ঢাকা ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:০২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
  • / 246
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জুলাই গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।

অভ্যুত্থানের বছর পূর্তির দুদিন আগে রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য শুরু করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ন্যায়বিচার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য রাখেন।

এক বছর আগে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় আসামি রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

শেখ হাসিনা ও কামাল ভারতে রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতেই শুরু হয়েছে বিচার। সাবেক পুলিশ প্রধান মামুনকে কারাগারে থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি আসামি হলেও অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।

গত ১০ই জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল এই ট্রাইব্যুনাল।

যে ৫ অভিযোগ
নেতৃত্বের দায়, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, হত্যা, পরিকল্পনাসহ মানবতাবিরোধী পাঁচটি অপরাধে বিচারের মুখোমুখি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’, ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে উল্লেখ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি আল মামুনসহ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী’রা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা বাস্তবায়ন করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং সাবেক আইজিপি আল মামুন।

তৃতীয় অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের কথা বলা হয়েছে। সেখানে প্ররোচনা, উস্কানি, ষড়যন্ত্র, সহায়তা, সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগটি করা হয়েছে গত বছরের ৫ অগাস্ট ঢাকার চাঁনখারপুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়।

এখানে হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, ষড়যন্ত্রের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পঞ্চম অভিযোগটি ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা নিয়ে।

বিচারের পখরেখা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নে নিহতের সংখ্যা আট শতাধিক বলে সরকারি হিসাবে বলা হয়ে থাকে। বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটি দেড় হাজারের মতো।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে তথ্য প্রমাণ দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।

এরপর গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে সাত দিনের মধ্যে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। পরদিন দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিতও হয়।

বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও পলাতক দুই আসামি হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল গত ১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে। শুনানি শেষে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন হয়।

এই ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। তিনি গ্রেপ্তার কিংবা আত্মসমর্পণ করলে সেই সাজা কার্যকর হবে।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু

আপডেট সময় : ০৭:০২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

জুলাই গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।

অভ্যুত্থানের বছর পূর্তির দুদিন আগে রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য শুরু করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ন্যায়বিচার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য রাখেন।

এক বছর আগে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় আসামি রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

শেখ হাসিনা ও কামাল ভারতে রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতেই শুরু হয়েছে বিচার। সাবেক পুলিশ প্রধান মামুনকে কারাগারে থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি আসামি হলেও অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।

গত ১০ই জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল এই ট্রাইব্যুনাল।

যে ৫ অভিযোগ
নেতৃত্বের দায়, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, হত্যা, পরিকল্পনাসহ মানবতাবিরোধী পাঁচটি অপরাধে বিচারের মুখোমুখি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’, ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে উল্লেখ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি আল মামুনসহ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী’রা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা বাস্তবায়ন করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং সাবেক আইজিপি আল মামুন।

তৃতীয় অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের কথা বলা হয়েছে। সেখানে প্ররোচনা, উস্কানি, ষড়যন্ত্র, সহায়তা, সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগটি করা হয়েছে গত বছরের ৫ অগাস্ট ঢাকার চাঁনখারপুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়।

এখানে হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, ষড়যন্ত্রের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পঞ্চম অভিযোগটি ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা নিয়ে।

বিচারের পখরেখা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নে নিহতের সংখ্যা আট শতাধিক বলে সরকারি হিসাবে বলা হয়ে থাকে। বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটি দেড় হাজারের মতো।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে তথ্য প্রমাণ দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।

এরপর গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে সাত দিনের মধ্যে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। পরদিন দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিতও হয়।

বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও পলাতক দুই আসামি হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল গত ১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে। শুনানি শেষে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন হয়।

এই ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। তিনি গ্রেপ্তার কিংবা আত্মসমর্পণ করলে সেই সাজা কার্যকর হবে।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।