­
­
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বিনিয়োগ সম্মেলনে কেমন সাড়া পেলো বাংলাদেশ?  » «   আরবদের হটিয়ে যেভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল  » «   ২০২৪ সালে লন্ডন ছেড়েছেন ১১ হাজার ধনী, কোথায় যাচ্ছেন তাঁরা  » «   জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে: গভর্নর  » «   মডেল মেঘনা বিশেষ ক্ষমতা আইনে জেলে, অভিযোগ ছাড়াই আটকের যৌক্তিকতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন  » «   ‘আলোয় আলোয় মুক্তির’ সন্ধানে বর্ষবরণ করবে ছায়ানট  » «   মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে গেল  » «   যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ: বিপজ্জনক খেলা, পথ নেই পিছু হটার  » «   বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ  » «   প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি  » «   নাসার সাথে চুক্তি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা জোটে যুক্ত হলো বাংলাদেশ  » «   সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালু করছে সরকার  » «   ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে বাটা-কেএফসি ভাংচুর : ৪ মামলা, গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান  » «   গাজায় গণহত্যা: ছয় জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ  » «   গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, সংকুচিত হয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা  » «  

গাজায় গণহত্যা: ছয় জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের সময়ে এমন আচরণ দুর্ভাগ্যজনক



গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল থেকে দেশের ছয় জেলায় ইসরায়েলি পণ্য রাখা ও বিক্রি করায় অন্তত ১৬টি রেস্তোরাঁ ও শো-রুমে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (৭ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরের দিকে কক্সবাজারে পাঁচটি, চট্টগ্রামে তিনটি, সিলেট পাঁচটি, গাজীপুরে চারটি, কুমিল্লায় একটি এবং বগুড়ায় একটি প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বিক্ষুব্ধ মানুষেরা ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটার মত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের শো-রুমে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি কোমল পানীয় কোকাকোলা, সেভেন আপ রাখায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানও হামলার শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল, স্লোগান-সমাবেশ ও ধর্মঘট পালন করেন। সকাল থেকে সারাদেশের জেলা-উপজেলা শহর ছিল প্রতিবাদমুখর। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যার যার অবস্থান থেকে পথে নেমে এসে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন, মিছিলে স্লোগান তুলেছেন।

এ বিষয়ে বিবৃতিতে বাটা বলেছে, “আমরা আমাদের দোকানে আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের অনেকগুলো দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে ও মালামাল চুরি করা হয়েছে। একটি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে এই ধরনের আচরণ নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমানে আমরা এসব ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছি।”

সিলেট: বিক্ষোভ মিছিল থেকে কোমল পানীয় কোকাকোলা বিক্রির কারণে সিলেট নগরীতে ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পাশাপাশি থাকা আন্তর্জাতিক জুতার ব্র্যান্ড বাটাতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।

সোমবার বিকাল ৩টার দিকে নগরীর মিরবক্সটুলার কেএফসি এবং দরগা গেইট এলাকার বাটার শো-রুমে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হক জানান। তিনি বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।”

প্রত্যক্ষর্শীরা জানান, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিল কেএফসির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু লোক সেখানে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। তারা কেএফসির ভেতরে থাকা বিভিন্ন কোমল পানীয় রাস্তায় ফেলে নষ্ট করে। তারা লাঠি দিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলে। ভাঙচুরের পর কেএফসি বন্ধ রয়েছে। একই মিছিলের একটি অংশের লোকজন পাশের সড়কের বাটার শো-রুমে গিয়ে হামলা চালায় এবং সেখানকার গ্লাস ভাঙচুর করে। এ সময় দোকানের কর্মচারীরা ভয়ে বের হয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ভাঙচুরের সময় বিক্ষুদ্ধরা অভিযোগ করেন, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারী ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের ঠাঁই হবে না এই দেশে। এই কেএফসিতে ইসরায়েলি বিভিন্ন কোমল পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া হবে না।

তারা বলেন, চলমান হামলা শুধু একটি অঞ্চলের নয়; সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রতি আঘাত। এই অমানবিকতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে সিলেট নগরীতে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টার দিকে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা স্লোগানে স্লোগানে মিছিল নিয়ে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগদান করেন।

সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মুখরিত হয়ে উঠে। বিশ্বব্যাপী ডাকা এ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় চলছে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি।

বিক্ষোভকারীরা ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিনি ফিলিস্তিনি’; ‘ইসরায়েলের বন্ধুরা, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘বয়কট বয়কট, ইসরায়েল বয়কট’; ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’- স্লোগান দেন।

বেলা ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিক্ষোভ চলাকালে নগরীর পাক ভিউ মেডিকেল কলেজের নার্সিং শিক্ষার্থী ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেন, “মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানানো উচিত। ইসরায়েল একটি অভিশপ্ত দেশ; যারা নিরীহ মুসলিমদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে।”

বাদ জোহর নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ আঞ্জুমানে তালামীযে ইসলামীয়া সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা। এ ছাড়া ছাত্র-জনতা ও তৌহিদী জনতা, বিভিন্ন ইসলামিক দল, সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ করে।

বিকালে মিরবক্সটুলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে মানুষের ভিড়। সবাই দাঁড়িয়ে ভাঙচুর হওয়া কেএফসি দেখছেন। কেউ কেউ নিজের মোবাইলে ছবি-ভিডিও ধারণ করছেন। রাস্তার দুইপাশে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট লেগেই আছে।

পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন নিরাপত্তার কাজে। কেএফসি রেস্টুরেন্টের চেয়ার-টেবিলসহ যাবতীয় মালামাল পড়ে আছে রাস্তায়। ভাঙচুর করা কাচের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মেঝেতে। মিরবক্সটুলা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কেএফসি রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন করেন সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “একদল বিশৃঙ্খল লোক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করেছে।”

নগরীর দরগাহ গেইটে বাটা জুতার শো-রুমের সামনে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। উৎসুক জনতাও সেখানে ছিলেন।

এদিকে পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকায় বাটার শো-রুম ভাঙচুর করে মালামাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্দরবাজার এলাকায় শো-রুম ভাঙচুর করা হয়।
এ ছাড়া নগরীর আম্বারখানা পয়েন্টে ইউনিমার্ট শপিং সেন্টারে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।

কক্সবাজার: বিক্ষোভ মিছিল থেকে কক্সবাজার পর্যটন জোনের অন্তত পাঁচটি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে হলিডে মোড় হয়ে ঘুরে লাবণী হয়ে কলাতলী যায়। এ সময় ভাঙচুর চালানো হয়।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান বলেন, “পুলিশ মিছিলের আগেপিছে ছিল। মিছিলের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় মাঝখান থেকে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে কয়েকটি রেস্টুরেন্টে পেপসির সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছে। কিছু ঢিল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে মিছিলে উপস্থিত মুরুব্বিরা তাদেরকে তৎক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রণ করেন।”

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, “ইসরায়েলি পণ্য রাখার অজুহাতে কেএফসি, পিৎজা হাটের পাশাপাশি কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় কাঁচ লেগে কয়েকজন পর্যটক আহত হয়েছেন।”

তিনি বলেন, “আমাদের ফিলিস্তিনের প্রতি সবসময় সংহতি রয়েছে। আজকের বিক্ষোভ মিছিলেও আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজনের এমন ঘটনা কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য অশনি সংকেত।

“আমরা ইসরায়েলের পণ্য যত সম্ভব বর্জন করছি। তারা যদি সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলতে বলত তাহলে সুন্দর একটা সমাধান হত। ভাঙচুর করে পর্যটকদের কেন আহত করা হল? আমরা প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।”

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের সুগন্ধা এলাকায় টপ ফ্লোরে কেএফসি এবং এর নিচে পিৎজা হাটের অবস্থান। সেখানে বেশকিছু কাঁচ ভেঙে পড়ে আছে। ভাঙচুরের পর বন্ধ করা হয়েছে পিৎজা হাট। তবে খোলা রয়েছে কেএফসি।

কক্সবাজার পিৎজা হাটের ইনচার্জ পারভেজ মিয়া বলেন, “মূলত কেএফসির ওপর মানুষের ক্ষোভ বেশি। তারা হঠাৎ মিছিল থেকে ইট-পাটকেল মারা শুরু করে কেএফসি লক্ষ্য করে। তবে কেএফসি ওপরের ফ্লোরে হওয়ার এগুলো এসে পড়ে পিৎজা হাটে। আমাদের বেশকিছু কাঁচ এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আপাতত রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছি।”

কাঁচা লংকা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, “রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডে সেভেন আপের বিজ্ঞাপন ছিল। এই অজুহাতে আমাদের রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হয়। আমরাও তো ফিলিস্তিনকে সাপোর্ট করি। আমাদের বললে, আমরা সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতাম। কেন রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালানো হল?”

বগুড়া: ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বের হওয়া মিছিল থেকে বগুড়ার বাটার শো-রুমে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীরা শহরের সাতমাথায় এসে বাটার শো-রুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গ্লাস ভাঙচুর করে।

প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তারা সেখানে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের দাবিতে স্লোগান দেয় এবং ভাঙচুর চালায়। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন। কিছুটা দূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও বিপুল সংখ্যক মানুষের সামনে তাদের কিছুই করার ছিল না।

বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, “মিছিলের সামনে ও পিছনে পুলিশ ছিল। মিছিল থেকে কে বা কারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে তা বোঝা যায়নি। তাতে বাটার দোকানের অল্প কিছু ক্ষতি হয়েছে।”

সকাল থেকেই বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় জড়ো হন। প্রতিবাদকারীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ব্যানারে সেখানে জমায়েত হন। এ সময় তারা ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা জানান।

মিছিল ও প্রতিবাদ-সমাবেশের কারণে শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

হামলা ও ভাঙচুরের পর দোকান বন্ধ থাকায় বাটার শো-রুমের কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম: বিক্ষোভ মিছিল থেকে চট্টগ্রামে কেএফসির দুটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে।

সোমবার বিকালে ‘মার্চ ফর গাজা’ মিছিল থেকে নগরীর নাসিরাবাদ ও চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এছাড়া জিইসি মোড়ে আন্তর্জাতিক কোমল পানীয় কোকাকোলার সাইনবোর্ডও ভাঙচুর করা হয়।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিকালে নগরীর ষোলশহর থেকে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে মিছিল বের করা হয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন বয়েসী লোকজন অংশ নেন।

মিছিলে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে ইসরাইলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

মিছিলটি জিইসি মোড়ের দিকে আসার সময় ভেতর থেকে কিছু লোক নাসিরাবাদ সানমার ওশান সিটির পাশের ভবনে কেএফসি রেস্তোরাঁয় ঢিল ছুড়লে সামনের কাচ ভেঙ্গে যায়।

সেখান থেকে কিছু লোক জিইসি মোড়ে জামান হোটেলের কোকোকোলার সাইনবোর্ড ও ভাঙচুর করে। এসময় রেস্তোরাঁটিরও সামনের অংশের কাচ ভেঙ্গে যায়।

পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে করা মিছিল থেকে কেএফসি রেস্টুরেন্টে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে রেস্টুরেন্টটি বন্ধ ছিল।”

চেরাগী পাহাড় মোড়েও কেএফসির একটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ড ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন, মিছিল থেকে সাইনবোর্ডে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি।

গাজীপুর: গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় বাটা শো-রুমসহ কয়েকটি দোকানের সামনে বিলবোর্ড, ব্যানার, ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নূর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন বলেন, বিক্ষোভকারীরা বিকালে বাটা শো-রুমের বাইরের ব্যানার ভাঙচুর করেছে। তবে শো-রুমের ভেতরে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ৩টার দিকে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকা থেকে সর্বস্তরের ‘মুসলিম তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

এ সময় সেখানে বাটা শো-রুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, উত্তেজিত জনতা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বোর্ড বাজার এলাকায় সেভেন আপ সম্বলিত ব্যানার বিলবোর্ড ভাঙচুর করেছে। “ইসরায়েলের পণ্য যেসব দোকানে রয়েছে সেসব তারা রাখবে না বলেছে। এসব পণ্য বর্জন করতে সড়কের পাশে ৩-৪টি দোকানের সামনে বিলবোর্ড, ব্যানার ভাঙচুর করে ছিড়ে ফেলেছে। তবে কোনো দোকান ভাঙচুর করা হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।”

অপরদিকে বিক্ষোভকারীরা গাজীপুর শহরের শিববাড়ির আশপাশে থাকা বাটা দোকানের সামনে অবস্থান নিতে গেলে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় বলে জানান সদর থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজবাড়ী মাঠ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

এ ছাড়া বাদ আসর গাজীপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর জামায়াতে ইসলামী।

কুমিল্লা: কুমিল্লার রাণীর বাজারে কেএফসি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর করেছে উত্তেজিত জনতা। সোমবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ চলাকালে কেএফসির সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এ ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে কুমিল্লায় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক ওঠে। এরই জের ধরে রাণীর বাজার এলাকায় কেএফসি রেস্টুরেন্টে বাইরে থেকে অতর্কিত ইট- পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পরে অন্তত ১০ জন উত্তেজিত যুবক রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ উপস্থিত হলে তারা পালিয়ে যায়।

কেএফসি রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী জানান, সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টায় বাইরে থেকে রেস্টুরেন্টের কাচের দেয়ালে ইট নিক্ষেপ করে ভাঙচুর শুরু হয়। এসময় রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েকজন খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। তারা ভয়ে দৌড়ে নেমে যান। পরে কয়েকজন যুবক ভেতরে ঢুকে চেয়ার ছুড়ে ভাঙচুর চালায়।

কুমিল্লায় কেএফসি রেস্টুরেন্ট ভাঙচুরের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন যুবক ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাকের স্লোগান দিয়ে ভাঙচুর করছে। ঘটনার পর কেএফসি রেস্টুরেন্ট পরিদর্শনে যান পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।

বাটা-কেএফসিতে ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযানে পুলিশ: আইজিপি
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমে সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে কেএফসি ও বাটাসহ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে নেমেছে পুলিশ। সোমবার দিনভর বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে এসব ঘটনার পর রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এরইমধ্যে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।” প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আইজিপির এই নির্দেশনার কথা জানানো হয়।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলার মধ্যে এমন ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল থেকে এদিন দেশের অন্তত ছয় জেলায় ‘ইসরায়েলি পণ্য রাখা ও বিক্রি’ করার অভিযোগ তুলে ধরে ১৬টি রেস্তোরাঁ ও বিক্রয় কেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুরের খবর এসেছে।

কক্সবাজারে পাঁচটি, চট্টগ্রামে তিনটি, সিলেট পাঁচটি, গাজীপুরে চারটি, কুমিল্লায় একটি এবং বগুড়ায় একটি প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাতে আইজিপি বাহারুল আলম বিবৃতিতে বলেন, “আইনসম্মত প্রতিবাদে সরকার কখনোই বাধা দেয় না। তবে প্রতিবাদের নামে কেউ যদি অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়ায়, তা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।”

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পাঠানো একই বিবৃতিতে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে যখন আমরা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি, ঠিক তখনই দেশের কিছু মানুষের এমন নিন্দনীয় আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। “ভাঙচুরের শিকার অনেক প্রতিষ্ঠানই ছিল স্থানীয় উদ্যোক্তাদের। আবার কিছু ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের – যারা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছিল। যারা এ ধরনের সহিংসতা চালিয়েছে, তারা আসলে কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জাতীয় স্থিতিশীলতার শত্রু।”

গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল, স্লোগান-সমাবেশ ও ধর্মঘট পালন করেন।

সকাল থেকে সারাদেশের জেলা-উপজেলা শহর ছিল প্রতিবাদমুখর। এসব বিক্ষোভের মধেই বিক্ষুব্ধ কিছু মানুষ ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটার মত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিক্রয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি কোমল পানীয় কোকাকোলা, সেভেন আপ রাখায় দেশি প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন