ডাকসু নির্বাচন : আওয়ামী লীগ-জামায়াত আঁতাতের অভিযোগ মির্জা আব্বাসের
তলেতলে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট নিয়ে নিয়েছে শিবির
- আপডেট সময় : ০৯:৪৬:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 149
ডাকসু নির্বাচনে ‘তলে তলে আঁতাত’ করে আওয়ামী লীগের সকল ভোট জামায়াতে ইসলামী নিয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। জামায়াতকে ‘মোনাফেকের দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি দাবি করেন, দেশে ও দেশের বাইরে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি নেতা আব্বাস বলেন, “গতকাল ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি হেরে গেছে, এটা বলতে পারেন আপনারা। আমি কিন্তু বলতে পারি না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর এত ভোট কোত্থেকে আসলো। আমার তো হিসেবে মিলে না ভাই। আমি বলতে চাই না, কারচুপি হয়েছে। আমি বলতে চাই, দেশে একটা গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। কারণ আমরা যখন বিভিন্ন দল একসঙ্গে বসি, তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বারবার আমাদের বলেন-‘ভাই খেয়াল রাইখেন, আওয়ামী লীগ যাতে আর কোনদিন আসতে না পারে। আওয়ামী লীগ ঠেকান সবসময়। যে আওয়ামী লীগ আসলে সবাইকে কচু কাটা করবে। এটা তাদের ডায়ালগ।’”
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা সেভাবেই করলাম। আর তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সকল ভোট জামায়াত নিয়ে নিয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশে ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারণ বিএনপি একটি মাত্র দল বাংলাদেশে, যে দলের হাতে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের জানমাল নিরাপদ। ডাকসু নির্বাচন থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। কালকের নির্বাচনে কিন্তু দুইটা কাজই হয়েছে। ২০০৮ সালের মত ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’, আবার ছাত্রলীগের ভোট। দেখেন, এরা কত বড় মোনাফেকের দল। এদের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচন হয়েছিল।”
২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে চাননি দাবি করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “জোর করে মুজাহিদ সাহেব আমাদের দেশনেত্রীকে নির্বাচনে নিয়ে গেল। তার ফল কি হল? জামায়াতে ইসলামীর চার থেকে পাঁচজন লোকের ফাঁসি হয়ে গেল। আর আমাদের থেকে চলে গেল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। বহুদিন জেল খেটেছি। জেল খাটার এক পর্যায়ে- আমার সাথে নিজামী ও মুজাহিদ সাহেব, ডা. আব্দুল্লাহ তাহের এরা সকলেই কিন্তু আমার সঙ্গে ছিল, একই জেলে। একদিন নিজামী সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, হুজুর আপনি নির্বাচনে কেন গেলেন বলেন তো? নিজে তো গেলেন, আমাদেরও নিয়ে গেলেন। মারলেন তো আমাদেরও। উনি বললেন, আমি ভাই এ ব্যাপারে কিছু বলব না। পাশে ছিল মুজাহিদ সাহেব। উনি বললেন, আপনি বুঝবেন না কেন গেছি।”
তিনি বলেন, “আজকে দুর্ভাগ্য এই, ওই নির্বাচন কিন্তু উনাদের ফাঁসির দিকে নিয়ে গেল। তারপরও দেখেন, আওয়ামী লীগের সাথে তাদের প্রেম কিন্তু ছোটে না। এখনো আওয়ামী লীগের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে। এই নির্বাচনেও ভারতে বসে বসে তারা ‘ইন্সট্রাকশন’ দিয়েছে জামায়াতকে ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ বিএনপিকে ধ্বংস করলে পরে আর কোনো সমস্যা থাকে না জামায়াতে ইসলামের। আওয়ামী লীগ বাইরে থেকে বসে বলবে, এই যে মৌলবাদীরা এসে গেছে। সুতরাং এই দেশটাকে দখল করতে হবে। এরকম চিন্তাভাবনা আওয়ামী লীগের ভিতরে আছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না, দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে।”
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও নির্বাচিতদের স্বাগত জানিয়ে আব্বাস বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে যাই হোক, যেভাবেই হোক, ওরা ইলেকশনে পাস করেছে। আমি এই কমিটিকে স্বাগত জানাতে চাই। আশা করব, এই কমিটি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য চেষ্টা করবে। এবং তাদের সিনিয়র নেতারা দেশটাকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে, সেখান থেকে তাদের যেন রক্ষা করে।”
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, যার ফল ঘোষণা করা হয় বুধবার সকালে। ডাকসু নির্বাচনে প্রথম বারের মতো অংশ নিয়ে ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। পদেও জয়লাভ করে শিবির। অপরদিকে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল নব্বইয়ের ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জিতলেও এবার কোনো পদে জয় পায়নি।


















