হরমুজ প্রণালী বন্ধের পথে ইরান, যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি ‘ভয়াবহ ভুল’ হবে
- আপডেট সময় : ১০:২৭:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
- / 238

বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে রয়েছে ইরান। দেশটির পার্লামেন্টের ভোটে এরই মধ্যে এই প্রণালী বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
এখন কেবল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের। ইরানের রাষ্ট্রপরিচালিত প্রেস টিভি জানিয়েছে, সর্বোচ্চ জাতীয় পরিষদকে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে রোববার রাতেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইরানের হরমুজ প্রণালী বন্ধের এই তোড়জোড়ের মধ্যেই দেশটিকে এই পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে চীনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
বিশ্বের মোট জ্বালানি তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালী দিয়েই পরিবহন করা হয়। ইরান বরাবরই পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ দূরে ঠেলে রাখতে এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়ে এসেছে।
আর এখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পর তারা পার্লামেন্টে হরমুজ প্রণালী বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদনের পদক্ষেপ নিল।
সিদ্ধান্তটি যদিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে পার্লামেন্ট সদস্য ও ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর কমান্ডার ইসমাইল কোসারি রোববার ইয়াং জার্নালিস্ট ক্লাবকে বলেছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি এখন আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। প্রয়োজন হলেই তা কার্যকর করা হবে।
ওদিকে, হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি পার্লামেন্টে অনুমোদের খবর ইরানের প্রেস টিভিতে আসার পর এই জলপথ যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য চীনকে তাগাদা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও
রোববার ফক্স নিউজে এক প্রোগ্রামে তিনি বলেন, “আমি চীন সরকারকে উৎসাহিত করব যাতে তারা ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারণ, তারা তেলের জন্য হরমুজ প্রণালীর ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল।”
“ইরান এটা (হরমুজ প্রণালী বন্ধ) করলে তা হবে আরেক মস্তো ভুল। এটি হবে তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহননের সামিল। আমাদের ওই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিকল্প পথ হাতে আছে। তবে অন্য দেশগুলোও সেইসব বিকল্প পথের সন্ধান করবে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে আমাদের চেয়ে অন্যদেশগুলোর অর্থনীতি অনেক বেশি খারাপ অবস্থায় পড়বে”, বলেন রুবিও।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন এই প্রণালী বন্ধের পদক্ষেপে উত্তেজনা আনেক বেশি বেড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দেশগুলোও এর জবাব দেবে।
তবে রুবিওর বক্তব্যের বিষয়ে ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাস থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
হরমুজ বন্ধ করা হবে ‘ভয়াবহ ভুল’, ইরানকে রুবিওর হুঁশিয়ারি
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর এবার হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইরানকে এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার ফক্স নিউজের একটি অনুষ্ঠানে রুবিও বলেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা হবে ইরানের জন্য একটি ‘ভয়াবহ ভুল’ এবং ‘অর্থনৈতিক আত্মহত্যা’।
বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাস সরবরাহ হয় হরমুজ প্রণালী দিয়ে। ইরানের প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির পার্লামেন্ট এই কৌশলগত জলপথ বন্ধ করে দেওয়ার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য এলো।
চীনের উদ্দেশে রুবিও বলেন, “আমি বেইজিং সরকারকে বলব এ বিষয়ে ইরানকে ফোন করতে। কারণ নিজেদের তেলের জন্য তারা হরমুজ প্রণালীর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।”
তিনি আরও বলেন, “যদি তারা (ইরান) এটা করে, তবে তা হবে আরেকটি ভয়াবহ ভুল। এটা তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যা। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের আছে, কিন্তু অন্য দেশগুলোরও বিষয়টি ভাবা উচিত। এটা আমাদের চেয়ে অন্য দেশের অর্থনীতিকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ১৪টি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা, দুই ডজনের বেশি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২৫টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘গুঁড়িয়ে’ দিয়েছে। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
তেহরান এই হামলার জবাবে ‘আত্মরক্ষার অঙ্গীকার’ করেছে। তবে রুবিও প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়ে ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, “এমন কোনো পদক্ষেপ হবে ‘তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল’।”
অবশ্য এতকিছুর পরও আলোচনার পথ খোলা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি যোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।



















