রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীজুড়ে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ এবং গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের ও ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি এলাকায় আলম পরিবহনের একটি বাসে আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় এক হেলপারের মৃত্যু হয়।
রাজধানীর রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী, সোনারগাঁও জনপদ, ধানমন্ডির সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, বাড্ডা ও বসুন্ধরার ১০০ ফিট এলাকায় একাধিক যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। তবে এসব ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে তিনজন আহত হন। মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে দুর্বৃত্তরা ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। একইদিন ভোরে মোহাম্মদপুরে সরকারের এক উপদেষ্টার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের গেটেও দুর্বৃত্তরা দুটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে।
ডিএমপি জানায়, রাজধানীতে নাশকতার অভিযোগে গত তিন দিনে ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। পুলিশের দাবি, তারা বিভিন্ন জেলা থেকে টাকার বিনিময়ে ঢাকায় এসে নাশকতার চেষ্টা করছিল।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থেকে চোরাগুপ্তা মিছিল ও নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৪টি ঝটিকা মিছিল হয়েছে এবং ৫৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, “এদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের। টাকার বিনিময়ে তারা মিছিলে অংশ নেয় এবং পরে শহর ছেড়ে চলে যায়।” কমিশনারের ভাষায়, এসব মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। অল্পবয়সী তরুণদের হেলমেট ও মাস্ক পরিয়ে ককটেল বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রায় ঘোষণার দিন ঘিরে বাড়তি সতর্কতা
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত হতে পারে। পুলিশ জানায়, ওই দিন আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত করতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সকাল-সন্ধ্যা লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। নাশকতা রোধে হোটেল, মেস ও গেস্টহাউজে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কোনও আগন্তুককে আশ্রয় দেওয়ার আগে পরিচয় যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কঠোর অবস্থানে ডিবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি
রাজধানীতে সাম্প্রতিক সহিংসতা, বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়ানো ও উসকানিমূলক প্রচারণার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বুধবার (১২ নভেম্বর) মিন্টো রোডে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “যারা ভীতি সৃষ্টি বা অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছি।”
তিনি জানান, কিছু ব্যক্তি রিকশাচালক বা পথচারীদের টাকা দিয়ে স্লোগান দিতে বাধ্য করছে এবং সেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, “যারা বিদেশে বসে এসব উসকানি দিচ্ছে, তাদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।”
নাশকতা প্রতিরোধে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেওয়ার আগে তার পরিচয় নিশ্চিত করুন। কোনও যানবাহন অরক্ষিত রাখবেন না। ঢাকাবাসীই আমাদের শক্তি।”
তিনি আরও জানান, ‘‘সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই।’’
















