যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর অভিবাসন নীতি কার্যকর করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অভিবাসীদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এই নিয়মের আওতায় এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সব অভিবাসীকে সবসময় তাদের বৈধ অবস্থানের প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ‘আমেরিকান জনগণকে আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষার’ অংশ হিসেবে এই নতুন নিয়ম গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল ২০২৫) থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হয়েছে।
অবৈধ অভিবাসন কঠোরভাবে দমন এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত লাখ লাখ মানুষকে সেখান থেকে বিতাড়িত করাই এই নিয়মের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের জন্য একটি আবশ্যকীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নাম এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন রিকোয়ারমেন্ট (এআরআর)।
১৯৪০ সালে এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে এটি তৈরি করা হয়েছিল।
বিশেষ এই আইন সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছিল। তবে এর প্রয়োগ কখনোই সেভাবে কার্যকর করা হয়নি। তবে ঘোষিত নতুন নিয়মের মাধ্যমে আইনটির কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
নতুন নিয়মের আওতায় বৈধ নথি না থাকা অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে।
নিয়মের প্রধান শর্তাবলী
বাধ্যতামূলক নিবন্ধন : যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিন বা তার বেশি সময় ধরে অবস্থানকারী ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী সব অনাগরিককে ‘ফর্ম জি-৩২৫আর’ এর মাধ্যমে সরকারের কাছে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
নথিপত্রের আবশ্যকতা : যারা এপ্রিলের ১১ তারিখ বা তারপরে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, তাদের আগমনের ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এই বিধিমালা অমান্য করলে জরিমানা, কারাবাস অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
ঠিকানা পরিবর্তন : কোনও ব্যক্তি ঠিকানা পরিবর্তন করলে তা অবশ্যই ১০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে। অন্যথায় এই নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
পুনরায় নিবন্ধন : যেসব শিশু ১৪ বছর বয়সে পদার্পণ করেছে, তাদের অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে পুনরায় নিবন্ধন করতে হবে এবং আঙুলের ছাপ দিতে হবে।
বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর নতুন নিয়মের প্রভাব
অবৈধ অভিবাসী : এই নতুন নিয়ম প্রাথমিকভাবে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের প্রভাবিত করবে, যাদের অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে এবং তাদের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
বৈধ অভিবাসী : যারা বৈধ ভিসা (কর্ম বা শিক্ষা) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বা যাদের গ্রিন কার্ড রয়েছে, তাদের আগে থেকেই নিবন্ধিত বলে বিবেচিত হবে এবং নতুন করে ফর্ম পূরণের আবশ্যকতা থাকবে না। তবে তাদেরকে সবসময় বৈধ অবস্থানের প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
ভারতীয় নাগরিক : যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫৪ লাখ ভারতীয় বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার অবৈধ অভিবাসী (মোট অবৈধ অভিবাসীর ২ শতাংশ)। এইচ-১বি ভিসা বা আন্তর্জাতিক ছাত্র ভিসাধারী ভারতীয় নাগরিকদের নিবন্ধন করার প্রয়োজন না থাকলেও তাদের অবশ্যই পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
নিয়ম না মানলে কী হবে
জরিমানা ও কারাবাস : নিবন্ধন না করলে জরিমানা বা সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ হতে পারে।
বহিষ্কার : নিবন্ধন করালেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায় না। যথাযথ বৈধ নথি নেই, এমন ব্যক্তিদের দেশটি থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে।
নিয়ম অমান্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটিমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, “১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব সব অনাগরিককে সবসময় নিবন্ধনের প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। আইন অমান্যকারীদের জন্য কোনও নিরাপদ আশ্রয় এদেশে থাকবে না।”
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি