে ২০০৫ সালে অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।
২০১৬ সালের ২৪ জুন স্থানীয় গণমাধ্যম ‘ইউরোপা প্রেস’–এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান পেদ্রো সানচেজ। অবৈধদের বৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করার ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহের কথা বলেছিলেন তিনি।বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা সোশ্যালিস্ট পার্টি অভিবাসননীতি নমনীয় করবে, এমনটি প্রত্যাশা করছেন স্পেনের অভিবাসীরা।

 

অতীতে দেখা গেছে, সোশ্যালিস্ট পার্টি যখন স্পেনের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে, তখন অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ে। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রধান খসে লুইস রদ্রিগেজ জাপাতেরো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অবৈধ অভিবাসীরা সহজ শর্তে স্পেনে বসবাসের বৈধতা পেয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৫ সালে সাধারণ ক্ষমা ও সহজ শর্তে বৈধতা পেয়েছেন কয়েক হাজার অনিয়মিত অভিবাসী।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন