শিক্ষকদের জন্য সুখবর, বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের ভাতা
৪০ বছরের দুঃখ ঘুচল ইবতেদায়ি শিক্ষকদের
- আপডেট সময় : ০৯:১৬:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
- / 327

এমপিওভুক্ত (বেসরকারি) শিক্ষকদের জন্য সুখবর দিয়েছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (৫ মার্চ ২০২৫) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে বিদায় এবং সি আর আবরারের যোগদান উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা জানান। এ ছাড়াও শেষ কর্মদিবসে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিবন্ধিত ১ হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদরাসার এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদবলেন, আমি সবাইকে আশ্বাস দিয়েছিলাম যে, সাধ্যমতো এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটে যতটুকু অর্থ সংকুলন করা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমরা যতদূর পারি চেষ্টা করব দাবিগুলো মেটাতে। কিন্তু ১৫ থেকে ২০ বছরের বঞ্চনা ১/২ বছরের বাজেট দিয়ে তো মেটানো যায় না। এটা বোঝানো খুব কঠিন। আজকেই বেসরকারি বেতন সরকারি বেতনের সমান করে দিতে হবে- এটা ন্যায্য দাবি বুঝলাম, কিন্তু এক বছরের বাজেট দিয়ে কিভাবে ১৫ বছরের বৈষম্য ঠিক করা যায়? কিন্তু শুরুটা করা দরকার। সেই শুরুটা আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তাদের (এমপিওভুক্ত শিক্ষক) উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা- এ বছরের ঈদুল আজহা থেকে শুরু করে আগামী বছরের বাজেট থেকে অন্তত কিছু বাড়াতে পারব, এখানেও আমি ঘোষণা দিচ্ছি না কত বাড়াব। আমি জানি সেটুকু বাজেটের মধ্যে এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটের মধ্যে প্রভিশন রাখা হচ্ছে।
শিক্ষকদের অবসর এবং কল্যাণ ভাতার জন্য একটা তহবিল তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে বিদায়ী উপদেষ্টা বলেন, এ বছরই কিছুটা তৈরি করা হয়েছে। আগামী বাজেটে আরও রাখা হবে। তবে পুরো ফান্ডটাকে টেকসই করতে হলে ১/২ বাজেটে হবে না। ভবিষ্যতে ৩/৪ বাজেটে আশা করি এটার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, অবসর এবং কল্যাণ ফান্ডের টাকা এমন একটা ব্যাংকে ইচ্ছা করে রাখা হয়েছিল যে ব্যাংকটাতে আর টাকা-পয়সা নেই। আর কিছু ফান্ড এমনিতেই চলে গেছে অন্য জায়গায়।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কল্যাণ ভাতা এবং অবসর ভাতা- এটা হলো তাদের সবচেয়ে ন্যায্য দাবি। কিন্তু তারা তো সংঘবদ্ধ না। তারা রাস্তাতেও কোনোদিন নামেনি। কিন্তু আমি তো মনে করেছিলাম তাদের ওই দাবিটাই সবার আগে মেটানো উচিত।
৪০ বছরের দুঃখ ঘুচল ইবতেদায়ি শিক্ষকদের
দীর্ঘ ৪০ বছরের দুঃখ ঘুচল ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিজের শেষ কর্মদিবসে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিবন্ধিত ১ হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদরাসার এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। এতে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষকের ভাগ্য খুলছে।
এদিন বিদায়ি বক্তব্যে তিনি বলেন, একই কারিকুলামে পড়াশোনা করিয়ে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের চরম বৈষম্য ছিল।
সেই বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে অনেক ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। এর মধ্যে অনেকটি অনানুষ্ঠানিক। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের নথি (রেজিস্ট্রেশন) আছে।
সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মতো তারা বাংলা, ইংরেজি গণিত পড়াচ্ছে। অবকাঠামো, শিক্ষক থাকার পরও তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। তাদের এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। সেই কাজ আমি করে দিয়েছি।’
মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার জন্য কাজ করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ। সারা দেশে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনাক্তকারী নম্বর আছে (ইআইআইএন) এমন ১ হাজার ৫১৯টি মাদরাসাকে এমপিও করার ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। আজ বুধবার (৫ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শেষ কর্মদিবসে সেই ফাইলে স্বাক্ষর করে গেছেন সদ্যোবিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা। সেই ফাইল এখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। তার সম্মতি মিললে মে মাসের মধ্যে শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেতে পারেন।
সশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো ইবতেদায়ি মাদরাসাকে এমপিওভুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সচিবের নেতৃত্বে শিক্ষকদের দুঃখ মোচনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ি মাদরাসাকে জাতীয়করণের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করেন শিক্ষকরা। তাদের সরানোর জন্য কয়েক দফা পুলিশ জলকামান নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এতেও শিক্ষকরা সেখান থেকে সরেননি। এরপর সরকারের পক্ষ হয়ে শাহবাগে যান কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব এস এম মাসুদুল হক। সে সময় তিনি শিক্ষকদের জানান, সারা দেশে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করবে সরকার। এ বছর থেকে আমরা এমপিওর কাজ শুরু করব।


















