শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
লন্ডনে বিসিএ এ্যাওয়ার্ডস ২৮ অক্টোবর থাকছে নানা চমকপ্রদ আয়োজন  » «   বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৩২নং বাসভবন ভস্মীভূত এবং ভাস্কর্য ভাংচুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ  » «    অদ্ভুত দেশপ্রেম ও খাঁটি ব্যক্তিগত স্বার্থ  » «   বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবারে বঙ্গবন্ধু লেখক সাংবাদিক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান  » «   দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসের বো এলাকায় নতুন কাউন্সিল ভবনের উদ্বোধন করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকের প্রাণহানি এবং সৃষ্ট অস্থিরতা-সহিংসতায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ক্ষোভ-নিন্দা  » «   সৃজনের আলোয় মুস্তাফিজ শফি, লন্ডনে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা  » «   বৃটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনার অসাধারণ সাফল্য  » «   দুই বঙ্গকন্যা ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু লেখক এবং সাংবাদিক ফোরামের আনন্দ সভা ও মিষ্টি বিতরণ  » «   কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের সাফল্য  » «   যুক্তরাজ্যে আবারও চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী  পার্লামেন্টে  » «   আমি লুলা গাঙ্গ : আমার আর্তনাদ কেউ  কী শুনবেন?  » «   বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে লন্ডনে ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটসের সেমিনার অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে বাংলা কবিতা উৎসব ৭ জুলাই  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

রোহিঙ্গা যেন এক মানবিক বোঝা



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

গত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার ছিল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিন। কথা ছিল মিয়ানমারের ছাড়পত্র পাওয়া ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গা ওইদিন মিয়ানমারে ফেরত যাবে, কিন্তু তারা যায়নি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দিন নির্ধারিত থাকার পরও মিয়ানমারের বাসিন্দা একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো গেল না। অর্থাৎ রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরে যাবে না এটা নিশ্চিত। কম হলেও ১০ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

এক প্রলয়ঙ্করী সন্ত্রাসী তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছিল তখন মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঠেলে পাঠানো হচ্ছিল, বাংলাদেশের চারদিক থেকে কেন জানি এক ধর্মীয় ডাক শুরু হয়ে গিয়েছিল। মানবতার চেয়ে তখন ধর্মকেই তারা প্রাধান্য দিয়েছিল, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতা কিংবা অর্থনৈতিক শক্তি-সামর্থ্যরে বাছ-বিচার না করে একটাই যেন স্লোগান ছিল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হবে বাংলাদেশকেই।

রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তা মানবতাবিরোধী। জঘন্যতম বর্বরতা। কিন্তু বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিয়ে দিলেই এর চিরস্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে, তা তো নয়। চারদিক থেকে একটা চাপ এসেছে আমাদের দেশটার ওপর। বিশ্বের মোড়লরা এটাই চাইছিল। ভারত মিয়ানমারের ‘এথনিং ক্লিন্জিং’ ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সেনাপ্রধান লাইংওর মানুষ হত্যার সেই পরিকল্পনার প্রতি চীনের মৌনতার বিরুদ্ধে কেউ যায়নি, এমনকি রাশিয়াও না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপে তখন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বড় একা হয়ে গিয়েছিল। এমনিতেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আছে অগুনতি সমালোচনা, এই সমালোচনাকে পুষ্ট করতে বিরোধী দল পুঁজি করেছে তখন রোহিঙ্গা ইস্যুও। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরিতে ধর্মীয় দলগুলো তাদের পুরনো ক্যাসেট বাজিয়েছে। অথচ এ দায় বাংলাদেশের ছিল না। এ দায় ছিল সারা পৃথিবীর, এ দায় এখনো মানবতার।

কক্সবাজার যখন এদের চিৎকার আর ক্রন্দনে ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছিল, ক’টা সংগঠন কিংবা ক’টা গ্রুপ তখন ইসলামী বিপ্লবের জন্য পাড়ি দিতে চাইছিল মিয়ানমারে। রোহিঙ্গাদের নিজেদের আবাস টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নিজেরাই সংগ্রাম করেনি, আমরা কেন এ দায়ভার নেব। ‘কারণ রাখাইনের নির্যাতিত মানুষ মিয়ানমারের নাগরিক। এদের খুন করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে। এই হত্যাযজ্ঞের বিপরীতে বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছে মানবিক দায়িত্ব নিয়ে। এটা শুধুই মুসলমান হিসেবে নয়। তাই বাংলাদেশ নয়, যদি কিছু করতেই হয়, বিশ্ব সম্প্রদায়কেই এর দায় নিতে হবে। এরও বাইরে যদি রাখাইনের অধিবাসীদের মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলে, তাও সেই দায় মুসলমানপ্রধান দেশ হিসেবে শুধুই বাংলাদেশের নয়। মুসলিম দেশগুলোকেই এর দায়ভারের অংশীদার হতে হবে।’ দুই বছর আগে এ কথাগুলোই লিখেছিলাম। কূটনৈতিকভাবেই বাংলাদেশ এর মীমাংসা চেয়েছিল। কিন্তু কিছুই করতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত মানবতার কাছেই আমাদের মতো জনবহুল একটা দেশকে হারতেই হয়েছে। পুশব্যাক করে রোহিঙ্গাদের ঠেলে পাঠানো বাংলাদেশের সে সময়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা মানবতার কাছে হার মেনেছে। আর সে কারণেই সত্যিকার অর্থে ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গার একটা বিশাল ‘জগদ্দল পাথর’ ভর করেছে এখন আমাদের রাষ্ট্রে।

যে মানবতার স্লোগানে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অস্থায়ী আবাস গড়া শুরু করেছিল আজ থেকে দুই বছর আগে, তা এখন আর অস্থায়ী নয়। যেন স্থায়ী আস্তানা হয়ে গেছে তাদের। এই আস্তানায় এখন তারা তাদের দাপট দেখায়। যে করুণা কিংবা অনুকম্পা নিয়ে তারা এই বাংলাদেশে এসেছিল, সে করুণাকে এখন তারা যেন তাদের অধিকার হিসেবেই দেখছে। তারা এখন স্থানীয় বাঙালিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে, ইয়াবা আর সন্ত্রাসে লেপ্টে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের একটা গ্রুপ। এমনকি সরকারি দলের নেতাকে পর্যন্ত হত্যা করেছে তাদেরই কেউ কেউ। অথচ সেই ধর্মীয় লেবাসধারীরা এখন একটিবারও উচ্চারণ করছেন না রোহিঙ্গা নামের এই আপদদের কথা। অশিক্ষায় আর কুসংস্কারের জাঁতাকলে প্রতি বছরের অর্ধলক্ষাধিক শিশুর জন্ম দিচ্ছে তারা। কী এক ভয়াল জনবহুল হয়ে উঠছে ক্ষুদ্র এই জনপদটি।

এ রকম বাস্তবতার মধ্য দিয়েই বিস্ময় আর উদ্বেগের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ অবলোকন করল গত রবিবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গাদের দুই বছর পূর্তি সমাবেশ। যে রোহিঙ্গারা তাদের নিশ্চিহ্ন হওয়ার প্রতিবাদে একটা ‘রা’ উচ্চারণ করতে পারল না তাদের নিজের দেশের অভ্যন্তরে, সেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে গোটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই যেন তাদের সুসংহত অবস্থান জানান দিতে চায়। তাদের অধিকার আদায়ে তারা সংগ্রামী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যায় মাত্র দুই বছরের মাথায়। নাগরিকত্ব, জমিজমা, নিরাপত্তা, বসবাসের পরিবেশ অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে শর্ত দেয়। এ এক বিস্ময় ছাড়া আর কী-ই হতে পারে।
আর তাই স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য প্রশ্ন আমাদের তাড়া করছে এখন। এত বড় সমাবেশ করে তারা জানান দিল তাদের শক্তির কথা। এ শক্তি কি এমনিতেই এসে গেছে। খুন-ধর্ষণে যে মানুষগুলো একটিবারের জন্য লড়তে পারল না গত দুই বছর আগেও তাদের দেশে, সেই মানুষগুলোই এখন শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশকেই চোখ রাঙায়। কার প্ররোচনায় কিংবা কোন সাহস নিয়ে এরা এই স্পর্ধা দেখাচ্ছে, তা তো রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশকে ভাবতেই হবে। যে মানবতার কাছে নিজের জন্মস্থানে পরবাসী হয়ে থাকতে হয়, স্থানীয়দের শঙ্কার মাঝে দিন যাপন করতে হয়, কিংবা যে মানবতার প্রতিদান পেতে হয় তাদের হাতে নিহত হয়ে, সে রকম মানবতাকে শুধুই মানবিক হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এখনো?

রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে আত্মপ্রকাশ করেছে অনেক দেশি-বিদেশি সাহায্যকারী সংস্থা। বিদেশি সেই মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর অনুদানে এই সংস্থাগুলো এখন ভিত গাড়ছে বাংলাদেশে। এই রোহিঙ্গাদের এখানে রেখে দেয়ার জন্য মিয়ানমার নিয়ে আতঙ্ক তারাই ছড়াচ্ছে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়। খবর বেরুচ্ছে, এই এনজিওওয়ালারা এমনকি মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে আতঙ্কিত করে রাখছে উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলো। অন্যদিকে ওই ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গার মাঝ থেকেই সৃষ্টি হয়ে গেছে একটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। গণমাধ্যমে এসেছে, এই গোষ্ঠী এমনকি মিয়ানমারের সঙ্গে যোগসাজশে তথ্য পাচার করছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, যাতে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে রাজি না হয়। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিজস্ব কোন্দলে অন্তত অর্ধশত রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে ইতোমধ্যে।

এ রকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে এই যে লাখো মানুষের সমাবেশ, তার সাংগঠনিক ভিত কোথায় তা এখনই খোঁজে দেখার সময়। রোহিঙ্গা ইস্যুর একটা সমাধানে যেমন পার্শ্ববর্তী দেশগুলো খুব একটা ইতিবাচক নয়, ঠিক তেমনি পাকিস্তান কিংবা দেশের ধর্মীয় চিহ্নিত ধর্মীয় লেবাসধারীরাও এর সমাধানে উদ্যোগী নয়। পাকিস্তানের ইন্ধন দেয়া এনজিওগুলো রোহিঙ্গা ইস্যু জিইয়ে রাখারই চেষ্টা চালাচ্ছে। সে কারণেই তাদেরই ইন্ধনে কাজ করা সংগঠনসহ ৪২টি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করেছে সরকার। বিপুল জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার যদি ফিরিয়ে না নেয় তাহলে আমাদের বিকল্প কী? বাংলাদেশ যুগের পর যুগ রোহিঙ্গাদের লালন-পালনের ভার সইতে কি পারবে? তাদের নাগরিক অধিকারটাই কী হবে? সত্যি কথা হলো বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আস্তে আস্তে সরে যেতেই থাকবে। তখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়ে উঠবে আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী। আর সেজন্যই এরা স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন না চাইলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরই সহযোগিতায় অন্য কোথাও এদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগই প্রয়োজন, যেখানে এনজিওরা কাজ করবে, প্রয়োজনে বাংলাদেশও তার মানবিক হাতও চলমান রাখবে।

যে মানবতার কাছে আজ কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে, যে মানবতা গোটা দেশকে একটা অস্থিরতার মাঝে নিয়ে গেছে, যে মানবতা সন্ত্রাস-ইয়াবা-নেশা-খুন-রক্তর ভয়াল ধারা সৃষ্টি করছে, সেই মানবিকতা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতেই হবে। প্রধান বিরোধী দলগুলো শুধু ইস্যুর জন্য রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। এই ইস্যু মোড়লদের স্থায়ী প্রভাব বলয় সৃষ্টি করবে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা নিয়ে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি ছড়ালে ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতা একাকার হবে। এ আবেগ দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তকারী গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে হবে যেমন সরকারকে, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোরও এই জায়গাটাতে সরকারের সহযোগী না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। এ সরকারের সমালোচনার হয়তো অন্ত নেই, কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে একা ফেলে রাখার সময় এখন নয়। কারণ এই ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের জন্য ‘মানবিক বোঝা’ এবং রাজনৈতিক কিংবা সামাজিকভাবে এমনকি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম

আরও পড়ুন

মধ্যরাতের তিন রক্তাক্ত তরুণ এবং প্রবাসী নিরাপত্তা


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক