ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি চলতি বছরের শেষের দিকে চলে আসতে পারে বলে আশার কথা শোনালেন ভ্যাকসিন আবিষ্কারক দলের প্রধান সারাহ গিলবার্ট। তবে উল্টো শঙ্কার কথাও শুনিয়েছেন এই বিজ্ঞানী। বলেছেন, ভ্যাকসিনটি যে আসবেই এর কোনও নিশ্চয়তাও নেই।
অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারক দলের এই প্রধান মঙ্গলবার বিবিসি রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন। ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে করোনা ভ্যাকসিন চ্যাডক্স১এনকোভ-১৯ তৈরি করেছে অক্সফোর্ড। প্রথম ধাপে এই ভ্যাকসিনটি এক হাজার ৭৭ জনের দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত ফলে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানব শরীরের জন্য ভ্যাকসিনটি নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছে। এই গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই আশা করছেন চলতি বছরের শেষের দিকে ভ্যাকসিনটি চলে আসতে পারে।
সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে ভ্যাকসিনটি আনার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে; এটি একটি সম্ভাবনা। কিন্তু ভ্যাকসিনটি যে আসবে সে ধরনের নিশ্চিত কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ এটি করার জন্য আমাদের আরও তিনটি বিষয়ের দরকার।
তিনি বলেন, ‘শেষ ধাপের পরীক্ষায় ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা দেখা দরকার, প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা দরকার এবং জরুরি ব্যবহারের জন্য নিয়ন্ত্রকদের দ্রুত লাইসেন্স দিতে রাজি করানো দরকার।’ সারাহ গিলবার্ট বলেন, ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ শুরুর করার আগে এ তিনটির সবকিছু সম্পন্ন হতে হবে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সম্ভাব্য এই ভ্যাকসিনটির লাখ লাখ ডোজ উৎপাদনের দিকে অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের নজর। অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় লাখ লাখ ডোজ উৎপাদন সম্ভব হলেও ব্রিটেনে ভাইরাসটির সংক্রমণ কমে আসায় এর কার্যকারিতা প্রমাণের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠেছে।
ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের পরীক্ষা প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রেও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে যাচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক জন বেল বিবিসি রেডিওকে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আমরা এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা পর্যাপ্তসংখ্যক মানুষ পেয়েছি; যারা ভ্যাকসিনটিও নিয়েছিলেন। যে কারণে আমরা আসলে ভ্যাকসিনটি রোগ প্রতিরোধ এবং মানুষকে নিরাপদ রাখতে পারে কিনা সেব্যাপারে সঠিক ফল পেতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীরা শেষ পর্যন্ত আমাদের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ এবং মারা গেছেন ৬ লাখ ১৩ হাজারের বেশি।
বিশ্বজুড়ে করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়লেও এই রোগ নির্মূলে এখন পর্যন্ত কোনও ভ্যাকসিন চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে শীর্ষে যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে অক্সফোর্ড অন্যতম।