নতুন রাজনৈতিক ‘বন্দোবস্তের’ আকাঙ্খা নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শীর্ষ নেতৃত্বের উত্তরাধিকার হিসেবে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি প্রথম মাসেই ভেতরে-বাইরে নানা প্রতিকূলতা পার করেছে। এখন সামনের দিনগুলোতে দল গুছিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন ও ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে এনসিপি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম– এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফয়সাল আতিক।
নতুন দলের অগ্রযাত্রার পথে আলোচনা সমালোচনার মধ্যে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “এক মাসে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন দলকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল। আমরা মোটামুটি সফল হতে পেরেছি বলে মনে করি।…আমাদের কাজ থেমে নেই। সাংগঠনিক বিস্তৃতি গোছানোর কাজ চলছে।”
ডিসেম্বরে ভোটকে সামনে রেখে যখন নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি শুরুর করার কথা বলছে, তখন রাজনৈতিক মহলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা নিয়েও বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্য নতুন দলের নিবন্ধন আহ্বান করেছেন নির্বাচন কমিশন-ইসি। দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। ঈদুল ফিতরের পর নতুন দলগুলোর নিবন্ধন পেতে তোড়জোড় শুরু হবে।
এনসিপিও ভোটের জন্য নিজেদের গোছাতে দল নিবন্ধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তুলে ধরে দলটির সদস্য সচিব বলেন, স্বল্প সময়ে সব কিছু গোছাতে না পারলে নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করার পরিকল্পনাও করছেন তারা।
রাজনীতির মাঠে এক মাস পার করে দেওয়া নতুন এ দলটির বিষয়ে রাজনীতি বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি দলকে মূল্যায়ন করার জন্য একমাস যথেষ্ট সময় নয়। জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটা আশা আকাঙ্খা তৈরি করতে পেরেছে কিনা সেই মূল্যায়নটা আসতে পারে।”
তিনি মনে করেন, “রাজনৈতিক দল হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে যথেষ্ট প্রচার পেয়েছে। যেহেতু তাদের অধিকাংশ নেতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিল সেটা একটা কারণ। পুরোনো দলগুলোর জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তারা বোঝাতে পেরেছে যে, তারা তরুণদের দল। তাদের চিন্তা চেতনার প্রভাব সমাজে পড়বে। এই বার্তাটা অন্যান্য দলগুলোর কাছেও যাচ্ছে, অন্য দলগুলোও তরুণদের আকৃষ্ট করার ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে।
“নতুন দলের মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয়ে নতুন বয়ান তৈরি হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন ছাড়া বোঝা যাবে না যে জনগণ এসব বয়ান কীভাবে নিচ্ছে। দলের নেতৃত্বের মধ্যে যদি ঐক্য থাকে, যদি দুর্নীতিমুক্ত হন, সেক্ষেত্রে হয়তো একটা প্রত্যাশা তৈরি হবে।”
এই রাজনীতি বিশ্লেষক বলছেন, “তাদের বিকল্প রাজনীতিটা কী? সেটা এনসিপিকে বোঝাতে হবে। তাদের কিছু কিছু নেতাদের নিয়ে বাজারে যেসব বক্তব্য আসছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এগুলো ওভারকাম করা তাদের জন্য ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।”
আত্মপ্রকাশের এক মাস
২৮ ফ্রেব্রুয়ারি ঢাকার মানিক মিয়া এভিনেউয়ে বড় সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
তথ্য উপদেষ্টার পদ ছেড়ে আসা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে ২১৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে দলটি।
বিদ্যমান সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন রাজনৈতিক ‘বন্দোবস্ত’ লক্ষ্য ধরে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা বা বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণের কর্মসূচি আত্মপ্রকাশ মঞ্চ থেকেই দিয়েছিল দলটি।
এনসিপির শীর্ষ পদের অধিকাংশই হচ্ছে এক বছর আগে আখতার হোসেনের হাতে গড়া ছাত্রশক্তির সাবেক নেতা-কর্মী। সমমনা গণঅধিকার পরিষদ, সাবেক ছাত্রশিবির, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার নির্দলীয় ব্যক্তিরা এই দলে যুক্ত হয়েছেন।
প্রথম একমাসে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে পড়ে এনসিপি। আবার এই সময়ের মধ্যে নতুন ধারার রাজনীতির সম্মুখ যাত্রায় অনেক নতুনেরও জন্ম দিয়েছে তারা।
ভুলকে অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান এনসিপির শীর্ষ নেতারা।
কিছু সমালোচনার পরও একমাসের মধ্যেই নতুন দলের আগোমনী বার্তা দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
কেমন গেল এক মাস
প্রতিষ্ঠার প্রথম মাসেই দলটির কয়েকজন শীর্ষনেতার জীবন যাপন তাদের জানা আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে সমালোচনা হয়েছে। শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে নিজ এলাকায় যাওয়া এবং তা নিয়ে দলের নেতার প্রশ্নে মুখে পড়া ও সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক, তৃণমূলে ছোট ছোট কোন্দল-হাতাহাতি, নেতারা অন্যের চাকরির জন্য অনৈতিক সুপারিশ করছেন বলে খবর প্রকাশ, বিএনপির সঙ্গে কিছু কিছু বিষয়ে মতোবিরোধের সূত্র ধরে নানামুখী নেতিবাচক প্রচারণায় মুখোমুখি হয়েছে এনসিপি।
নিজ এলাকা নোয়াখালীল হাতিয়ায় গিয়ে ‘হামলার’ শিকার হয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, ঘটনার জন্য তিনি দায়ী করেছেন স্থানীয় বিএনপিকে।
শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে নিজ এলাকা পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে গিয়ে দলের ভেতরেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠন (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। ব্যয়বহুল এসব ব্যক্তিগত কর্মসূচির অর্থের উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেই বিতর্ক এখনও চলছে। অবশ্য সমালোচনার জবাবে সারজিস সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, তার কিছু ‘ভক্ত ও শুভাকাঙ্খী নিজেদের আগ্রহ থেকে’ গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছেন। কিছু গাড়ি তিনি নিজে ভাড়া করেছেন।
এনসিপির আত্মপ্রকাশের একদিন পরই দলটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিন নেতা। তারা হলেন মুখ্য সমন্বয়ক আবু হানিফ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হানিফ খান সজিব ও যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুজ জাহের। নতুন দলে ভালো অবস্থান না পেয়ে তারা নিজ দলে ফিরে গেছেন বলে তারা দাবি করেছেন। বনিবনা না হওয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রভাবশালী দুই নেতা আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত এনসিপিতে না এসে আরেকটি সংগঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই দুটি ঘটনা শুরুতেই নতুন দলের জন্য অস্বস্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠার পর পরই রোজার মাস শুরু হওয়ায় ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে দলীয় কাজ অনেকটা এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে এনসিপি।
কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার
রোজার মাস জুড়ে ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন রোডে গণইফতারের আয়োজন চালিয়ে গেছে এনসিপি। এছাড়া জুলাই আন্দেলনে আহত ও ‘শহীদ’ পরিবার, রাজনৈতিক দল, কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের বড় আয়োজন করেছে দলটি।
এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় শহর ও অন্যান্য সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতেও ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখিয়েছে দলটি।
যদিও এরমধ্যে বরিশাল শহরে আয়োজিত এক ইফতারে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সামনেই হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন। একই ঘটনা ঘটেছে সিলেটে, সেখানে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হক, অনিক রায় ও অর্পিতা দেব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসমিন জারার উপস্থিতিতে একপক্ষের ওপর হামলা করে আরেকপক্ষ।
একমাসে কর্মসূচি করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও কিছু বিছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট, রাজনীতিতে উত্তাপ
সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের সাক্ষাতের পর নিজের ফেইসবুকে হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্ট দেওয়ার ঘটনা।
১১ মার্চ ওই বৈঠকের কথা ২১ মার্চ ফেইসবুকে প্রকাশ করেন দাবি করা হয়, সেনা প্রশাসন নতুন নেতৃত্বে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের জন্য ‘চাপ দিচ্ছে’।
এতে রাজনীতিতে বেশ শোরগোলের সৃষ্টি হয়। ফেইসবুকে এ বিষয়ে আলোচনা নিয়ে এনসিপির শীর্ষনেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।
দলীয় সিদ্ধান্তে এনসিপি আওয়ামী লীগের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার আগে রাজনীতিতে ফেরত আনার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন নিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে এনসিপি নেতা হাসনাত-সারজিসের বৈঠক এবং সেই বৈঠকের সূত্র ধরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির বিষয়ে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “২৪ এর আন্দোলনে যারা সরাসরি গণহত্যায় জড়িত ছিল আমরা বার বার তাদের বিচার চেয়েছি। গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের আর বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই।
“আওয়ামী লীগের বিচার এবং বিচার চলাকালে নিবন্ধন স্থগিত রাখার বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট দাবি সময়ে সময়ে জানাচ্ছি।”
তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন বিদেশি শক্তি এবং অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলো আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে বলে আমাদের কাছে আভাস রয়েছে। কিন্তু যেকোনো তত্ত্বের ভিতর দিয়েই হোক না কেন, আওয়ামী লীগের আর বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। সেই চেষ্টা প্রশাসন, সেনাবাহিনী বা যেকোনো পক্ষের কাছ থেকেই আসুক না কেন, আমরা আমাদের অবস্থান জানাবো।”
রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে পাঁচটা সংস্কার কমিশনের ১৬৬টা সুপারিশের ওপর মতামত জমা দিয়েছে এনসিপি। দলটি বলেছেন, সংস্কার কমিশনের অন্তত ১১৩টি প্রস্তাবের সঙ্গে তারা পুরোপুরি একমত এবং কিছু প্রস্তাবে আংশিক একমত।
আহ্বায়ক কমিটিতেই আপাতত কাজ চালাচ্ছে এনসিপি। একটি গঠনতন্ত্র ইতোমধ্যেই প্রণয়ন করা হয়েছে বলে দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। এছাড়া স্থায়ী কার্যালয় বেছে নেওয়া, নতুন কয়েকটি দপ্তর ও সেল গঠন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়নসহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে দলটির নেতারা দাবি করছেন।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ এনসিপির বিষয়ে জেনেছে। মানুষ এই দলের ভালোমন্দ নিয়ে কথা বলছেন। সারাদেশের জেলা শহরগুলোতে মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ইফতার, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করেছেন।”
রাজনৈতিক দল গঠনের পর অভ্যুত্থানের শীর্ষ নেতারা কেন নানান সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, “৫ অগাস্ট পূর্ববর্তী আন্দোলনে যারা নেতৃত্বে দিয়েছেন তাদের নেতৃত্ব সব রাজনৈতিক দল মেনে নিয়েছে। পরবর্তীতে উদার গণতান্ত্রিক সময়ে আন্দোলনকারীরা নিজ নিজ শিবিরে, রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে ফিরে গেছেন। সবাই নিজ নিজ দলের কর্মসূচি পালন করছে।”
নেতাদের সম্পর্কে অভিযোগ আসছে, এসব অভিযোগের বিষয়ে দলের অবস্থান কী, জানতে চাইলে এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, “আহ্বায়ক কমিটিতে যারা আছেন তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসেনি। অনেকের মন্তব্য ও বক্তব্যকে ঘিরে জনপরিসরে নানা ধরনের বক্তব্য দেখেছি। কিন্তু তারা দলের নীতি, শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেছেন সে রকম কিছু আসেনি। জোরালো কোনো অভিযোগ আসলে আমরা সেটা দেখবো।”
নিবন্ধনের প্রস্তুতিও চলছে, সময় চাইবে এনসিপি
এনসিপি সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন আবেদনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
কমিশন ১০ মার্চ যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সে অনুযায়ী, বিদ্যমান আইন-বিধি মেনে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর।
নির্বাচন কমিশনের সেই শর্তে বলা হয়েছে, আবেদনকারী দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকলে নিবন্ধন পাবে সেই দল।
দল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে এনসিপি নেতা আখতার বলেন, “এনসিপি খুব অল্প সময়ের মধ্যে শর্তগুলো পূরণ করার সামর্থ রাখে। তারপরও নির্বাচন কমিশন ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন যেটা আছে সেটা গণমুখী করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব দেব।
“২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদনের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে সে ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের আদেশকে মাথায় রেখে হয়তো সময় আরেকটু বাড়াবে। আমরা এ বিষয়ে কমিশনে আবেদন করবো।”
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন স্থগিত ও এ বিষয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা আদালতের রুল হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে রুলের জবাবও দেওয়া হবে। আদালতের রুল নিয়ে অন্যদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়া অন্য দলের নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধন আবেদনে কোনো বাধা নেই।”
২০ এপ্রিলের নির্ধারিত সময় পার না হওয়ার আগে সময় বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য নেই নির্বাচন কমিশনের।
সাংগঠনিক বিস্তৃতির লক্ষ্যে দলীয় তৎপরতা
সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটানোর লক্ষ্যের কথা বলছেন এনসিপি নেতারা। সে লক্ষ্যে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, আত্মাপ্রকাশের পর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির জেনারেল বডির মিটিং, সেলগুলোর মিটিং, আহ্বায়ক প্যানেল, সদস্য সচিব প্যানেল এবং মুখ্য সংগঠন প্যানেলের পৃথক মিটিং হয়েছে। আমরা কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করেছি। কয়েকটি সেলের কর্মবন্টন হয়েছে। রোজার মাসজুড়ে সিভিল সোসাইটি, কূটনীতিক, পেশাজীবী, রাজনৈতিক দল ও অনান্য নাগরিক সমাজের সম্মানে ইফতার আয়োজন করেছি।”
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রোজার শেষ দুই সপ্তাহে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করে মানুষের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করছেন। তাদের বক্তব্য শোনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল, গণহত্যার বিচার দাবিসহ আরও কিছু ইস্যুতে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা করেছি।
“আমাদের কাজ থেমে নেই। সাংগঠনিক বিস্তৃতির কাজ চলছে। ঈদের পরই কমিটি দেওয়ার কাজ শুরু হবে। মহানগর, জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি বিস্তৃত করা হবে। পরবর্তীতে ওয়ার্ড পর্যায়েও আমরা কমিটি দেব।”
সাংগঠনিক কাজের ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় তুলে ধরে নিজাম উদ্দিন বলেন, “সেক্রেটারিয়েট প্যানেলের ২০ থেকে ২২টি সেলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সালেহ উদ্দিন সিফাতকে, অর্থ সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফ মোস্তাফিজকে। ১৬৩ সদস্য নিয়ে শ্রমিক উইং চালু করা হয়েছে।”