ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

ডাকসু নির্বাচন : সাবেক দুই ভিপির দৃষ্টিতে

সেলিমের চোখে শিবিরের বিজয় ‘লজ্জার’, মান্নার কাছে তা ‘স্বাভাবিক’

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 149

ডাকসুর সাবেক দুই ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহমুদুর রহমান মান্না

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা বিশ্লেষণ। অনেকের কাছে ঢাবিতে এই সংগঠনের প্রথম উত্থান বিস্ময়কর। কেউ কেউ মনে করছেন, ডাকসুতে শিবিরের বিজয় জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিতে পারে।

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক দুই ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহমুদুর রহমান মান্না। দুজনই একসময় ছিলেন ডাকসাইটে ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে নিজ নিজ রাজনৈতিক দলে সক্রিয়।

ডাকসুতে শিবিরের বিজয়কে ‘লজ্জাজনক’ বলেছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তার মতে, ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী। অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ায় আমি খুশি।’’

মান্নার মতে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। ছাত্র রাজনীতি অনেক সময় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। ফলে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা সবসময় কাজ করে না। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে দলীয় পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও স্বাধীনতার পর ডাকসুর প্রথম ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উত্থান লজ্জার। কারণ, এই ক্যাম্পাস হচ্ছে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র। সেখানে এ ধরনের শক্তিকে শিক্ষার্থীরা কীভাবে বেছে নিলো, তা বোধগম্য নয়। তাদের নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কারণ, তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী নিপীড়নের সঙ্গেও জড়িত ছিল।’’

তবে দীর্ঘদিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি ঢাবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। সেলিম বলেন, ‘‘আমি মনে করি, নেতৃত্ব তৈরির জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এ ধরনের নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত। আর ডাকসু নির্বাচন প্রতিবছর হওয়া দরকার।’’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘এবারের ডাকসু নির্বাচন বিতর্কমুক্ত হয়েছে কিনা, এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেগুলোর যুক্তিসঙ্গত সমাধান দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ভোট গণনা করা হয়েছে স্ক্যানিং করে, অথচ তা হওয়ার কথা ছিল ভিজ্যুয়াল। তাই এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজনে ভোট পুনঃগণনা করা যেতে পারে।’’

ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচন যেন প্রতারণা বা প্রহসনমূলক না হয়, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। না হলে জাতীয় নির্বাচনের প্রতিও মানুষের আস্থা হারাবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘জাতীয় ও ছাত্র রাজনীতি আলাদা বিষয়। ডাকসুতে ভালো ফল করলে জাতীয় নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বেই—এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই।’’

অন্যদিকে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না শিবিরের প্যানেল নির্বাচিত হওয়াকে স্বাভাবিক বলছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘‘এবারের ডাকসু নির্বাচন সুন্দর হয়েছে। এজন্য উপাচার্যকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। অনেক দিন পর ভোট হওয়ায় আমি খুশি। শিক্ষার্থীরা যাদের যোগ্য মনে করেছে, তাদেরই নির্বাচিত করেছে।’’

জাতীয় নির্বাচনে ডাকসুর প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পুরোপুরি পড়বে না। তবে আংশিক প্রভাব পড়তে পারে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিন্ন ধরনের সমীকরণ কাজ করে। তাই শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ভিন্নমতের প্রার্থীকেও ভোট দিয়ে থাকে।’’

নিউজটি শেয়ার করুন

ডাকসু নির্বাচন : সাবেক দুই ভিপির দৃষ্টিতে

সেলিমের চোখে শিবিরের বিজয় ‘লজ্জার’, মান্নার কাছে তা ‘স্বাভাবিক’

আপডেট সময় : ১০:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা বিশ্লেষণ। অনেকের কাছে ঢাবিতে এই সংগঠনের প্রথম উত্থান বিস্ময়কর। কেউ কেউ মনে করছেন, ডাকসুতে শিবিরের বিজয় জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিতে পারে।

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক দুই ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহমুদুর রহমান মান্না। দুজনই একসময় ছিলেন ডাকসাইটে ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে নিজ নিজ রাজনৈতিক দলে সক্রিয়।

ডাকসুতে শিবিরের বিজয়কে ‘লজ্জাজনক’ বলেছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তার মতে, ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী। অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ায় আমি খুশি।’’

মান্নার মতে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। ছাত্র রাজনীতি অনেক সময় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। ফলে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা সবসময় কাজ করে না। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে দলীয় পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও স্বাধীনতার পর ডাকসুর প্রথম ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উত্থান লজ্জার। কারণ, এই ক্যাম্পাস হচ্ছে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র। সেখানে এ ধরনের শক্তিকে শিক্ষার্থীরা কীভাবে বেছে নিলো, তা বোধগম্য নয়। তাদের নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কারণ, তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী নিপীড়নের সঙ্গেও জড়িত ছিল।’’

তবে দীর্ঘদিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি ঢাবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। সেলিম বলেন, ‘‘আমি মনে করি, নেতৃত্ব তৈরির জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এ ধরনের নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত। আর ডাকসু নির্বাচন প্রতিবছর হওয়া দরকার।’’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘এবারের ডাকসু নির্বাচন বিতর্কমুক্ত হয়েছে কিনা, এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেগুলোর যুক্তিসঙ্গত সমাধান দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ভোট গণনা করা হয়েছে স্ক্যানিং করে, অথচ তা হওয়ার কথা ছিল ভিজ্যুয়াল। তাই এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজনে ভোট পুনঃগণনা করা যেতে পারে।’’

ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচন যেন প্রতারণা বা প্রহসনমূলক না হয়, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। না হলে জাতীয় নির্বাচনের প্রতিও মানুষের আস্থা হারাবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘জাতীয় ও ছাত্র রাজনীতি আলাদা বিষয়। ডাকসুতে ভালো ফল করলে জাতীয় নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বেই—এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই।’’

অন্যদিকে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না শিবিরের প্যানেল নির্বাচিত হওয়াকে স্বাভাবিক বলছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘‘এবারের ডাকসু নির্বাচন সুন্দর হয়েছে। এজন্য উপাচার্যকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। অনেক দিন পর ভোট হওয়ায় আমি খুশি। শিক্ষার্থীরা যাদের যোগ্য মনে করেছে, তাদেরই নির্বাচিত করেছে।’’

জাতীয় নির্বাচনে ডাকসুর প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পুরোপুরি পড়বে না। তবে আংশিক প্রভাব পড়তে পারে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিন্ন ধরনের সমীকরণ কাজ করে। তাই শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ভিন্নমতের প্রার্থীকেও ভোট দিয়ে থাকে।’’