লীগের পক্ষে কথা বলুক লীগ
- আপডেট সময় : ০২:৫১:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 963
স্বাস্থ্য-শিক্ষা-জনপ্রশাসন-নিরাপত্তা-অর্থ-বাণিজ্য সব খাতেই যেন এক সর্বগ্রাসী উত্তান ।সমাজ-রাজনীতির কতিপয় মানুষের ইশারার দুর্বৃত্তায়িত হচ্ছে এ রাষ্ট্র। দুর্বৃত্তায়নের এই রুদ্ধশ্বাস অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে লীগের পক্ষেই লীগ কথা বলুক, বলুক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা।সেজন্য রাজনীতির মাঠে আবারও আদর্শিক মানুষগুলোই ফিরে আসুক।আর তা না হলে দেবালয়ের পাশাপাশি মসজিদও যে পুড়বে, তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।
একটা সমাজে যখন দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়, রাষ্ট্রের প্রধান জায়গা থেকে তা উসকে দেয়া না হলেও তা প্রতিরোধের জন্য মুল জাযগায় আঘাত যদি না করা যায়, তাহলে এ সমাজে দুর্বৃত্তায়ন ক্রমশই ছড়িয়ে পড়তে থাকে।তখন সমাজ থেকে রাষ্ট্র সবখানেই এ আগুন ছড়িযে পড়ে । দাবানল শুরু হলে তা যে জ্বলতেই থাকবে অনন্তকাল, তা নয়, তবে এই অনলে যে জান-মাল ক্ষয় হয়, তা-কি আমরা ফিরে পাই?
ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে, এ এক আশার কথা।সারা দেশ তা-ই চাইছেলো, তিনি যেন ফিরে আসেন। ফিরে আসবেন, আবারও প্রান চাঞ্চল্যে তাঁর কর্যালয় ভরে উঠবে এইতো একজন নাগরিকের কামনা। কিন্তু এ কামনা কারো কোরোতো নয়ই, এবং সেজন্যই তাঁকে এবং তাঁর পিতাকে মৃত ভেবে ফেলে গিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ-র্যাব কিংবা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিভাগ যে, কত দক্ষ করিৎকর্মা, তা আবারও দেখলো দেশ। ঘোড়াগাটা উপজেলার যুবলীগ নেতাদের আটকের মধ্যি দিয়ে। যেমন দেখেছিলাম সিনহা নিহত হবার পর প্রশাসনের নড়চড়ে বসা এবং ওসি প্রদীপের মত প্রবল প্রভাবের মানুষটাকে জালে আটকানো ।কক্সবাজার থেকে ঘোড়াগাটা—ব্যাপারটা একই জায়গায় ঘোরপাক খায়—রাজনীতি। রাজনৈতিক প্রভাব কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইতহাসের বাঁকে বাঁকে রাজনীতিতে নেতাদের প্রভাব, টেন্ডার কিংবা বাণিজ্য প্রভৃতিতে এ প্রভাব কাজ করেছে। আর সেজন্যই রাস্ট্রের বড় বড় মানুষগুলো সবসময়ই আলোচনায় থেকেছেন।প্রেসিডেন্ট জিয়া ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ বলে অর্থ দিয়েই রাজনীতিটাকে তাঁর ভাষায়ই ‘কম্পলিকেটেড’ করে তোলেছিলেন। এরশাদ সরাসরি উল্লেখিত হয়েছেন অনৈতিক ও অসঙ্গতিপূর্ন অর্থের উৎস নিয়ে। খালেদা জিয়ার এরকম স্ক্যন্ডাল না থাকলেও আড়াই কোটি টাকার মামলা তাঁকে ছাড়ছে না। যদিও তাঁর ছেলে তারেক রহমান কিংবা সাঙ্গপাঙ্গদের ফুলে-ফেঁপে উঠা বিস্ময়কর, সেসময়ের জন্য এ সত্যগুলো গল্পের মতো শোনাতো। আর এসব কিছুর পেছনেই রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে।যদিও দেশে উচ্চারিত অনেক অনেক ঘটনার কাছে সে গল্পগুলো এখন ম্লান।
ওয়াহিদাকে হত্যার জন্য বাসায় গ্রীল কেটে ভেতরে ঢোকা কি শুধুই একটা চুরির ঘঠনা।যুবলীগের (বহিস্কৃত) আহবায়ক চোর হতেই পারেন না।বাংলাদেশের কোন জায়গায়ই একজন যুবলীগ আহবায়ক বহু মূল্যবান।চুরি করার মত সময় সুযোগ তাদের হাতে নেই। অসংখ্য উদাহরণের একটি হল, ফরিদপুরের দুই ভাই যুবলীগ নেতা বরকত-রুবেল মাত্র এক দশকেই কত হাজার কোটি টাকা বানিয়েছেন, তা তারা নিজেরাই জানে না।ঐ জেলার ছাত্রলীগের সভাপতিও ঐ ভাইদের সাথে ২ হাজার কোটি টাকা পাচারে যুক্ত। জেলা-উপজেলার যুব-ছাত্রলীগের নেতাদের অর্থ ব্যংক থেকে ব্যাংকক-দুবাই-মালয়েশিয়া-লন্ডন ঘোরে, সেখানে ঘোড়াগাটা যুবলীগের নেতারা চুরি করবেন সেটা কেউই বিশ্বাস করবে না। ক্যাসিনো কালচার শুরু করা যুবলীগেরই সতীর্থদের ওয়াহিদাকে হাতুড়ি পেটার কারন উদঘাঠন করতে কাজ করছে রেব-পুলিশ, জনসমক্ষে এর পেছনের খবর নিয়ে আসতে ‘সাংঘাতিক’ সাংবাদিকেরা কাজ করছে। আর তা থেকে যা যা বেরিয়ে আসছে, তা-ও সে-ই পুরোনো ব্যাপার–প্রভাব এবং বাণিজ্য।
বাংলাদেশের একটা প্রভাবশালি দৈনিকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ”ঘোড়াঘাট অঞ্চলে খাস জমি দখলের কর্মযজ্ঞ চলে। যে ক্ষমতাবান হয়, পেশিশক্তি বেশি যার সে-ই ওইসব জমি দখলে নিতে চায়। উপজেলার কলোনিপাড়ায় বিশাল অংশের খাস জমি দখলে নিতে চান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাফে খোন্দকার শাহেনশাহ। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম নিয়মকানুন দেখিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলেন। এছাড়া শাহেনশাহ উপজেলা চেয়ারম্যান। জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক সময় ইউএনওর সঙ্গে মতের অমিল ঘটে তার। তা ভালোভাবে নিতেন না তিনি। এলাকাবাসীর ধারণা, এ কারণেই হামলা। শাহেনশাহর পরিকল্পনায় ক্যাডার যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও আসাদুল ইসলাম হামলায় অংশ নেয়। তবে উদ্দেশ্য ডাকাতির ছিল না হামলাকারীদের। ধরা পড়ার পর ডাকাতির দিকে নিয়ে ঘটনা হালকা করতে চান মূল পরিকল্পনাকারী শাহেনশাহ।”
পত্রিকার রিপোর্ট হয়ত আদালতের কাছে প্রমান নয়, তবে পেছনের খবরতো তা-ই। শাহেনশাহ’র সাম্রাজ্যে উপজেলার সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটিও হেরে গেলেন। এরকম শাহেনশারাইতো বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে আছে। সেটা সরকারও এখন ধারনায় নিয়েছে। আর সেজন্যই এদের জন্য ১০ আনসার সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় রাখার নির্দেশনা এসেছে। রাষ্ট্র চালায় আওয়ামী লীগ। নিঃসন্দেহে এ রাষ্ট্র চালনায় সরকারের প্রচুর প্রশংসাও আছে আন্তর্জাতিকভাবে। কিন্তু রাষ্ট্র যারা চালান, তারাও এখন বোঝেন যে, তাদের দলের কিছু কিছু শাহনেশাদের হাতে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। এবং এদের কারনেই আজ ওয়াহিদারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে।
ঠিক সেভাবেই যদি আমরা ধরি দেখা যাবে, প্রদীপের উত্তান কিংবা তাঁর যে বেপরোয়া হয়ে উঠা, তা-ও সেই একই। সবকিছুতেই আছে কোন না কোন আশ্রয় কিংবা প্রশ্রয়। প্রদীপের আটকের পর কক্সবাজার সরব হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কিংবা প্রদীপের হাতে নিহতদের স্বজনরা প্রকাশ্যে এসেছেন । বলছেন ক্রসফায়ারের চিরাচরিত গল্পগুলো কিভাবে তৈরী করেছিলেন প্রদীপ। কিন্তু কক্সবাজার কি রাজনৈতিক প্রভাব-বলয়ের বাইরে।যে মাদক আর অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে সে অঞ্চলে কতিপয় মানুষগুলো (হুমড়া-চোমড়ারা) শত শত কোটি টাকার মলিক হচ্ছে, তাদেরকেই বা মদত দেয় কারা। প্রদীপরাতো দেশের কর্মচারী, এরা তো কর্মকর্তা নয়। কিন্তু কেন তারা এত বেপরোয়া হয়। কারন প্রভাব-বলয়ে সবাই এ রাজ্যে একেক সেক্টরে রাজা হয়ে যান। কক্সবাজারের একজন সাবেক এমপিকে গতবার মনোনয়ন পাননি একই অভিযোগে, কিন্তু প্রভাব কি শেষ হয়েছে সেই সাবেক এমপি’র । এরকম অসংখ্য প্রশ্ন আছে। কিন্তু এ প্রশ্নগুলো ভুক্তভোগীদের অন্তরের ভেতরেই গোমরে গোমরে কেঁদে উঠে। প্রকাশ হয় না কিংবা উচ্চারনের সাহস হয় না তাদের।এদের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে কি এক নিদারুন সংশয় দেখি চারদিকে। আমার উপজেলায় একজন ওসির পোষ্টিং হয়েছে। দেখলাম স্তানীয় পোর্টাল থেকে শুরু করে সমাজের দায়ীত্বশীল মানুষগুলোও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব করে দিয়েছেন এ তরুনের পোষ্টিং। বেচারা হিরো হয়েই ঢোকলো আমাদের থানায়।কামনা করি এ তরুন যেন হিরো থাকেন। আসলে রাষ্ট্রের কর্মচারীরা হিরোই হয়ে উঠার কথা। কিন্তু এরা একসময় প্রদীপ হয়ে উঠেন, রাজনীতির অদৃশ্য নাটাই-এ এরা হয়ে উঠেন ভিলেন।
বিএপি’র শাষনামলে ছাত্র-যুবকদের সন্ত্রাস কারো অজানা নয়। সেই তেজী যুবকরা আজ শক্তিহীন। যুবলীগের কতিপয় সন্ত্রাসীদের হাতে ওয়াহিদার মত প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জিম্মি থাকলে বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা শক্তি দেখাতে পারাটা দেশে ধৃষ্টতা। অতএব তারা কুচকে আছে, থাকতেই হবে। এখন বিএনপি’র বিরুদ্ধে প্রেস ব্রিফিং এ কিছু বলা চর্বিত চর্বনের মতই। এতে কোন প্রতিক্রিয়া হবার নয়। ব্যাপক নাগরিকের মাঝে এর কোন প্রভাবও পড়ে না।কার্যত রাজনীতিতে বিরোধী দল অকার্যকর। সুতরাং এখন লীগের বিরুদ্ধেই লীগ, আর লীগ মানেইতো সরকার।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা-জনপ্রশাসন-নিরাপত্তা-অর্থ-বাণিজ্য সব খাতেই যেন এক সর্বগ্রাসী উত্তান ।সমাজ-রাজনীতির কতিপয় মানুষের ইশারার দুর্বৃত্তায়িত হচ্ছে এ রাষ্ট্র। দুর্বৃত্তায়নের এই রুদ্ধশ্বাস অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে লীগের পক্ষেই লীগ কথা বলুক, বলুক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা।সেজন্য রাজনীতির মাঠে আবারও আদর্শিক মানুষগুলোই ফিরে আসুক।আর তা না হলে দেবালয়ের পাশাপাশি মসজিদও যে পুড়বে, তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম
লেখকের পূর্ববর্তী লেখা পড়তে ক্লীক করুন
https://52banglatv.com/2020/08/21888/



















