লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল
- আপডেট সময় : ০৮:১২:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 41
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার ঢাকায় পৌঁছালে পরদিনই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন। তার দাবি, আওয়ামী লীগ আমলে খালেদা জিয়া যখন দুর্নীতি মামলায় দুই বছর কারাগারে ছিলেন, তখন থেকেই তার ‘নানা রোগের সূচনা’ হয়। তিনি বলেন, “একটা অপরাধমূলক অবহেলা। সুচিকিৎসার অভাবে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।”
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বাদ জুমা নয়া পল্টন জামে মসজিদে খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় অনুষ্ঠিত বিশেষ দোয়া মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব বলেন মির্জা ফখরুল।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও চোখের নানা জটিলতায় বহু দিন ধরে ভুগছেন। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তখনকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে কারা তত্ত্বাবধানে তাকে রাখা হয়।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। শর্ত অনুযায়ী গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি ছিল না তার।
এরপর কয়েক দফা তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, বড় ধরনের কয়েকটি অস্ত্রোপচারও করা হয়।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। ওই বছরের ৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। পরে উচ্চ আদালত তাকে দুই মামলায় খালাস দেয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ফেরেন। আবার অসুস্থ হলে ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “নেত্রী সারাটা জীবন এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মনিয়োগ করেছেন। আপনারা জানেন বিগত হাসিনা সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনে তার প্রতি যে অন্যায়-নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে, দীর্ঘ ৬ বছর তাকে কারারুদ্ধ রেখে দেওয়া হয়েছে।
“এর মধ্যে দুই বছর নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। অনেকে সন্দেহ করেন, সেখান থেকেই তার এই রোগের সূচনা।”
তিনি আরও বলেন, “কোভিডের পর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়েছিলেন। সম্প্রতি আবার অসুস্থ হয়েছেন। আমরা নয়া পল্টনের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছি। সারা দেশের মানুষও এই মহান নেত্রীর সুস্থতা কামনায় দোয়া করেছেন— যেন তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করে ফিরে আসেন এবং দেশের সংকট তার নেতৃত্বে আমরা অতিক্রম করতে পারি।”
তিনি দেশবাসীকে খালেদা জিয়ার জন্য ‘কায়মনো বাক্যে’ দোয়া করার আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেয় যে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নেওয়া হবে। গত জানুয়ারির মতো এবারও কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে লন্ডনে পাঠানোর কথা ছিল।
শুক্রবার সকালেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার কথা থাকলেও ‘কারিগরি জটিলতায়’ তা সম্ভব হয়নি। সব ঠিক থাকলে রোববার তাকে লন্ডনে নেওয়া হতে পারে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
দোয়া মাহফিল শেষে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি ফ্লাই করতে পারবেন কিনা, তা ডাক্তার বা মেডিকেল বোর্ড নিশ্চিত করলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে লন্ডন নেওয়া হবে।
“চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। আশা করা হচ্ছে, আগামীকাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এলে পরশু— অর্থাৎ রোববার— তাকে লন্ডনে নেওয়া সম্ভব হবে।”
জার্মানি থেকে ‘ভাড়া করে’ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবে।
ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ শুক্রবার বিকালে জানান, “কাতার সরকার এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিচ্ছে, সেটা জার্মানি থেকে ঢাকায় আসবে।”
প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, শনিবার বিকালে বিমানটি ঢাকায় পৌঁছাতে পারে। তবে একটি সূত্র জানায়, এটি আরও দেরি হতে পারে। তিনি বলেন, “শনিবার আসার মতো প্রস্তুতি এখনো হয়নি। বিষয়টি পুরোপুরি খালেদা জিয়ার মেডিকেল টিমের ওপর নির্ভর করছে। তবে শনিবার আসছে না— সেটি নিশ্চিত।”
কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার যাওয়ার কথা থাকলেও ‘কারিগরি জটিলতা’ দেখা দেওয়ায় বিকল্প এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলও সকালে জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ‘কারিগরি ত্রুটি’র কারণেই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সব ঠিক থাকলে শনিবারই সেটি পৌঁছাতে পারে। “ম্যাডাম যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকেন এবং মেডিকেল বোর্ড অনুমতি দেয়, তাহলে ইনশাল্লাহ ৭ তারিখ রোববার ফ্লাই করবেন।”
তবে আরেক জটিলতা রয়েছে। বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, বৃহস্পতিবার মেডিকেল বোর্ড বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিলেও রাতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটে। যাত্রা বিলম্বিত হওয়ার এটিও একটি কারণ।
এখন প্রশ্ন— তার শারীরিক অবস্থায় তাকে ১৩ ঘণ্টা বিমানে রেখে লন্ডনে নেওয়া সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তার শারীরিক সক্ষমতা ও মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর।
এভারকেয়ার থেকে ধানমন্ডিতে মায়ের বাসায় গেলেন জুবাইদা রহমান
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশে কিছুটা সময় থাকার পর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ধানমন্ডিতে মায়ের বাসায় গেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে তিনি ধানমন্ডির বাসার উদ্দেশে রওনা হন। এর আগে বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেন।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় জুবাইদা রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বিজি ৩০২ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তিনি রওনা হন।
দলীয় সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার (৭ ডিসেম্বর) লন্ডনের উদ্দেশে খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতার সরকারের প্রদত্ত বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার সঙ্গে থাকবেন লন্ডন থেকে আসা জুবাইদা রহমান এবং হাসপাতালে থাকা ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান। মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও সঙ্গে থাকবেন।

















