­
­
সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি  » «   অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা  » «   আসছেন হামজা চৌধুরী, গ্রামে উৎসবের আমেজ  » «   ঈদের আগে চাঙা প্রবাসী আয়, ১৫ দিনে এলো ১৬৫ কোটি ডলার  » «   বালোচ লিবারেশন আর্মি কারা এবং কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে?  » «   সিপিবি অফিস দখলে পিনাকীর ডাকে সাড়া মিলেনি  » «   গুতেরেসের সঙ্গে কেন বৈঠক, ‘আমি ঠিক বুঝিনি’: ফখরুল  » «   ধর্ষণবিরোধী গণমিছিল নিয়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা, কর্মসূচি স্থগিত করল বাম সংগঠনগুলো  » «   বিশ্বসেরা ৫৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বুয়েট-ঢাবি-নর্থ সাউথ  » «   ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব  » «   নৌকা হবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত!  » «   মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে বাঁচানো গেল না, ধর্ষকের বাড়িতে আগুন, প্রতিবাদ  » «   এবার বিদায়ের ঘোষণা দিলেন মাহমুদউল্লাহ  » «   ১৫ বছরের নিচে কেউ হজে যেতে পারবে না  » «   ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় আসলে কী ঘটেছিল?  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

 

জুলাই আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে এপ্রিলে আরেকটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আসছে। যা ভবিষ্যতে রূপ নেবে রাজনৈতিক দলে। এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দুই নেতা আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্ল্যাটফর্মের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। রবিবার (১৬ মার্চ ২০২৫) ফেসবুকে দেওয়া এক বার্তায় এ তথ্য জানান আলী আহসান জুনায়েদ। এই পোস্ট শেয়ার করে সমর্থন জানিয়েছেন রাফে সালমান রিফাত।

সাবেক এ শিবির নেতা আলী আহসান জুনায়েদ ফেসবুকে জানান, আমরা বিশ্বাস করি, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এই উদ্যোগে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। আসুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গঠনের এই সংগ্রামে শামিল হই।
তিনি বলেন, ৩৬ জুলাই ফতহে গণভবনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হলেও, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বহু মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, ধর্মবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ামুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে কার্যকর অবস্থান-এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়ার কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা গণঅভ্যুত্থানের দাবিগুলো প্রকৃতই বাস্তবায়ন করতে চাই।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে, তা পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এই বিপ্লব পরিপূর্ণতা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

সেই পোস্টের কমেন্টে গুগল ফরম পূরণ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জুনায়েদ। ঘোষণাপত্রে যুক্ত করা পোস্টারে দু’জন তরুণীসহ ছয়জনের মুখচ্ছবি রয়েছে। নারীদের একজন হিজাব পরা, অন্যজনের মাথা খোলা। তরুণদের একজন দাড়ি-টুপি জোব্বা পরা, একজন আদিবাসী। জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক নয়, এর মাধ্যমে মধ্যপন্থি দল গঠনের আভাস দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

আলী আহসান জুনায়েদ একজন সাবেক শিবির নেতা, তিনি সংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরেরও সভাপতি ছিলেন তিনি। রাফে সালমান রিফাতও ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। জুনায়েদ পড়েছেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে। আর রিফাত পড়েছেন ফার্মেসিতে।
অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটিতে (জানাক) ছিলেন শিবিরের সাবেক নেতারাও। এনসিপির শীর্ষ পদ নিয়ে বিরোধে তাদের একাংশ আলাদা হয়ে যায়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের দাবিতে তাদের নেতৃত্বে আরেকটি রাজনৈতিক দল আসছে।

উদ্যোক্তরা জানান, রাজনৈতিক প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে প্ল্যাটফর্মটি। জনগণ চাইলে রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে। শুধু সাবেক শিবির নয়, সব মতের মানুষের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। শিবির ‘ট্যাগিং’-এ এনসিপিতে যাদের জায়গা হয়নি, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ পূরণের সম্ভাবনা না থাকায় যারা এনসিপিতে যোগ দেননি, তাদের নিয়ে হবে প্ল্যাটফর্ম। সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনের শুরু হয়। ছাত্র ও গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা সামনের থাকলেও নেতৃত্বে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। এছাড়া ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা আমলের শেষ দিকে নিষিদ্ধ হওয়া শিবির নেতারা সাংগঠনিক পরিচয়ে ছিলেন না আন্দোলনে। অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, শরফুদ্দিনসহ অন্তত ৩০ নেতা যোগ দেন জানাকে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা তরুণদের উদ্যোগে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) গঠিত হয়। ২৬ নভেম্বর এই প্ল্যাটফর্মে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে যোগ দেন আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। এরপরই মূলত তাঁদের দুজনের অতীত রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আসে। জুলাই অভ্যুত্থানে তাঁদের ভূমিকার কথাও আলোচিত হয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হয়। সেখানে জুনায়েদকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাফেকে যুগ্ম সদস্যসচিব করা হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদের জন্য জুনায়েদের নাম আলোচিত হয়। রাফে সালমান রিফাতও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন, এমন আলোচনাও তখন ছিল। কিন্তু একপর্যায়ে নতুন দলের শীর্ষ একটি পদে জুনায়েদকে বসানোর দাবিকে কেন্দ্র করে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোক্তাদের ভেতরে বিতর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেন কমিটির দুটি পক্ষের সমর্থকেরা। আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করে শুরু হয় কাদা–ছোড়াছুড়ি। এই বিতর্কে এক পক্ষে ছিলেন নাগরিক কমিটিতে থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা, অন্য পক্ষে আখতার হোসেনের (বর্তমানে এনসিপির সদস্যসচিব) সমর্থকেরা। এর মধ্যেই চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপিসহ ৮টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ২৪ ফেব্রুয়ারি চীন সফরে যান আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাতসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির চারজন নেতা। এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে প্রশ্ন তৈরি হয়। সেদিন মধ্যরাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নাগরিক কমিটি বলেছিল, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে তারা কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। জুনায়েদ, রিফাতসহ চারজনের এই সফরের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি অবগত নয়। এমন পরিস্থিতিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ফেসবুকে পৃথক পোস্ট দিয়ে জুনায়েদ ও রিফাত জানান, তাঁরা নতুন রাজনৈতিক দলে থাকছেন না।

এনসিপিতে যোগ যোগ না দেওয়া নেতাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ আমলে শিবির হত্যাকে যেভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, নতুন দলেও শুধু অতীতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে নেতৃত্বে আসতে দেওয়া হয়নি। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে।
জানাকের যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাফে সালমান রিফাত নতুন প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে বলেন, এনসিপি গঠন প্রক্রিয়ায় অনেক কিছুই ন্যায্য হয়নি। শুধু সাবেক শিবির নয়, কওমি মাদ্রাসা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে তা মনে করেন। তাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণা করবে, এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। যা রাজনৈতিক প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। ঈদের পর পর জনগণের কাছে যাবে। জনগণ গ্রহণ করলে, রাজনৈতিক দল গঠিত হতে পারে।
রাফে সালমান জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের আরেক সাবেক সভাপতি মির্জা গালিবসহ যারা অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন, তারাও নতুন প্ল্যাটফর্মে থাকবেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন