ঢাকা ০৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

রায় ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যেতে সরকারকে শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:১৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • / 135

শেখ হাসিনা

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিবিসি তাঁর বিবৃতির কয়েকটি অংশ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রায় ঘোষণার পর প্রকাশিত পাঁচ পৃষ্ঠার বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের একটি লক্ষ্য হলো আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিস্ক্রিয় করে দেওয়া।’

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এর আগেও বিচার প্রক্রিয়াকে ‘প্রহসন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “যে কোনো ট্রাইব্যুনালে যেখানে ন্যায্যভাবে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়, সেখানে অভিযোগকারীদের মুখোমুখি হতে আমি ভয় পাই না।” তিনি আরও বলেন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন—এই অভিযোগগুলো যেন হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নেওয়া হয়। হাসিনা দাবি করেন, মানবাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ে তাঁর কাজের রেকর্ড নিয়ে তিনি “অত্যন্ত গর্বিত।”

এর আগে সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আদালত অবমাননার আলাদা একটি মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। চলতি বছরের এপ্রিলে মামলাটির বিচার শুরু হয়। বছরের শুরুতে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও রেকর্ডে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” ‘এ ধরনের বক্তব্য বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা’—উল্লেখ করে প্রসিকিউশন আদালত অবমাননার মামলা করে। ওই মামলায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে সাজা প্রদান করে।

এনডিটিভিতে হাসিনার প্রতিক্রিয়া: সব অভিযোগ ‘মিথ্যা’, আত্মপক্ষ সমর্থনের ‘সুযোগ মেলেনি’

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে দাবি করেছেন, তিনি কিংবা তার দলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ‘ন্যায্য সুযোগ’ দেওয়া হয়নি।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পর শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে এমন প্রতিক্রিয়া জানান বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এদিন শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাজা হয় পাঁচ বছরের।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও কামালের অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করে। মামলার এ দুই আসামি ৫ অগাস্টের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। ফলে তাদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।

রায়ের পর শেখ হাসিনা বিবৃতিতে বলেন, “এর মাধ্যমে একটি অনির্বাচিত সরকারের উগ্রপন্থি ব্যক্তিদের বেপরোয়া ও হত্যার মানসিকতা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”

জুলাই আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যায় উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দেওয়া, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে চার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইব্যুনাল।

সবগুলো অভিযোগ অস্বীকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলেছেন শেখ হাসিনা।

“আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা পুরোপুরি অস্বীকার করছি। গেল বছরের জুলাই ও অগাস্টের সহিংসতায় আমি দুই পক্ষের প্রতিটি মৃত্যুর জন্যই শোকাহত ছিলাম। ওই সময় আমি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা কোনো আন্দোলনকারীকে হত্যার নির্দেশ দেননি।”

বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমার অনুপস্থিতিতে যে বিচারকাজ হয়েছে, সেখানে আমার পছন্দের কোনো আইনজীবীও ছিলেন না। নামের মধ্যে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ থাকলেও আইসিটিতে আন্তর্জাতিক বলে কিছু নেই। এ আদালত নিরপেক্ষও নয়।”

বিবৃতিতে শেখ হাসিনা তিনটি অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, যেসব জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বা আইনজীবী তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, তাদের সবাইকে ‘হয় অপসারণ করা হয়েছে, নয়তো ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে’ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কেবল আওয়ামী লীগের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।”

ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ অন্যদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত সহিংসতায় জড়িত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ আদালত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূসের বিশৃঙ্খল, সহিংস এবং সমাজকে পেছনে ঠেলে দেওয়া প্রশাসনের অধীনে যে কোটি কোটি বাংলাদেশি দুঃখ–কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের বোকা বানানো যাবে না।

“তারা দেখতে পাচ্ছেন, তথাকথিত এই ট্রাইব্যুনালের বিচার কখনোই ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে করা হয়নি। এর উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে বলির পাঁঠা বানানো এবং ড. ইউনূসের ব্যর্থতা থেকে বিশ্বের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেওয়া।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সবই প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, এনজিও, এমনকি আইএমএফের মত সংস্থাগুলোর যাচাই-বাছাইও সেটাই বলছে। আমি এটাও বলতে চাই, বাংলাদেশের একজন মানুষও তাকে সমর্থন জানাননি।”

বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পান না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “যথাযথ আদালতে বিচার হতে হবে, যেখানে সব নথিপ্রমাণ নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন ও যাচাই করা যাবে।

“এ কারণেই আমি অভিযোগসমূহ হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উপস্থাপন করতে বারবার অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি।”

আরও পড়ুন : জুলাই হত্যা: ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

বিবিসিতে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার: বিচার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত ‘‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’’ ‘‘প্রহসন’’

নিউজটি শেয়ার করুন

রায় ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যেতে সরকারকে শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ০৬:১৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিবিসি তাঁর বিবৃতির কয়েকটি অংশ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রায় ঘোষণার পর প্রকাশিত পাঁচ পৃষ্ঠার বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের একটি লক্ষ্য হলো আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিস্ক্রিয় করে দেওয়া।’

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এর আগেও বিচার প্রক্রিয়াকে ‘প্রহসন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “যে কোনো ট্রাইব্যুনালে যেখানে ন্যায্যভাবে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়, সেখানে অভিযোগকারীদের মুখোমুখি হতে আমি ভয় পাই না।” তিনি আরও বলেন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন—এই অভিযোগগুলো যেন হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নেওয়া হয়। হাসিনা দাবি করেন, মানবাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ে তাঁর কাজের রেকর্ড নিয়ে তিনি “অত্যন্ত গর্বিত।”

এর আগে সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আদালত অবমাননার আলাদা একটি মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। চলতি বছরের এপ্রিলে মামলাটির বিচার শুরু হয়। বছরের শুরুতে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও রেকর্ডে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” ‘এ ধরনের বক্তব্য বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা’—উল্লেখ করে প্রসিকিউশন আদালত অবমাননার মামলা করে। ওই মামলায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে সাজা প্রদান করে।

এনডিটিভিতে হাসিনার প্রতিক্রিয়া: সব অভিযোগ ‘মিথ্যা’, আত্মপক্ষ সমর্থনের ‘সুযোগ মেলেনি’

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে দাবি করেছেন, তিনি কিংবা তার দলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ‘ন্যায্য সুযোগ’ দেওয়া হয়নি।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পর শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে এমন প্রতিক্রিয়া জানান বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এদিন শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাজা হয় পাঁচ বছরের।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও কামালের অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করে। মামলার এ দুই আসামি ৫ অগাস্টের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। ফলে তাদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।

রায়ের পর শেখ হাসিনা বিবৃতিতে বলেন, “এর মাধ্যমে একটি অনির্বাচিত সরকারের উগ্রপন্থি ব্যক্তিদের বেপরোয়া ও হত্যার মানসিকতা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”

জুলাই আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যায় উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দেওয়া, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে চার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইব্যুনাল।

সবগুলো অভিযোগ অস্বীকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলেছেন শেখ হাসিনা।

“আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা পুরোপুরি অস্বীকার করছি। গেল বছরের জুলাই ও অগাস্টের সহিংসতায় আমি দুই পক্ষের প্রতিটি মৃত্যুর জন্যই শোকাহত ছিলাম। ওই সময় আমি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা কোনো আন্দোলনকারীকে হত্যার নির্দেশ দেননি।”

বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমার অনুপস্থিতিতে যে বিচারকাজ হয়েছে, সেখানে আমার পছন্দের কোনো আইনজীবীও ছিলেন না। নামের মধ্যে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ থাকলেও আইসিটিতে আন্তর্জাতিক বলে কিছু নেই। এ আদালত নিরপেক্ষও নয়।”

বিবৃতিতে শেখ হাসিনা তিনটি অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, যেসব জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বা আইনজীবী তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, তাদের সবাইকে ‘হয় অপসারণ করা হয়েছে, নয়তো ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে’ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কেবল আওয়ামী লীগের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।”

ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ অন্যদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত সহিংসতায় জড়িত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ আদালত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূসের বিশৃঙ্খল, সহিংস এবং সমাজকে পেছনে ঠেলে দেওয়া প্রশাসনের অধীনে যে কোটি কোটি বাংলাদেশি দুঃখ–কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের বোকা বানানো যাবে না।

“তারা দেখতে পাচ্ছেন, তথাকথিত এই ট্রাইব্যুনালের বিচার কখনোই ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে করা হয়নি। এর উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে বলির পাঁঠা বানানো এবং ড. ইউনূসের ব্যর্থতা থেকে বিশ্বের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেওয়া।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সবই প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, এনজিও, এমনকি আইএমএফের মত সংস্থাগুলোর যাচাই-বাছাইও সেটাই বলছে। আমি এটাও বলতে চাই, বাংলাদেশের একজন মানুষও তাকে সমর্থন জানাননি।”

বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পান না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “যথাযথ আদালতে বিচার হতে হবে, যেখানে সব নথিপ্রমাণ নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন ও যাচাই করা যাবে।

“এ কারণেই আমি অভিযোগসমূহ হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উপস্থাপন করতে বারবার অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি।”

আরও পড়ুন : জুলাই হত্যা: ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

বিবিসিতে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার: বিচার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত ‘‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’’ ‘‘প্রহসন’’