৪ দিন পর গোপালগঞ্জে ৪ হত্যা মামলা, আসামি আ.লীগের ৬ হাজার কর্মী
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৫জন মারা যান
- আপডেট সময় : ০৮:২১:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
- / 230

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় চারদিনের মাথায় চারটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তারা মারা গিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের পোস্টমর্টেম হয়নি।
শনিবার রাতে করা প্রতি মামলাতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাত এক হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। চার মামলায় মোট আসামি ছয় হাজার।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান জানান, “প্রথম দিন অর্থাৎ বুধবার নিহত চারজনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি হত্যা মামলা করেছে।
এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যাওয়ার ঘটনাও মামলা হবে বলে জানান ওসি।
গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ ও সমাবেশ ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বুধবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের মধ্যে চারজন নিহত এবং অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।
প্রথম দিন অর্থাৎ বুধবার নিহত চারজন হলেন- শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন।
ওই রাতেই সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের দাফন ও সংকার করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, প্রয়োজনীয় হলে কবর থেকে উত্তোলন করেও ময়নাতদন্ত করা যেতে পারে।
তবে দীপ্ত সাহাকে দাহ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে কী হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
গুরুতর আহত অবস্থায় বুধবার রাতেই তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। একদিন বাদে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মারা যান অটোরিকশা চালক রমজান মুন্সী। তার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার আগে শাহবাগ থানার একজন এসআই মরদেহের সুরতহাল করেন।
গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় সুমন বিশ্বাস (৩০) ও আব্বাস আলী (৩০) নামে আরও দুই গুলিবিদ্ধ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, কিশোর রমজান কাজী হত্যার ঘটনায় মামলার বাদী হয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই আইয়ুব হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এনসিপি নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। তারা গোপালগঞ্জ শহরের এস কে সালেহিয়া মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে এক হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ দুষ্কৃতকারীরা গাড়িবহরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়।
এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অপর তিন হত্যা মামলার এজাহারের বর্ণনা ও আসামির সংখ্যা একই।
দীপ্ত সাহা (২৭) হত্যা মামলায় বাদী হয়েছেন এসআই শামীম হোসেন। মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতকারীরা (বুধবার) বেলা আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনের দীপ্ত সাহা গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়েছেন সোহেল রানা মোল্লা (৩০) হত্যা মামলায়। সেই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লঞ্চ ঘাট এলাকায় আ্ওয়ামী লীগ ও দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে সোহেল রানা আহত হন। তাকে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
একইদিন লঞ্চ ঘাট এলাকার পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে আ্ওয়ামী লীগসহ দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে ইমন তালুকদার (১৭) নিহত হ্ওয়ার কথা বলা হয়েছে হত্যা মামলায়। সেই মামলার বাদী হয়েছেন এসআই শেখ মিজানুর রহমান।


















