­
­
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
এশিয়ার দেশগুলোর ‘যৌথ সমৃদ্ধির পথরেখা’ চাইলেন ইউনূস  » «   বাংলাদেশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র  » «   চীনের আগে ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস  » «   সনজীদা খাতুনের প্রয়াণে লিখেছেন মৌসুমী ভৌমিক  » «   যারা বলে একাত্তর ও চব্বিশ সমান, তারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি  » «   বিদায় সন্‌জীদা খাতুন, প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন  » «   ব্যাংককে ইউনূস-মোদির বৈঠকে প্রস্তুত ঢাকা, অপেক্ষা দিল্লির জবাবের  » «   তামিমের কামব্যাক ও একটি ‘যেন-তেন’ হাসপাতাল  » «   কী হচ্ছে তুরস্কে, একনায়কতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছেন এরদোয়ান?  » «   যুক্তরাষ্ট্রফেরত জাহিদুল এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা  » «   জীবনের ইনিংসে কঠিন লড়াইয়ে তামিম  » «   শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের ভিসা ফি বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য  » «   জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সম্মানে সেনাবাহিনীর ইফতার  » «   গাজায় নিহত ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে  » «   সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাতের বক্তব্যে কী চাপে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি?  » «  

যুক্তরাষ্ট্রফেরত জাহিদুল এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা



প্রায় দেড় যুগ বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মো. জাহিদুল ইসলাম। মূলত ভেজালমুক্ত ফসলের চিন্তা থেকেই তাঁর উদ্যোগের শুরু, পরে সেটি বাণিজ্যিক রূপ পায়। পদ্মার চরে প্রায় ১০০ বিঘা জমি কিনে চাষাবাদ শুরু করেন জাহিদুল ইসলাম। বর্তমানে এই উদ্যোক্তার কৃষি খামারে ২০ ধরনের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শতাধিক পণ্য। প্রতিবেদনটি করেছেন প্রথম আলোশফিকুল ইসলাম

জাহিদুল ইসলামের জন্ম রাজবাড়ীর পাংশায়। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে। স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষে সেই সুযোগও পান। সেটি ১৯৮২ সালে। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না, প্রশিক্ষণরত অবস্থায় পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। বাদ পড়েন চাকরি থেকে। পরিবারের ইচ্ছায় পরের বছর ভর্তি হন মেডিকেলে। সেখানেও মন টেকেনি। মেডিকেল ছেড়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মা–বাবা চেয়েছিলেন ছেলে পুরোদস্তুর চাকরিজীবী হবেন। কিন্তু জাহিদুলের আগ্রহ ছিল ব্যবসায়। এ জন্য পড়াশোনা শেষ করেই ঠিকাদারি ও আমদানি ব্যবসায় নেমে পড়েন। তিন বছর ব্যবসা করে পড়েন নানা চ্যালেঞ্জে। বুঝতে পারেন ব্যবসায় তাঁর অভিজ্ঞতা কম। সেই ভাবনা থেকে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হন।

১৯৯০ সালে এমবিএ শেষ করে বেসরকারি একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রকল্পপ্রধান হিসেবে চাকরি শুরু করেন। আড়াই বছর সেখানে কাজ করে ১৯৯২ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গিয়ে প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কিছু কোর্স করেন। এরপর একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এভাবে ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে ২০১২ সালে দেশে ফেরেন জাহিদুল।

নিজের প্রয়োজনে শুরু
দেশে ফিরে ২০১২ সালে এক স্থপতি বন্ধুকে নিয়ে নির্মাণ খাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন জাহিদুল। সেখানে কাজ করতে করতেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে যান। জাহিদুল জানান, ঢাকায় যেসব ফসল পাওয়া যায়, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই পরিবারের জন্য ভেজালমুক্ত ফসল জোগাড় করতে গ্রামে স্বল্প পরিসরে কৃষিকাজ শুরু করি। সেটা ২০১৪ সালে। শুরুতে রাজবাড়ীতে পৈতৃক বাড়িতে কিছু ডাল, গম, শর্ষে ও সবজি চাষ শুরু করেন। মৌসুম শেষে ভালো ফলন হয়। তাতে নিজের পরিবারের চাহিদা তো মিটেছেই, পরিচিতজনদের কাছেও কিছু পণ্য বিক্রি করেছেন। এই সাফল্যে বাণিজ্যিকভাবে ফসল উৎপাদনের চিন্তা মাথা ঢোকে তাঁর। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষিপণ্যের প্রতিষ্ঠান কোলে-কাপরা।

বড় পরিসরে ফসল উৎপাদনের জন্য জমি পাবেন কোথায়—শুরুতে সেই ভাবনায় অস্থির ছিলেন জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরে দেখলাম পাবনা ও কুষ্টিয়া সীমান্তে পদ্মার কোল ঘেঁষে বিপুল জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। সেখানেই প্রায় ১০০ বিঘা জমি কেনেন তিনি। সেই জমিকে চাষাবাদ উপযোগী করতে স্থানীয় কিছু লোক নিয়োগ দেন। এসব কাজে প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৬০ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) থেকে ঋণ নেন। জাহিদুল জানান, জমি কেনা, জমি প্রস্তুত করা, ফার্ম তৈরি, প্রসেসিং ইউনিট তৈরি ও চাষাবাদ প্রভৃতি কাজে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। চাষের জন্য জমিই কিনেছেন ১০০ বিঘার মতো। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ১২ জন ও মৌসুমি ভিত্তিতে ২৫ জন কর্মী কাজ করেন। প্রতিবছর গড়ে ২০-২৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে তাঁর প্রতিষ্ঠান কোলে-কাপরা।

যেসব ফসল হয়
জাহিদুলের খামারে আখ, ধান, গম, কয়েক ধরনের ডাল, যব (বার্লি), ঢেমশি (বাকহুইট), ওটস, চিয়া সিড, তিশি, তিল, মেথি, কালিজিরা প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া আছে শর্ষে, ধনিয়া, পেঁয়াজ ও রসুন। আবার মসুর, মটর, মাষকলাই, অড়হর, মুগ, হেলেন ডালও চাষ করেন এই উদ্যোক্তা। এসব ফসল থেকে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজাত পণ্যও তৈরি করেন জাহিদুল। ধান থেকে চাল ও গম থেকে আটা বানিয়ে বিক্রি করেন। আখ থেকে বানানো হয় বিভিন্ন ধরনের গুড়। এসব কাজের জন্য তাঁর রয়েছে তিনটি প্রসেসিং ইউনিট। এ ছাড়া ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের পাতা ও ফুল, যেমন অপরাজিতা, রোজেলা টি ও জবা এবং কারি, নিম, তুলসী, শজনে ও পেঁপে প্রভৃতি পাতা বিক্রি করেন তিনি।

জাহিদুল জানান, কোলে-কাপরার পণ্যের মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক ক্রেতার সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও বিপুল পরিমাণে সাড়া পাওয়া যায়। ব্যক্তি ক্রেতার পাশাপাশি রয়েছেন পাইকারি ক্রেতাও। সারা দেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করেন তিনি। ব্যক্তি ক্রেতারা মূলত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে পণ্যের ক্রয়াদেশ দেন। বিক্রয় ও বিপণনের কাজটি দেখভাল করেন তাঁর স্ত্রী জুলিয়া ইয়াসমীন। ঢাকার বনানীতে কোলে-কাপরার নিজস্ব একটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।

কৃষি উদ্যোক্তা জাহিদুলের একটি স্বপ্ন রয়েছে। সেটি হলো ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে টেকসই পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা। এ জন্য তিনি রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বালাইনাশ করেন। তাতে ফসলের গুণ ঠিক থাকে বলে দাবি তাঁর। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ফসলের পোকা দূর করার জন্য তিনি ১১ ধরনের তিতা পাতার মিশ্রণ করে সেটি ব্যবহার করেন।

তবে তাঁর এই ব্যবসায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেসব জমি কিনেছেন, তার কিছু অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। স্থানীয় দুর্বৃত্তরা কিছু জমি দখল করেছে। ভবিষ্যতে পশুসম্পদ, মৎস্য, পোলট্রি প্রভৃতি খাতেও ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান জাহিদুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের জন্য ইকো-সাসটেইনেবল কৃষিকাজ খুবই জরুরি। এ জন্য খুব বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই। সরকার আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা ও নিরাপত্তা দিলে কমিউনিটি ভিত্তিতে এ কাজটি বিস্তৃত করা সম্ভব।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন