ছবি: বিবিস
গ্রেট ব্রিটেনে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে গতকাল ২৯ অক্টোবর। কনজারভেটিভ সরকারের চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামনস তৃতীয়বারের মতো এ বাজেট ঘোষণা করলেন।
গণমাধ্যমে বাজেট পূর্ব আলোচনা,সমালোচনা এবং বিরোধীদলের বিভিন্ন প্রস্থাবনা গুরুত্বের সাথে নিয়েই সরকার এ বাজেট ঘোষণা করল। ব্রিটেনে ব্রেক্সিটকে সামনে রেখে সংকট থাকলেও এ বাজেটে ব্রিটেনের জনগণ খুব একটা অস্বস্থিতে পড়ে নি। বহু আলোচিত জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা খাতে এ বাজেটে ২০.৫ বিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্ধের ঘোষণা এসেছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বা ম্যান্টাল হেল্থ ব্রিটেনে একটা আলোচিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ইস্যু। এ খাতে অতিরক্তি ২ বিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে। এই সেবায় ম্যান্টাল হেলথ এম্বুলেন্স সার্ভিস এবং ২৪ ঘন্টা টেলিফোন হটলাইন সার্ভিস চালু করা হচ্ছে।
৭০০ মিলিয়ন পাউন্ড রাখা হচ্ছে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি মানুষের জন্য। এয়ার এম্বুলেন্সের জন্য রাখা হয়েছে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড।
স্কুলগুলোতে সহায়তার জন্য রাখা হয়েছে আরও ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রগুলো পরিদর্শনের জন্য শিক্ষা সফরের অংশ হিসেবে ১ মিলিয়ন পাউন্ড রাখা হয়েছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে।
বাজেটে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্রিটেনের নিত্যদিনে বহুল ব্যবহৃত জিনিষ হলো জ্বালানি অর্থাৎ পেট্রল ডিজেল প্রভৃতি। বাজেটে জ্বালানির মূল্য না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে।
শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের দিকে লক্ষ্য রেখে ২.৪ মিলিয়ন পরিবারের শিশুদের জন্য ৬৩০ পাউন্ড অতিরক্তি বরাদ্ধ রাখা হয়েছে; যা প্রয়োজনের তুলনায় অল্প বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
মধ্যবিত্ত শ্রেনীর জীবনমানে ছেদ না পড়তে নিন্ম আয়ের পরিবারের জন্যে খুব একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসে নি। ন্যূনতম মজুরী ৭.৮৩ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৮.২১ পাউন্ড করা হয়েছে। তবে নিত্যদিনে ব্যয় বৃদ্ধি অনুসারে মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কোন বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয় নি। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের প্রাপ্ত বেনিফিট আগের মতই থেকে গেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি আগের মতোই আছে। সাময়িকভাবে কর্মহীন মানুষের জন্য অনুদান হিসেবে ইউনিভার্সাল ক্রেডিটে ৬.৫ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্ধ এবং ন্যূনতম শ্রমঘন্টা বাড়ানোকে ফিলিপ হ্যামন্স তার সরকারের একটা উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন ৩০ অক্টোবর বিবিসি‘র সাথে তাঁর এক সাক্ষাৎকারে।
ছবি: বিবিসি
মধ্যবিত্ত শ্রেনী যাতে আরও বেশী বাড়ি ক্রয়ে উৎসাহ না হারায় সেজন্যে এ বাজেটে বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়া হয়েছে।বিগত বছরগুলোতে বাড়ি ক্রয়কারীকে শুধুমাত্র সরকারকেই বড় অংকের কর দিতে হতো। এমনকি ১২৫,০০০ পাউন্ডের উপর বাড়ির দাম হলেই ক্রয়কারী উপর এ কর ধার্য ছিল। এ বাজেটে ৫০০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত কোন স্ট্যাম্প ডিউটি (নির্ধারিত কর) দিতে হবে না।এ বছর সারা দেশে আরও ৬৫০ হাজার ঘর তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার এই বাজেটে।
পরিবেশ বাঁচাতে বাজেট প্রণেয়নের আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয় উচ্চারিত হচ্ছিল। এর মাঝে একটা ছিল প্লাস্টিক ব্যবহার। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে এর উপর কর বাড়িয়েছে সরকার। সুপার মার্কেটগুলো তাদের শব্জিজাত কিছু পণ্যের প্যাকেজিং এ প্লাস্টিক ব্যবহার না করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে টেসকো তাদের ভেজিটেবলের প্যাকেজিং এর কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাগজের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। সারা দেশে গাছ লাগাতে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্ধ রাখা হয়েছে।
নতুন ব্রিটেন অর্থাৎ ব্রিটেনের বিচ্ছেদ ঘটাতে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে এ বাজেটে ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড রাখা হয়েছে।
বিশেষত ব্রেক্সিট সময়কালীন এ সময়ে ব্রিটেনের ‘বাজেট ২০১৮’ মানুষের জন্য ছিল উদ্বেগের। সেই উদ্বেগে কিছুটা লাঘব হলেও কোন চমক আসে নি বাজেটে। তবে সব মিলিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্থি আছে।
মিডিয়ায় এবং বিরোধী দলের উচ্চারিত অনেক ইস্যুকেই গুরুত্ব দিয়েছে সরকার তাদের এ বাজেট প্রণয়নে।