ঢাকা ০৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়া ‘বিমান ভ্রমণে সক্ষম নন’, মত মেডিকেল বোর্ডের শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন ভারতে কতদিন থাকবেন, জানালেন জয়শঙ্কর আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম কি মুছে যাচ্ছে?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:৪৯:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • / 221
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অন্তর্বর্তী সরকারের বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা প্রণয়নের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় চার নেতার নাম তালিকায় থাকবে কি না—তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন ২০২৫) রাত ১১টার দিকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

তবে এই দাবি নাকচ করে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়েই তালিকায় আছেন।

স্বাধীনতার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে সব সরকারের আমলেই বিতর্ক ছিল।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা স্পষ্ট করে তালিকা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালে সংজ্ঞা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর তার ভিত্তিতে ২০২২ সালে প্রণীত হয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ফ্যাসিবাদের প্রতীক’ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলার মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার উদ্যোগ নেয়।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের পর মঙ্গলবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি সংশোধন করা হয়।

সংশোধিত আইনে কোথায় অস্পষ্টতা

সংশোধিত আইনের প্রস্তাবনায় বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আগে লেখা ছিল—“জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে”। এটি বাদ দেওয়ায় সংশোধিত আইনে বঙ্গবন্ধুর নাম আর নেই। অথচ ২০২২ সালের আইনে বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি স্পষ্টভাবে ছিল।

নতুন সংজ্ঞায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মূলত সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে—
“যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থেকে হানাদার ও দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেছেন, সেই সব বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও স্বীকৃত বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।”

এই সংজ্ঞা অনুযায়ী মুজিবনগর সরকারের দায়িত্ব পালনকারীরাও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন বলে ধরে নেওয়া যায়।

আগের আইনে স্পষ্ট লেখা ছিল—মুজিবনগর সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালনকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। তবে নতুন আইনে বলা হয়েছে—“প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকারের স্বীকৃত বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।” সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও তার মধ্যে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তাদের রাখা বিষয়টি অস্পষ্টতা তৈরি করেছে।

আগে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলে কিছু ছিল না। এবার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা নামক একটি শ্রেণি যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তারাও আছেন।

সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে—
“বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ভেতরে বা প্রবাসে থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগানো এবং মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করতে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন, তারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।”

সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার পাঁচটি শ্রেণির মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা/কর্মচারী/দূত ও তাদের নিযুক্ত চিকিৎসক, নার্স বা সহকারী।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে যুক্ত এমএনএ বা এমপিএ, যারা পরে গণপরিষদ সদস্য হয়েছেন, তারাও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

আগের আইনে এদের সবাইকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। নতুন আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, তারা সেই স্বীকৃতি হারাচ্ছেন।

তদ্রূপ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়, মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা সাংবাদিক ও প্রবাসে থেকে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধা নয়, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন, এটি স্পষ্টভাবে আইনে উল্লেখ আছে।

তবে বীরাঙ্গনা এবং মুক্তিযুদ্ধকালে ফিল্ড হাসপাতালে সেবা দেওয়া চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল আছে, এটিও আইনে পরিষ্কার।

কেবল মুজিবনগর সরকারের কারা মুক্তিযোদ্ধা, কারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হবেন—তা স্পষ্ট নয়।

যা বলছেন ফারুক ই আজম

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুজিবনগর সরকারের যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ফারুক ই আজম বলেন, মুজিবনগর সরকারে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। তবে সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হবেন। যারা সশস্ত্রভাবে যুদ্ধ করেছেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি আরও বলেন, “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী ও কূটনীতিকরাও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। সহযোগী মানে এ নয় যে তাঁদের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।”

ফারুক ই আজম বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা স্পষ্টভাবে জামুকা আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে, তারপরও এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৭২ সালের সংজ্ঞাই কার্যকর হয়েছে। পরে ২০১৮ ও ২০২২ সালে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা—দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে। জাতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধ না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারত না। মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় গৌরব আমাদের ইতিহাসে আর কিছু নেই।”


নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম কি মুছে যাচ্ছে?

আপডেট সময় : ১০:৪৯:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা প্রণয়নের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় চার নেতার নাম তালিকায় থাকবে কি না—তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন ২০২৫) রাত ১১টার দিকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

তবে এই দাবি নাকচ করে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়েই তালিকায় আছেন।

স্বাধীনতার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে সব সরকারের আমলেই বিতর্ক ছিল।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা স্পষ্ট করে তালিকা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালে সংজ্ঞা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর তার ভিত্তিতে ২০২২ সালে প্রণীত হয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ফ্যাসিবাদের প্রতীক’ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলার মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার উদ্যোগ নেয়।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের পর মঙ্গলবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি সংশোধন করা হয়।

সংশোধিত আইনে কোথায় অস্পষ্টতা

সংশোধিত আইনের প্রস্তাবনায় বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আগে লেখা ছিল—“জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে”। এটি বাদ দেওয়ায় সংশোধিত আইনে বঙ্গবন্ধুর নাম আর নেই। অথচ ২০২২ সালের আইনে বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি স্পষ্টভাবে ছিল।

নতুন সংজ্ঞায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মূলত সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে—
“যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থেকে হানাদার ও দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেছেন, সেই সব বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও স্বীকৃত বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।”

এই সংজ্ঞা অনুযায়ী মুজিবনগর সরকারের দায়িত্ব পালনকারীরাও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন বলে ধরে নেওয়া যায়।

আগের আইনে স্পষ্ট লেখা ছিল—মুজিবনগর সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালনকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। তবে নতুন আইনে বলা হয়েছে—“প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকারের স্বীকৃত বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।” সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও তার মধ্যে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তাদের রাখা বিষয়টি অস্পষ্টতা তৈরি করেছে।

আগে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলে কিছু ছিল না। এবার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা নামক একটি শ্রেণি যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তারাও আছেন।

সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে—
“বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ভেতরে বা প্রবাসে থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগানো এবং মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করতে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন, তারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।”

সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার পাঁচটি শ্রেণির মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা/কর্মচারী/দূত ও তাদের নিযুক্ত চিকিৎসক, নার্স বা সহকারী।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে যুক্ত এমএনএ বা এমপিএ, যারা পরে গণপরিষদ সদস্য হয়েছেন, তারাও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

আগের আইনে এদের সবাইকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। নতুন আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, তারা সেই স্বীকৃতি হারাচ্ছেন।

তদ্রূপ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়, মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা সাংবাদিক ও প্রবাসে থেকে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধা নয়, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন, এটি স্পষ্টভাবে আইনে উল্লেখ আছে।

তবে বীরাঙ্গনা এবং মুক্তিযুদ্ধকালে ফিল্ড হাসপাতালে সেবা দেওয়া চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল আছে, এটিও আইনে পরিষ্কার।

কেবল মুজিবনগর সরকারের কারা মুক্তিযোদ্ধা, কারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হবেন—তা স্পষ্ট নয়।

যা বলছেন ফারুক ই আজম

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুজিবনগর সরকারের যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ফারুক ই আজম বলেন, মুজিবনগর সরকারে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। তবে সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হবেন। যারা সশস্ত্রভাবে যুদ্ধ করেছেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি আরও বলেন, “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী ও কূটনীতিকরাও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। সহযোগী মানে এ নয় যে তাঁদের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।”

ফারুক ই আজম বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা স্পষ্টভাবে জামুকা আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে, তারপরও এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৭২ সালের সংজ্ঞাই কার্যকর হয়েছে। পরে ২০১৮ ও ২০২২ সালে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা—দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে। জাতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধ না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারত না। মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় গৌরব আমাদের ইতিহাসে আর কিছু নেই।”