দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর সিলেটে আক্রান্ত রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল ছিল সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতাল। এই হাসপাতালকেই সিলেটের করোনা আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করে আক্রান্ত ও সন্দেহজনক রোগীদের চিকিৎসাসেবা শুরু করে সরকার। তবে সংক্রমণ ও আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ায় ১০০ শয্যার শামসুদ্দিন হাসপাতালে অনেকেই ভর্তি হতে পারছিলেন না।এ অবস্থায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে সিলেটে সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালের ১৮৫ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। রয়েছে ১০ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রও (আইসিইউ)।
এছাড়া করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার এই হাসপাতালে বসছে একটি পিসিআর ল্যাব। এতোদিন ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হচ্ছিলো।তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থকেই এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। তখন করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হতো। তবে এখন সরাসরি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একই সাথে অন্যান্য রোগীদেরও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এই হাসপাতালে।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দিয়ে আসছি।তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন রোগীদের জন্য আমরা নির্দিষ্ট করে হাসপাতালের নিচ তলার ২৬ ও ২৭ নম্বর দুইটি ওয়ার্ডকে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করেছি। এই দুই ওয়ার্ডে মোট ১০০টি শয্যা রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ড, সার্জারি ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ডে আরও ৭৫টি শয্যা তৈরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর হাসপাতালটি ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) আরও রয়েছে ১০টি বেড। বর্তমানে আমরা মোট ১৮৫ শয্যা প্রস্তুত রেখে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।
প্রয়োজনে শয্যা আরও বাড়ানো হবে বলেও জানান এ চিকিৎসক।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সরাসরি এ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালটির ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা সরাসরি এই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন, তবে আমরা আগে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালকেই প্রাধান্য দিবো। সেখানে যদি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার উপরে চলে যায়, তখনই আমরা সেই রোগীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা কর্নারে ভর্তি নেবো।মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ হাসপাতালে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়েও ভর্তি রয়েছেন অনেকে। এ হাসপাতালের ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে এ আইসিইউ বিভাগে তিনজন করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দ্রুতই তাদের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে।
এদিকে খুব শীঘ্রই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ হাজার লিটারের অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইউনুছুর রহমান।এছাড়া সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে আরও একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। খুব শীঘ্রই এ ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।
তিনি বলেন, হাসপাতালটির প্যাথলজি ল্যাবে একটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। তবে এটিকে চালু করতে আরও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এ সকল যন্ত্রপাতির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তাদের সাথে কথাও হয়েছে, খুব শীঘ্রই এ ল্যাব স্থাপন করতে ল্যাবের অবকাঠামোগত পরিবর্তন এনে চালু করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।নমুনা জট কাটিয়ে উঠতে ওসমানী হাসপাতাল অভ্যন্তরে নতুন করে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। কিছু মেশিন ইতোমধ্যে এসেছে। বাকি মেশিনগুলোও পর্যায়ক্রমে আসবে বলে জানান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।
এই দুটি সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও সিলেটের দুইটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলেট নর্থ ইস্ট হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।