ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

‘মাকে খুশি করতে’ শিক্ষার্থী না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ছেলে!

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 499
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে চার মাস ক্লাসসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার পর এক ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি ২০২৫) অন্য শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে জানান বিষয়টি। পরে তাকে প্রক্টর দফতরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ওই ভুয়া শিক্ষার্থী ছদ্মবেশে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করছিলেন। পাশাপাশি, খেলাধুলা ও জাতীয় দিবস উদযাপনসহ বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছেন এতদিন।
ওই ব্যক্তির ফেসবুক আইডি ঘুরে দেখা গেছে, নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবি রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন। তার ফ্রেন্ডলিস্টেও আইন বিভাগের অনেকে যুক্ত রয়েছেন।

এই বিষয়ে আইন বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, তার ব্যাচমেটদের সন্দেহ হলে তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তখন বিষয়টি সামনে আসে। এমনকি তার অভিভাবক হিসেবে যাদেরকে ডেকেছিল, তারাও ভুয়া। এরপর বিভাগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে তাকে ও তার ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। গত চার মাসে বিভাগের সবকিছুতে সে উপস্থিত ছিল- একদম প্রফেশনাল স্পাই এজেন্টের মতো। সে কোনও গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কি না তদন্ত করা হোক।

তিনি আরও বলেন, একজন চার মাস ধরে ক্লাস করেছে, প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, অথচ আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইডেন্টিফাই করতে পারেনি- এটা চরম ব্যর্থতা।
ইমতিয়াজ নাহিদ নামে ৪২ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ওই ব্যাচে এর আগেও একটা ফ্রড ধরা পড়েছিল। তার নাম ছিল আনিকা। সবাই মিলে তাকে ধরার চেষ্টা করলে পালিয়ে যায়।

আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) শ্রেণি প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক মাসের মতো রোল কল করা হতো না। ওই সময় ওই ব্যক্তিকে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেত না। তবে বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করতো নিয়মিত। আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।

রাবির প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পায়নি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘মাকে খুশি করতে’ শিক্ষার্থী না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ছেলে!

আপডেট সময় : ০৪:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে চার মাস ক্লাসসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার পর এক ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি ২০২৫) অন্য শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে জানান বিষয়টি। পরে তাকে প্রক্টর দফতরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ওই ভুয়া শিক্ষার্থী ছদ্মবেশে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করছিলেন। পাশাপাশি, খেলাধুলা ও জাতীয় দিবস উদযাপনসহ বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছেন এতদিন।
ওই ব্যক্তির ফেসবুক আইডি ঘুরে দেখা গেছে, নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবি রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন। তার ফ্রেন্ডলিস্টেও আইন বিভাগের অনেকে যুক্ত রয়েছেন।

এই বিষয়ে আইন বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, তার ব্যাচমেটদের সন্দেহ হলে তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তখন বিষয়টি সামনে আসে। এমনকি তার অভিভাবক হিসেবে যাদেরকে ডেকেছিল, তারাও ভুয়া। এরপর বিভাগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে তাকে ও তার ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। গত চার মাসে বিভাগের সবকিছুতে সে উপস্থিত ছিল- একদম প্রফেশনাল স্পাই এজেন্টের মতো। সে কোনও গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কি না তদন্ত করা হোক।

তিনি আরও বলেন, একজন চার মাস ধরে ক্লাস করেছে, প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, অথচ আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইডেন্টিফাই করতে পারেনি- এটা চরম ব্যর্থতা।
ইমতিয়াজ নাহিদ নামে ৪২ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ওই ব্যাচে এর আগেও একটা ফ্রড ধরা পড়েছিল। তার নাম ছিল আনিকা। সবাই মিলে তাকে ধরার চেষ্টা করলে পালিয়ে যায়।

আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) শ্রেণি প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক মাসের মতো রোল কল করা হতো না। ওই সময় ওই ব্যক্তিকে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেত না। তবে বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করতো নিয়মিত। আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।

রাবির প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পায়নি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।