‘শেখ হাসিনা-ইউনূস দ্বন্দ্বের শিকার আমি’ — দ্য গার্ডিয়ানকে টিউলিপ
- আপডেট সময় : ১২:২১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / 187
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন বলে দাবি করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও নাকচ করে দেন।
টিউলিপ বলেন, “বাংলাদেশে কিছু মানুষ ভুল করেছে এবং তাদের শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু আমি তাদের মধ্যে নই। সত্যি বলতে, আমি কেবল ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’। কারণ, আমার খালা (শেখ হাসিনা) আর ড. ইউনূসের বৈরিতার ফলই এটি।”
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গত আগস্টে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ ওঠে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। তার দাবি, তদন্ত যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেন।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে— শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে মা, ভাই ও বোনের নামে প্লট বরাদ্দ নেওয়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ, এবং আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রসে ফ্ল্যাট গ্রহণ।
দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ “পুরোপুরি ভিত্তিহীন।”
রূপপুর প্রকল্পের আর্থিক কেলেঙ্কারি অভিযোগে একটি ছবির প্রসঙ্গও উঠে আসে— যেখানে দেখা যায়, ২০১৩ সালে রাশিয়া সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে বসে আছেন শেখ হাসিনা, আর তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছেন টিউলিপ। এই অভিযোগকে তিনি “নোংরা রাজনীতি” আখ্যা দেন।
কিংস ক্রসের ফ্ল্যাট প্রসঙ্গে টিউলিপের বক্তব্য, ফ্ল্যাটটির আগের মালিক তার ‘গডফাদার’ এবং রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই। তবে দুই বছর আগে এক গণমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, ফ্ল্যাটটি বাবা-মায়ের কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন।
নিজের ক্রিকলউডের বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক প্রোপার্টি ডেভেলপারের বাড়িতে থাকার কারণ হিসেবে তিনি জানান, নিরাপত্তা ঝুঁকির সতর্কতা পেয়েছিলেন। কনজারভেটিভ এমপি ডেভিড অ্যামেস হত্যার পর তাকে ঠিকানা বদলের পরামর্শ দেওয়া হয়, তাই বাড়ি বদলান।
এই বিতর্কগুলো নিয়ে টিউলিপ নিজেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা-বিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন।
আগামী সোমবার (১১ আগস্ট) ঢাকার আদালতে টিউলিপসহ আরও ২০ জনের মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা। তিনি সশরীরে বা ভিডিও লিঙ্কে অংশ নেবেন কি না— জানতে চাইলে টিউলিপ বলেন, “আমি হোগো কিথ কেসির কাছ থেকে আইনি সহায়তা নিচ্ছি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।”
আদালতে হাজির হতে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি দাবি করে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সম্পর্কেও অবগত নন।
সাবেক ব্রিটিশ এমপি আরও বলেন, “মনে হচ্ছে আমি এক দুঃস্বপ্নে আটকে আছি, যেখানে আমাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, অথচ অভিযোগ কী বা এই বিচার আসলে কী নিয়ে— তা আমি জানি না।”
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনে টিউলিপের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। দোষী সাব্যস্ত হলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গ আসবে। তবে টিউলিপের দাবি, দুই দেশের মধ্যে এমন কোনো চুক্তি নেই।
তার ভাষায়, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের ধারা থামছে না। আইনজীবীরা এসব বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইছেন, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।”
চলতি বছর ড. ইউনূসের ব্রিটেন সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেছিলেন টিউলিপ। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়তে পারে এই যুক্তি দেখিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে ব্রিটিশ অপরাধ তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দুজনের প্রায় ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। এর মধ্যে একটি বাড়ি রয়েছে, যেখানে টিউলিপের মা শেখ রেহানা থাকতেন। টিউলিপের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গেও তার কোনো সম্পর্ক নেই।


















