যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্সে ধস, শীর্ষে আবার সৌদি আরব
- আপডেট সময় : ১১:৩৪:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 230
গত অর্থবছরে প্রবাসীরা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশে পাঠিয়েছিলেন ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৩ কোটি) ডলার রেমিটেন্স, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে—মোট প্রবাসী আয়ের ১৬ শতাংশই এসেছিল দেশটি থেকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ৪৭৩ কোটি ৩১ লাখ (৪.৭৩ বিলিয়ন) ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। তারও আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শীর্ষে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যেখান থেকে এসেছিল ৪৬০ কোটি (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি বদলেছে। যুক্তরাষ্ট্র নেমে এসেছে পঞ্চম স্থানে, আমিরাত তৃতীয়তে। আবারও রেমিটেন্সের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে সৌদি আরব।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা শুরু হয় ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে। তখন প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন মাত্র ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। বর্তমানে সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজার গুণের বেশি, ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও ওপরে।
গত ৫০ বছরে দুটি অর্থবছর (২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫) ছাড়া সব সময়ই সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হওয়ায় একসময় ‘রেমিটেন্স মানেই সৌদি’ কথাটিই প্রচলিত ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বুধবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৪৯০ কোটি (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮২ কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে সৌদি আরব থেকে, যা মোট রেমিটেন্সের ১৭ শতাংশ।
এই সময়ে দ্বিতীয় স্থানে যুক্তরাজ্য (৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলার), তৃতীয়তে আমিরাত (৫৪ কোটি ৯৮ লাখ), চতুর্থতে মালয়েশিয়া (৫৪ কোটি ৬৪ লাখ) এবং পঞ্চম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র (৪৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার)।
মাসওয়ারি হিসাবে, জুলাইয়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৪২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, আগস্টে এসেছে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জুলাইয়ে এসেছে ২২ কোটি ২২ লাখ এবং আগস্টে ২৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
শুধু এই দুই মাস নয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ তিন মাসেও (এপ্রিল, মে ও জুন) সৌদি আরব থেকে সর্বাধিক রেমিটেন্স এসেছে। জুন মাসে সৌদি থেকে ৪৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাঠানো হয়, যেখানে যুক্তরাজ্য থেকে আসে ৩৬ কোটি ২০ লাখ, মালয়েশিয়া থেকে ৩৫ কোটি ৮৮ লাখ, আমিরাত থেকে ৩২ কোটি ৩৯ লাখ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৩ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
অথচ ওই বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যেমন, মার্চ মাসেই দেশটি থেকে আসে ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার, আর সৌদি থেকে আসে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদি আরব অনেক পেছনে পড়ে গিয়েছিল। সে বছর আমিরাত থেকে এসেছিল ৪৬০ কোটি ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯৬ কোটি ডলার, আর সৌদি থেকে এসেছিল ২৭৪ কোটি ডলার।
তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ তিন মাসে সৌদি আরব আবার শীর্ষে ফিরে আসে। আরব আমিরাত থেকে আসে ৪১৬ কোটি ৩৯ লাখ (৪.১৬ বিলিয়ন) ডলার, সৌদি থেকে ৪২৬ কোটি ৯০ লাখ (৪.২৬ বিলিয়ন) ডলার। তবু পুরো অর্থবছরে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র—৪৭৩ কোটি ৩০ লাখ (৪.৭৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়ে।
একই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২৯৭ কোটি ৭৩ লাখ (২.৯৮ বিলিয়ন) ডলার এবং মালয়েশিয়া থেকে ২৬৫ কোটি ৬৯ লাখ (২.৬৫ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অবস্থান করেন, সেখান থেকেই বেশি রেমিটেন্স আসবে—এটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই হয়ে আসছিল। কিছু সময় পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সৌদি আরব পেছনে ছিল, এখন আবার তা ঠিক হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে যে দেশের রেমিটেন্স, সেটি ওই দেশের আয়ের হিসাবেই দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই কারণে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।”



















