জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভেঙ্গে গেছে। এই সংগঠন থেকে বেরিয়ে নতুন ছাত্র সংগঠন গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন একটি পক্ষ। ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’ স্লোগানকে ধারণ করে এ নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। নতুন এই ছাত্র সংগঠনটি নিজস্ব কর্মসূচির ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং এর কোনো লেজুরবৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকবে না।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আবু বাকের মজুমদার। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, রিফাত রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে একটি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়ে ইতিমধ্যে। এই দল গঠনের জন্য ইতিমধ্যে জনমত জরিপও সম্পন্ন হয়েছে। এই অবস্থায় মূল সংগঠনেই ফাটল ধরলো। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নতুন যে রাজনৈতিক দল আসছে, তার সঙ্গে নতুন ছাত্র সংগঠনের কোনো সম্পর্ক থাকবে না বলে তারা উল্লেখ করেন।
নতুন ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব কে দেবেন বা কবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে তা উল্লেখ করেননি উদ্যোক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন দল গঠন সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সবাই তাদের নিজস্ব সংগঠনে ফিরে গেছেন। তবে এর বাইরে একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী এসেছিলেন, যারা কোনও সংগঠনের নয়। তাদের তো এখন কোনও যাওয়ার জায়গা নাই। সেই দিকটা বিবেচনা করেই আমরা একটা ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঐক্য ভেঙ্গে গেল কিনা কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করে এটি হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন,‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভাজন হয়নি বা এখানে অনুমতি নেওয়ার তেমন কিছু নেই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘আমাদের এই ছাত্র সংগঠন একটি আলাদা উদ্যোগ। বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করবে, নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ে তুলবে বলে আমরা আশা করি। এটা তেমনই একটি উদ্যোগ। এর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি নির্দিষ্ট অরগানোগ্রাম আছে। সেখানে আহ্বায়ক, সদস্য সচিবরা তাদের মতো করে পরিচালনা করবেন। তারা তাদের মতো করে চলবেন। এটি একটি সতন্ত্র উদ্যোগ, এখানে নিজস্ব গঠনতন্ত্র এবং যে পলিসি, সে অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে।’
আবু বকর মজুমদার বলেন, ‘আমাদের জুলাই আন্দোলনে যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করি, তখন মূলত কোটা বৈষম্য নিরসনে আন্দোলনটি শুরু হয়। সেই আন্দোলন ৯ দফার পর এক দফায় রূপান্তরিত হয়, শেখ হাসিনার পতন হয়। এই সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন এবং তারা এই প্ল্যাটফর্মে ছিলেন, এখনও আছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র দল, ছাত্র শিবির, ছাত্র শক্তি, বাম ছাত্র সংগঠনসহ আরও ইসলামিক ছাত্র সংগঠনের ছাত্ররা ছিলেন। কিন্তু আমরা মনে করছি, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের যে অঙ্গীকার ফ্যাসিবাদী সিস্টেমের সম্পূর্ণ বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দবস্ত, এই দুটি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। একইসঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ যারা একই মতাদর্শের, যারা জুলাই অভ্যুত্থান থেকে আরও বেশি সফিস্টিকেটিভভাবে ভিশনারি পলিটিক্স করতে চান, তারা এই নতুন ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নতুন ছাত্র সংগঠন গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার ও মঙ্গলবার দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনমত জরিপ পরিচালনা করা হবে এবং সদস্য সংগ্রহ করা হবে।
অনলাইন ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ এবং স্কুল ও মাদ্রাসায় এ জরিপ চালানো হবে এবং সদস্য সংগ্রহ করা হবে।