ঢাকা ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

যোদ্ধা-বীরাঙ্গনা নূরজাহান বেগম

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০১৯
  • / 1507
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যে যুদ্ধ করে আর যে যুদ্ধের বয়ান তৈরি করে- এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরের প্রজন্ম, তারা তৈরি করা বয়ান দিয়েই তো যুদ্ধ, যোদ্ধা, ইতিহাসকে চিনেছি। তাহলে এই ফারাকটা ভরাটের পথ কী?

ঠিক এই জায়গাটা থেকেই একসময় ভাবি, যোদ্ধার প্রকৃত বয়ানটাই বোধহয় সেই ফারাকটা ভরাট করে দিতে পারে। একসময় যোদ্ধার বয়ান শোনা শুরু করি। সত্যিকার অর্থেই তখন অন্য এক যুদ্ধকে প্রত্যক্ষ করি যোদ্ধার চোখে। সেই ঘোর আজও কাটেনি।

কিন্তু যোদ্ধাও তো মানুষ, সময়ের ব্যবধানে সেও নিজেকে যে পাল্টে ফেলেনি- তাই বা কে বলবে! তবু আজও মুক্তিযোদ্ধার, বীরাঙ্গণার, শরণার্থীর গল্প শুনি ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথার মতো সরলতা, মুগ্ধতা আর শিহরণ নিয়েই।

সেই অচেনা, অজানা, অখ্যাত যোদ্ধা, যারা মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপ দিয়েছিল, তাদের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এই উত্তাল মার্চের দিনগুলোতে শুনাতে চাই ৫২বাংলায়।

নূরজাহান বেগম

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ছনকান্দা গ্রামের বীরাঙ্গনা নূরজাহান বেগমকে দুইবার মরতে হয়েছে। প্রথমবার যখন পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। আর দ্বিতীয়বার পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নির্যাতিত হওয়ার কারণে তাঁর স্বামী তাঁকে ফেলে চলে যায়, তখন। কিন্তু নূরজাহান এ দুটি কারণের কোনোটির জন্যই দায়ী নয়। তিনি এ দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের `বলি`।

পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় হাইস্কুলে এসে উঠেছে। গ্রাম থেকে নারী-পুরুষদের ধরে সেখানে আনা হচ্ছে। নূরজাহানের কোলে তখন একটি মেয়ে। তিনি তখন সন্তানসম্ভবা। নূরজাহানকে হাইস্কুলের একটি কক্ষে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়।

সেখানে শুধু নূরজাহান একা না। আরো অনেক মানুষকে ধরে এনেছে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। কাউকে কাউকে নির্যাতনও করা হয়েছে। চোখ বাঁধা অবস্থায় অনেককে আনা হয়েছে। নূরজাহানের কোলের মেয়েটি অনবরত কেঁদে চলেছে। সেই ক্যাম্পেই নির্যাতনের শিকার হন নূরজাহান। পাকিস্তানি হানাদারদের নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে কোনোভাবে ক্যাম্প থেকে বাড়ি ফিরে আসেন নূরজাহান। সেই কলঙ্ক আজো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে।

যুদ্ধ নূরজাহানের জীবনটাকেই অভিশপ্ত করে দিয়েছে। তিনি সমাজ, রাষ্ট্র কারো কাছেই আর কোনো স্বীকৃতি চান না।

(২০১৫ সালের জুন মাসে একদিন বিকেলে নূরজাহানের একমাত্র ছেলের সঙ্গে ছনকান্দা বাজারে আলাপ হয়।)

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যোদ্ধা-বীরাঙ্গনা নূরজাহান বেগম

আপডেট সময় : ০৯:০৪:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০১৯

যে যুদ্ধ করে আর যে যুদ্ধের বয়ান তৈরি করে- এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরের প্রজন্ম, তারা তৈরি করা বয়ান দিয়েই তো যুদ্ধ, যোদ্ধা, ইতিহাসকে চিনেছি। তাহলে এই ফারাকটা ভরাটের পথ কী?

ঠিক এই জায়গাটা থেকেই একসময় ভাবি, যোদ্ধার প্রকৃত বয়ানটাই বোধহয় সেই ফারাকটা ভরাট করে দিতে পারে। একসময় যোদ্ধার বয়ান শোনা শুরু করি। সত্যিকার অর্থেই তখন অন্য এক যুদ্ধকে প্রত্যক্ষ করি যোদ্ধার চোখে। সেই ঘোর আজও কাটেনি।

কিন্তু যোদ্ধাও তো মানুষ, সময়ের ব্যবধানে সেও নিজেকে যে পাল্টে ফেলেনি- তাই বা কে বলবে! তবু আজও মুক্তিযোদ্ধার, বীরাঙ্গণার, শরণার্থীর গল্প শুনি ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথার মতো সরলতা, মুগ্ধতা আর শিহরণ নিয়েই।

সেই অচেনা, অজানা, অখ্যাত যোদ্ধা, যারা মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপ দিয়েছিল, তাদের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এই উত্তাল মার্চের দিনগুলোতে শুনাতে চাই ৫২বাংলায়।

নূরজাহান বেগম

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ছনকান্দা গ্রামের বীরাঙ্গনা নূরজাহান বেগমকে দুইবার মরতে হয়েছে। প্রথমবার যখন পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। আর দ্বিতীয়বার পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নির্যাতিত হওয়ার কারণে তাঁর স্বামী তাঁকে ফেলে চলে যায়, তখন। কিন্তু নূরজাহান এ দুটি কারণের কোনোটির জন্যই দায়ী নয়। তিনি এ দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের `বলি`।

পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় হাইস্কুলে এসে উঠেছে। গ্রাম থেকে নারী-পুরুষদের ধরে সেখানে আনা হচ্ছে। নূরজাহানের কোলে তখন একটি মেয়ে। তিনি তখন সন্তানসম্ভবা। নূরজাহানকে হাইস্কুলের একটি কক্ষে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়।

সেখানে শুধু নূরজাহান একা না। আরো অনেক মানুষকে ধরে এনেছে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। কাউকে কাউকে নির্যাতনও করা হয়েছে। চোখ বাঁধা অবস্থায় অনেককে আনা হয়েছে। নূরজাহানের কোলের মেয়েটি অনবরত কেঁদে চলেছে। সেই ক্যাম্পেই নির্যাতনের শিকার হন নূরজাহান। পাকিস্তানি হানাদারদের নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে কোনোভাবে ক্যাম্প থেকে বাড়ি ফিরে আসেন নূরজাহান। সেই কলঙ্ক আজো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে।

যুদ্ধ নূরজাহানের জীবনটাকেই অভিশপ্ত করে দিয়েছে। তিনি সমাজ, রাষ্ট্র কারো কাছেই আর কোনো স্বীকৃতি চান না।

(২০১৫ সালের জুন মাসে একদিন বিকেলে নূরজাহানের একমাত্র ছেলের সঙ্গে ছনকান্দা বাজারে আলাপ হয়।)