­
­
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে চমক: চীনের ঘাটতি পূরণ করছে বাংলাদেশ  » «   কানাডায় লিবারেলদের জয়, কী কারণ  » «   রাখাইনের জন্য করিডর বাংলাদেশের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?  » «   ইউরোপ ৪ দেশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!  » «   ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি  » «   বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার  » «   নতুন এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ  » «   ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে উড়ল প্রথম কার্গো ফ্লাইট  » «   রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার  » «   শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি  » «   ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার কবি দাউদ হায়দার আর নেই  » «   গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আটক  » «   ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নিতে পারে?  » «   পাকিস্তানের আছে ১৫০টি পরমাণু বোমা, ভারতের কত?  » «   কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের লড়াইয়ের কারণ কী?  » «  

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশে বামজোটের হরতাল পালিত



গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতাল পালন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। রোববার সকাল ৬টা থেকে এই হরতাল শুরু হয়েছে। চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

সকালে সরেজমিনে রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন, প্রেসক্লাব, মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হরতাল চলছে ঢিলেঢালাভাবে। শাহবাগ এলাকায় বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা চার রাস্তার মোড় আটকে পথসভা করছেন। এর ফলে এই এলাকায় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

শাহবাগ এলাকায় অনেককে হেঁটেই কর্মস্থলে রওনা হতে দেখা গেছে। বৃষ্টির মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সকালে পুরানা পল্টন, তোপখানা রোড, বিজয়নগর, মুক্তাঙ্গন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে। সিপিবির নেতাকর্মীরা ভোরে মিছিল করেছেন শান্তিনগর এলাকায়ও।

সকালের দিকে পল্টন এলাকায় বামজোটের বিক্ষোভের ফলে বেশ কিছু সময় যানজট তৈরি হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কেটে যায়। এ সময় সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া বামজোটের শরিক দল বাসদের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায়। এ সময় তারা বেশ কিছু সময় রাস্তা অবরোধ করে রাখে।

পল্টনের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে হরতাল ঠেকানো যাবে না।

পল্টন এলাকায় মিছিলে অংশ নেন বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা, এনডিপির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অসংখ্য নেতাকর্মী।

এ সময় পুলিশকে জলকামান, প্রিজনভ্যান নিয়ে পল্টন মোড়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের এসব সাঁজোয়া যান দেখা যায়নি।

রাজধানীর বাইরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা মিছিল করেছেন। সেখানে প্রচুর পুলিশ ছিল। শহরে যানবাহন চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। গাবতলী এলাকায়ও গাড়ির স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় আজ গাড়ি ছিল একটু কম।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় মিছিল করেছেন বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকালে পল্টন এলাকায় মিছিল করেছেন হরতালের সমর্থনকারীরা। বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় ব্যানার নিয়ে পিকেটিং করতে দেখা গেছে বাম নেতাকর্মীদের। তবে কোথাও থেকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। রাজধানীর অন্যান্য স্থানে হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বামদের ডাকা এই হরতালে ‘নৈতিক সমর্থন’ জানিয়েছে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডিসহ বিভিন্ন দল। অন্যদিকে সরকারি দল দাবি করেছে, যৌক্তিক কারণেই গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। জনগণকে এই মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

হরতাল চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পথসভায় বাম নেতারা বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম যেখানে কমছে, সেখানে বাংলাদেশে দফায় দফায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে লুটেরাদের স্বার্থে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে, সরকারের দুর্নীতি ও ভুল নীতির দায় জনগণ নেবে না।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং বর্ধিত মূল্য কমানোর দাবিতে হরতালের সমর্থনে নারায়ণগঞ্জে ভোর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল হয়েছে। সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল এই মিছিলে অংশ নেয়।

পুলিশি পাহারায় ভোর ৬টায় নগরীর ২ নম্বর গেট সিপিবি ও বাসদ কার্যালয় থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু রোড, চাষাঢ়া, কালীর বাজার ও ডিআইটি এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

এ সময় অল্পসংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হরতালের প্রভাব না থাকায় দূরপাল্লার যানবাহন স্বাভাবিক অবস্থায় চলাচল করছে।

নির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া খুলনা মহানগরীতে হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। শহরে প্রধান প্রধান সড়কে কোনো পিকেটিং চোখে পড়েনি। তবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ প্রহরা ও টহল জোরদার করা হয়েছে।

রোববার সকালে সিপিবির খুলনা মহানগর সভাপতি শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। হাদিস পার্ক মোড় থেকে পিকচার প্যালেস হয়ে ডাকবাংলো মোড় ছাড়া অন্য কোথাও হরতালের প্রভাব পড়েনি। নগরীতে দূরপাল্লার বাসসহ সব ধরনের ধরনের যানবাহন চলাচল করছে।

এদিকে বামজোটের নেতা শাহাদাৎ হোসেন দাবি করেছেন, গতকাল রাতে হরতালের সমর্থনে মিছিল করার সময় সোনাডাঙ্গা পুলিশ তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁদের দলের কার্যালয় থেকে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে যায় পুলিশ।

আজ সকালে বিভিন্ন বাম দলের নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে স্থানীয় পৌর আধুনিক সুপারমার্কেট প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

এতে বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান, জেলা নেতা অ্যাডভোকেট জামাল প্রমুখ। বক্তারা দ্রুত গ্যাসের দাম কমানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

সকালে জয়পুরহাট শহরের পৌর মার্কেটের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ চলাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় হরতালের ব্যানার ও দলীয় পতাকা কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন হারতাল সমর্থনকারীরা। সমাবেশস্থল থেকে জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা ও আক্কেলপুর উপজেলা সিপিবির সভাপতি হাসান সর্দারকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হরতালের সমর্থনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ওই সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।

জয়পুরহাট জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এম এ রশিদ জানান, এখন পর্যন্ত আটক আক্কেলপুর উপজেলা সিপিবির সভাপতি হাসানকে ছেড়ে দেয়নি পুলিশ।

এদিকে সকাল থেকে জয়পুরহাটে ট্রেন, আন্তঃজেলা রুটের বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন যথারীতি চলছে। তবে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

সকালে ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তা সিপিবি জেলা শাখা ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল চৌরাস্তা হয়ে আর্ট গ্যালারি মোড়, আমতলী ও নর্থ সাকুলার রোড প্রদক্ষিণ করে। সকালে শহরের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

হরতালে পরিবহন ভোগান্তিতে মিরপুরবাসী

হরতালের কারণে রাজধানীর মিরপুরবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় অনেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন, অনেকে আবার বিকল্প পথে বা পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ (রোববার) রাজধানীতে ৭০ শতাংশ পরিবহন চালাচল বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবহন মালিকরা।

মিরপুরের বাসিন্দা মানিক মিয়া পাঁচ বছরের শিশুকে নিয়ে যাবেন ফার্মগেট। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তিনি বাস পাননি। এ কারণে একটু পরপর মাথা ঘুরিয়ে বাস আসছে কিনা তা দেখে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, গ্যাসের দাম কমানোর দাবিতে হরতাল ডাকাকে আমি সমর্থন করলেও সব ভোগান্তি আমাদের ওপর চলে আসে। ছোট বাচ্চাকে নিয়ে এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও এখনও বাস পাইনি। অনেকক্ষণ পরে বাস এলেও ভিড়ের কারণে তাতে ওঠার সুযোগ পাওয়া যায় না। কখন বাস পাব তাও জানি না।

বাস না পেয়ে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরে এসেছেন জোনায়েত হাবিব। মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিদিনের মতো সকাল ১০টায় অফিস যেতে বাসা থেকে নির্ধারিত সময়ে বের হলেও প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস পাননি, বিকল্প হিসেবে সিএনজি নিয়ে অফিসের উদ্দেশে রওনা করেন তিনি।হাবিব বলেন, রাজধানীতে হরতাল পালিত হওয়ায় আমি নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারিনি। সকালে আমার জরুরি মিটিং থাকলেও তা বাতিল হয়ে গেছে। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে সিএনজি নিয়ে অফিস যাচ্ছি।

তার মতো এমন অনেক মানুষ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে দীর্ঘ সময় মিরপুরের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে অপেক্ষা করে যাচ্ছেন। অনেকে রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, উবার, পাঠাওসহ বিকল্প পন্থায় অফিস যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে আবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন। অনেকে ভিড়ের কারণে বাসে উেতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

মিরপুরে চলাচল করা বিভিন্ন পরিবহনের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতালের কারণে মিরপুরে যাত্রী চলাচলকারী ৭০ শতাংশ পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। ভোর থেকে ৩০ শতাংশ পরিবহন রাস্তায় নামানো হয়েছে। হরতাল পালনকারীদের ভয়ে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুপুরের পর থেকে সকল পরিবহন রাস্তায় নামানো হবে বলে জানান তারা।

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন