’৭১-এ জামায়াত কী কী করেছিল, মনে রাখতে বললেন তারেক রহমান
- আপডেট সময় : ০১:২৬:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 58
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামী কী কী ভূমিকা রেখেছিল, তা স্মরণে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলে যে একবার দেখুন না এদের (জামায়াত)। তাদের তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। তারা লাখ লাখ মানুষকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল, এই কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।’
আজ রোববার (৭নভেম্বর) বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজন করা এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।
কোনো নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ না করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তি বা বেশ কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন জিনিসের কনফারমেশন (নিশ্চয়তা) দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দোজখ, বেহেশত, দুনিয়া—সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটার মালিক আল্লাহ, যেটার কথা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই বলতে পারেন, সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই, আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি যে সেটি হচ্ছে শিরক। সেটি শিরকের পর্যায়ে পড়ে।’
উপস্থিত ছাত্রদল নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে—যারা এসব বলে, তারা শিরক করছে। আর যাঁরা শুনবেন, তাঁরাও শিরকের পর্যায়ে পড়বেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ইদানীং বলতে শুনেছি বা বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে (রাষ্ট্র ক্ষমতায়) অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে—অমুককে দেখুন, তাদের তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। একাত্তরে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কীভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। এই যাদের কেউ কেউ বলে যে একবার দেখুন না এদের। তাদের দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল, এই কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।’
তারেক রহমানের মতে, দুটি বিষয় মোকাবিলা করতে না পারলে দেশ সংকটে পড়বে—দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ কেউ বলে থাকে পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির সম্পর্কে যেভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াত, আমরা ইদানীং লক্ষ করছি কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ঠিক একই সুরে গান গাইছে বা একই সুরে কথা বলার চেষ্টা করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরও তো দুজন ব্যক্তি আমাদের সাথে সেই সময় সরকারে ছিল। এই দুজন ব্যক্তি পৃথিবীতে আর নেই।’
তিনি বলেন, ‘দুজনেই সিনিয়র রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাঁরা গত হয়েছেন। কাজেই যে মানুষ নেই, তাঁদের সম্পর্কে অবশ্যই খারাপ কথা বলা উচিত নয়। তাঁদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলতে চাই—সেই দুজন ব্যক্তির বিএনপি সরকারে শেষ দিন পর্যন্ত থাকা দুটো বিষয় যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করে। এক. তাঁদের খালেদা জিয়ার প্রতি পূর্ণ কনফিডেন্স ছিল; দুই. খালেদা জিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন—সে কারণেই তাঁরা শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন।’
উল্লেখ্য, ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ছিলেন। সম্প্রতি জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বলেছেন—ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘এখন তাদের দলের অন্য যে যত বড় বড় কথাই বলুক না কেন, খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং দুর্নীতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে—এই আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে ছিল। তারা দেখেছিল সেই সরকারকে, কারণ তারা সরকারের ভেতরই ছিল। সে জন্যই তারা শেষ দিন পর্যন্ত এই বিএনপি সরকারের সাথে ছিল। আমরা এভাবেই ধরে নিব, অন্য কিছু বলতে চাই না।’
বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে
কঠিন সময় সামনে অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় নানান ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে দেশের জনগণ—আর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি। তাঁর মতে, এসব রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় গণতন্ত্র; জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অনেক ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব।
ধর্মের নামে বিভাজনের পথ সৃষ্টি
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী ধর্মের নামে দেশে বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করতে চায়। দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ হলেও বিএনপি ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বা সমাজকে বিভাজনে বিশ্বাস করে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে। সবচেয়ে বড় যে অপপ্রচার, তার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সাইবার যুদ্ধে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে বিজয়ী হতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাঈল জবিউল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি খাতে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস বাদ দিয়ে অন্য কোনো দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।

















