হামাস নির্মূলে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন তীব্রতর, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ট্রাম্পের
- আপডেট সময় : ০১:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / 369

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজা উপত্যকায় আরও তীব্র সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বিমান ও স্থল অভিযানে শনিবার (১৭ মে ২০২৫) একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজায় অনির্দিষ্টকালের জন্য আইডিএফ মোতায়েন থাকবে। তার ভাষায়, “ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়া হবে এবং দক্ষিণ গাজায় যে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র থাকবে, তা থাকবে ইসরায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।”
জাতিসংঘ মহাসচিব নেতানিয়াহুর এই ঘোষণার কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্ত সংঘর্ষকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে এবং এতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ আরও বাড়বে।
এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন গাজার প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের একটি পরিকল্পনা করছে।
ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় ট্রাম্প প্রশাসন
গাজাবাসীদের লিবিয়ায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগের বিষয়ে অবগত পাঁচ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিসি জানায়, মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে। এর মধ্যে তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর নিয়ে লিবিয়ার শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ হয়েছে।
তারা আরও বলেন, যদি লিবিয়া ফিলিস্তিনিদের গ্রহণে সম্মত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সে দেশের দীর্ঘদিন আটকে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ ছাড় করতে পারে। উল্লেখ্য, এক দশকেরও বেশি সময় আগে লিবিয়ার শত শত কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ করা হয়। যদিও এই বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি বলেও তারা জানিয়েছেন।
তাদের দাবি, পরিকল্পনার বিষয়ে ইসরায়েল অবগত রয়েছে। তবে এই পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের উৎস কিংবা সম্ভাব্য সময়সীমা সম্পর্কে কোনও তথ্য জানায়নি এনবিসির প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন প্রস্তুতের আগে একাধিক অনুরোধ সত্ত্বেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে প্রতিবেদনের প্রকাশের পর এক মার্কিন কর্মকর্তা এনবিসির দাবিগুলোকে “সম্পূর্ণ অসত্য” বলে উল্লেখ করেন।
তার ভাষ্য, “এ ধরনের কোনও পরিকল্পনা বাস্তবতা নির্ভর নয়। এটা অবাস্তব ও অর্থহীন চিন্তা, যার কোনো আলোচনা হয়নি।”
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম বলেন, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার এমন কোনো উদ্যোগ সম্পর্কে তারা অবগত নন। উল্লেখ্য, হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল সরকারও এ বিষয়ে এনবিসির অনুরোধে কোনও মন্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
অন্যদিকে, লিবিয়া নিজ দেশের নাগরিকদেরই যথাযথ সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দেবেইবাহ এবং পূর্বাঞ্চলে খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িত।
এই বিষয়ে দেবেইবাহ সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিও কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে, গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে “মানবসৃষ্ট বিপর্যয়” আখ্যা দিয়ে আয়ারল্যান্ড ও স্পেনসহ অন্তত ছয়টি দেশ ইসরায়েলের প্রতি সামরিক আগ্রাসন বন্ধ এবং জরুরি মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।



















