ঢাকা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

যুক্তরাজ্য আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ আর নেই

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
  • / 298
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২৩ আগস্ট) লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তাঁর জানাজার নামাজের সময়সূচি পরবর্তীতে জানানো হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সুলতান মাহমুদ শরীফের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৬ শে জানুয়ারী বরিশাল জেলার কতোয়ালী থানার চানপুরা ইউনিয়নের সারুখালী গ্রামে। ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ মেয়ে, নাতি নাতনী অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
সুলতান মাহমুদ শরীফ স্কুল জীবনেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ইকবাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ৬২-৬৩ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি আন্দোলন, শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন সুলতান শরীফ।

১৯৬৩ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় লন্ডনে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে সামনের কাতারে ছিলেন সুলতান মাহমুদ শরীফ । ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে আরও অনেকের সঙ্গে তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে গিয়েও স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আমৃত্যু। বিলেতে বাঙালি কমিউনটির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি একজন দিক নির্দেশক ও কান্ডারি হিসেবে আলোর পথ দেখিয়েছেন।
দেশ ও জাতির প্রতিটি আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তৎকালীন পাকিস্তান যুব ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ শরীফ ছয় দফা সম্পর্কিত দলিল ছাপিয়ে সমগ্র যুক্তরাজ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৮ সালে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাঙালিরা পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেন। যুব ফেডারেশনের উদ্যোগে সে সময় লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখে কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয় এবং পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও করা হয়। যুব ফেডারেশনের তখনকার প্রেসিডেন্ট সুলতান শরীফের নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ৭/৮ হাজার বাঙালি হাইড পার্ক থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনে গিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ওইদিন সুলতান শরীফ হাইকমিশনে ঢুকে পড়েন এবং হাইকমিশন থেকে পাকিস্তানী পতাকা সরিয়ে ফেলে একটি কালো পতাকা উত্তোলণ করেন। ১৯৬৯ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারী লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকার প্রথমপৃষ্ঠায় পাকিস্তান হাইকমিশনের উপরে সুলতান শরীফের কালো পতাকা উত্তোলণের ছবিটি প্রকাশ করে ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় লন্ডন থেকে প্রবাসী বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু কে মুক্ত করার জন্য কিউসি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। স্যার টমাস কিউসি উইলিয়ামকে পাঠাতে সুলতান মাহমুদ শরীফ ও তার স্ত্রী আইরিশ বংশোদ্ভূত ব্যারিষ্টার নোরা শরীফের ভূমিকা ছিলো অনন্য।

আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করার পর ১৯৬৯ সালের ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু লন্ডনে এলে সুলতান শরীফ বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন সার্বক্ষণিক। এর কিছুদিন পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও লন্ডন আওয়ামী লীগ গঠিত হলে সুলতান মাহমুদ শরীফ লন্ডন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে জেনারেল ইয়াহিয়া খান আমেরিকা যাওয়ার পথে লন্ডনের ক্লারিজস হোটেলে অবস্থান করলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লন্ডন আওয়ামী লীগ ক্লারিজ হোটেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান দেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুলতান মাহমুদ শরীফ বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা হলে শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগের চেয়ারম্যান হন, সুলতান শরীফ সেই কমিটির সেক্রেটারিয়েটের সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুলতান মাহমুদ শরীফকে স্নেহ করতেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পান।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাজ্য আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ আর নেই

আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২৩ আগস্ট) লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তাঁর জানাজার নামাজের সময়সূচি পরবর্তীতে জানানো হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সুলতান মাহমুদ শরীফের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৬ শে জানুয়ারী বরিশাল জেলার কতোয়ালী থানার চানপুরা ইউনিয়নের সারুখালী গ্রামে। ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ মেয়ে, নাতি নাতনী অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
সুলতান মাহমুদ শরীফ স্কুল জীবনেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ইকবাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ৬২-৬৩ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি আন্দোলন, শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন সুলতান শরীফ।

১৯৬৩ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় লন্ডনে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে সামনের কাতারে ছিলেন সুলতান মাহমুদ শরীফ । ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে আরও অনেকের সঙ্গে তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে গিয়েও স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আমৃত্যু। বিলেতে বাঙালি কমিউনটির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি একজন দিক নির্দেশক ও কান্ডারি হিসেবে আলোর পথ দেখিয়েছেন।
দেশ ও জাতির প্রতিটি আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তৎকালীন পাকিস্তান যুব ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ শরীফ ছয় দফা সম্পর্কিত দলিল ছাপিয়ে সমগ্র যুক্তরাজ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৮ সালে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাঙালিরা পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেন। যুব ফেডারেশনের উদ্যোগে সে সময় লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখে কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয় এবং পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও করা হয়। যুব ফেডারেশনের তখনকার প্রেসিডেন্ট সুলতান শরীফের নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ৭/৮ হাজার বাঙালি হাইড পার্ক থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনে গিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ওইদিন সুলতান শরীফ হাইকমিশনে ঢুকে পড়েন এবং হাইকমিশন থেকে পাকিস্তানী পতাকা সরিয়ে ফেলে একটি কালো পতাকা উত্তোলণ করেন। ১৯৬৯ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারী লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকার প্রথমপৃষ্ঠায় পাকিস্তান হাইকমিশনের উপরে সুলতান শরীফের কালো পতাকা উত্তোলণের ছবিটি প্রকাশ করে ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় লন্ডন থেকে প্রবাসী বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু কে মুক্ত করার জন্য কিউসি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। স্যার টমাস কিউসি উইলিয়ামকে পাঠাতে সুলতান মাহমুদ শরীফ ও তার স্ত্রী আইরিশ বংশোদ্ভূত ব্যারিষ্টার নোরা শরীফের ভূমিকা ছিলো অনন্য।

আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করার পর ১৯৬৯ সালের ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু লন্ডনে এলে সুলতান শরীফ বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন সার্বক্ষণিক। এর কিছুদিন পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও লন্ডন আওয়ামী লীগ গঠিত হলে সুলতান মাহমুদ শরীফ লন্ডন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে জেনারেল ইয়াহিয়া খান আমেরিকা যাওয়ার পথে লন্ডনের ক্লারিজস হোটেলে অবস্থান করলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লন্ডন আওয়ামী লীগ ক্লারিজ হোটেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান দেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুলতান মাহমুদ শরীফ বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা হলে শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগের চেয়ারম্যান হন, সুলতান শরীফ সেই কমিটির সেক্রেটারিয়েটের সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুলতান মাহমুদ শরীফকে স্নেহ করতেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পান।