ঢাকা ০৯:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

শেখ হাসিনা–কামালের মৃত্যুদণ্ড চাইল রাষ্ট্রপক্ষ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৪:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / 112

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বছরের জুলাই–আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

টানা পাঁচ দিনের যুক্তিতর্ক শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) চেয়ে আবেদন জানান।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এ এই আবেদন উপস্থাপন করা হয়। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের শাস্তির বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দেন প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

এদিন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

শুনানিকালে তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ ছাত্র–জনতা নিহত হয়েছে। একজন মানুষকে হত্যার জন্য যদি একবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে ১৪০০ মানুষকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু আইনে তা সম্ভব নয়। এজন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমরা তার চরম দণ্ড চাইছি। যদি তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে দেশের জনগণ ন্যায়বিচার পাবে।”

এর আগে ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শুরু করে। সেদিন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনকাল ও গুম–খুনের ইতিহাস তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

পরদিন ১৩ অক্টোবর, দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়—যা মামলার বিচারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানায় প্রসিকিউশন।

এরপর ১৪ অক্টোবর তৃতীয় দিনের যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু ও শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ আদালতে শোনায়।
সেই সঙ্গে সাক্ষীদের বয়ানও উপস্থাপন করা হয়।

এর আগে ৮ অক্টোবর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।
সে দিন মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় ও শেষ দিনের মতো জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
তিনি জুলাই গণহত্যা সংক্রান্ত সাক্ষীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আসামিদের পক্ষে বিভিন্ন সাফাই প্রশ্ন করেন।

আইনজীবী বলেন, আন্দোলনকারীদের আক্রমণের মুখে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়েই গুলি চালিয়েছিলেন—এই যুক্তিও তিনি আদালতে উপস্থাপন করেন।

সব মিলিয়ে মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।

এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এছাড়া জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ মো. কামরুল হোসাইন ও আনিসুর রহমান।
তাদের জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী।

৪৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

রাজসাক্ষী হিসেবে আইজিপির স্বীকারোক্তি

গত ১০ জুলাই, ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি আদালতে বলেন, “জুলাই–আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা–গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা সত্য। আমি নিজেকে দোষী স্বীকার করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে আদালতে এ অপরাধগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরতে চাই এবং রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।”

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠনের সময় তার এই বক্তব্য গ্রহণ করে।

সেই দিনই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।
আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আদালত রায় দেন।

অভিযোগ ও প্রমাণ

এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

  • মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৮,৭৪৭

    • তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা

    • জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা

    • শহীদদের তালিকার বিবরণ: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা

নিউজটি শেয়ার করুন

শেখ হাসিনা–কামালের মৃত্যুদণ্ড চাইল রাষ্ট্রপক্ষ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার

আপডেট সময় : ০৫:৩৪:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বছরের জুলাই–আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

টানা পাঁচ দিনের যুক্তিতর্ক শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) চেয়ে আবেদন জানান।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এ এই আবেদন উপস্থাপন করা হয়। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের শাস্তির বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দেন প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

এদিন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

শুনানিকালে তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ ছাত্র–জনতা নিহত হয়েছে। একজন মানুষকে হত্যার জন্য যদি একবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে ১৪০০ মানুষকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু আইনে তা সম্ভব নয়। এজন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমরা তার চরম দণ্ড চাইছি। যদি তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে দেশের জনগণ ন্যায়বিচার পাবে।”

এর আগে ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শুরু করে। সেদিন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনকাল ও গুম–খুনের ইতিহাস তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

পরদিন ১৩ অক্টোবর, দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়—যা মামলার বিচারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানায় প্রসিকিউশন।

এরপর ১৪ অক্টোবর তৃতীয় দিনের যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু ও শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ আদালতে শোনায়।
সেই সঙ্গে সাক্ষীদের বয়ানও উপস্থাপন করা হয়।

এর আগে ৮ অক্টোবর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।
সে দিন মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় ও শেষ দিনের মতো জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
তিনি জুলাই গণহত্যা সংক্রান্ত সাক্ষীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আসামিদের পক্ষে বিভিন্ন সাফাই প্রশ্ন করেন।

আইনজীবী বলেন, আন্দোলনকারীদের আক্রমণের মুখে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়েই গুলি চালিয়েছিলেন—এই যুক্তিও তিনি আদালতে উপস্থাপন করেন।

সব মিলিয়ে মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।

এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এছাড়া জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ মো. কামরুল হোসাইন ও আনিসুর রহমান।
তাদের জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী।

৪৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

রাজসাক্ষী হিসেবে আইজিপির স্বীকারোক্তি

গত ১০ জুলাই, ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি আদালতে বলেন, “জুলাই–আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা–গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা সত্য। আমি নিজেকে দোষী স্বীকার করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে আদালতে এ অপরাধগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরতে চাই এবং রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।”

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠনের সময় তার এই বক্তব্য গ্রহণ করে।

সেই দিনই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।
আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আদালত রায় দেন।

অভিযোগ ও প্রমাণ

এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

  • মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৮,৭৪৭

    • তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা

    • জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা

    • শহীদদের তালিকার বিবরণ: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা