মাইলস্টোন স্কুলে জঙ্গী বিমান বিধ্বস্ত : নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
- আপডেট সময় : ১১:৪৮:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
- / 222

শুধু নিহতের ক্ষেত্রেই নয়, আহতের তথ্য নিয়েও দুই রকম তথ্য আসছে। নিখোঁজদের বিষয়ে কোনও তথ্যই দেওয়া হচ্ছে না।
এসব দেখে ক্ষোভ জানাচ্ছেন অনেকে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান তথ্য বিভ্রাটের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, এই বিভ্রান্তি নিরসনের চেষ্টা করছেন তারা।
বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান সোমবার দুপুরে বিধ্বস্ত হয়ে ঢাকার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের একটি ভবনের ওপর পড়ে।
সোমবারই হতাহতের তথ্যে গড়মিল দেখা গিয়েছিল। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে হতাহতের যে তথ্য দেওয়া হচ্ছিল, তা মিলছিল না জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক সায়েদুল ইসলামের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে।
মঙ্গলবার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা নিহতের প্রকৃত তথ্য প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভে নামে; তারা দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সি আর আবরারকে স্কুলের ভেতরে অবরুদ্ধও করে।
তার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুক পাতায় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে বিভিন্ন মহল থেকে হতাহতের তথ্য গোপন করা হচ্ছে দাবি করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই যে, এ দাবি সঠিক নয়।
“এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহত-নিহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী প্রশাসন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করছে।”Culinary workshops on Bangladeshi cuisine
এরপর মঙ্গলবার সকাল ৮টায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ২৫ জনই শিশু। ২০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হলেও ছয়জনের দেহ এতটাই পুড়েছে যে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
আহতদের মধ্যে ৭৮ জন এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে জানান তিনি।
তার কয়েক ঘণ্টার পর আইএসপিআর হতাহতের সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের বার্তা পাঠায়। সেখানে নিহতের সংখ্যা ৩১ এবং আহতের সংখ্যা ১৬৫ জন বলে জানানো হয়।
আগের দিন আহতের সংখ্যা ১৬৪ জন বলে জানানো হয়েছিল আইএসপিআর থেকে।
এরপর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর বার্ন ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, নিহতের সংখ্যা ২৯। এই মুহূর্তে সব হাসপাতাল মিলিয়ে ভর্তি রয়েছে ৬৯ জন।
তিন বার সময় পরিবর্তন করে বিকাল ৩টায় অনুিষ্ঠত এই সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমও ছিলেন।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডা. সায়েদুর বলেন, “আমরা এখানে আসার আগে আইএসপিআরের সঙ্গে কথা বলেছি। আইএসপিআরের তথ্যে যে একটি হাসপাতাল যুক্ত হয়েছে, সেটা হচ্ছে উত্তরার লুবানা হাসপাতাল।
“আমরা তাদের (লুবানা হাসপাতাল) সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তাদের হিসাবে, তাদের রেজিস্ট্রিতে কোথাও কোনও ডেথ নেই। কিন্তু তারা মুখে বলছেন যে সেখানে দুজন শিশু ব্রট ডেড ছিল, তাদেরকে তাদের অভিভাবকরা নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওই দুই শিশু পরবর্তীতে কোনও হাসপাতালে আসেনি বিধায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় আসেনি বলে তাদের রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে না।”ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরার লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ঢাকা সিএমএইচে ১৬ জন, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৯ জন, ঢাকা মেডিকেলে ১ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে এবং উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ জনের লাশ রয়েছে।
লুবানা হাসপাতালে যাওয়া দুজনের লাশের তথ্য পাননি জানিয়ে ডা. সায়েদুর বলেন, “আমরা আশা করি, যে দুজন শিশুকে লুবানা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই অভিভাবকদের অনুরোধ করছি তারা যেন নাম দুটি তালিকাতে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য আমাদের সাহায্য করেন।”
উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে একজনের মৃত্যুর কথা আইএসপিআর জানিয়েছে, তা নিয়েও তথ্যের পার্থক্য থাকার কথা জানান ডা. সায়েদুর।
“সেখান (উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল) থেকে একজনের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে সিএমএইচে। এই মৃতদেহটি নিয়ে আমাদের সঙ্গে আইএসপিআরের তথ্যের পার্থক্য হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এখানে (সংবাদ সম্মেলনে) আসার আগে নিশ্চিত হয়েছি সিএমএইচে ১৫ জনেরই মৃতদেহ আছে; যদিও আইএসপিআরের তথ্যে ১৬ জন বলা আছে।”
সিএমএইচে একটি লাশের তথ্যে গড়মিল থাকলে তিনটির হিসাবে পার্থক্য হওয়ার কথা; কিন্তু ডা. সায়েদুরের তথ্যে গড়মিল হচ্ছে দুজনের। আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেওয়া তথ্যে মৃতের সংখ্যা ২৮ বলা হচ্ছে। ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন
তাহলে মোট মৃতের সংখ্যা কত- এই প্রশ্নে ডা. সায়েদুর বলেন, “আমাদের দিক থেকে মৃতের সংখ্যা বলব ২৯ জন। ১৫ জন সিএমএইচে, বার্নে ১০ জন, উত্তরাতে একজন আর শনাক্ত হয়নি এখনও ছয়জন।”
বিভ্রান্তি নিরসনে সময় চেয়ে তিনি বলেন, “আমাদের একটু সময় লাগবে। তথ্যের পার্থক্য দূর হতে হয়ত একটু সময় লাগবে। যেহেতু মৃতদেহ এবং দেহাবশেষ নিয়ে কিছু পার্থক্য আছে। আশা করছি আজ রাতের ভেতরে সেটা দূর হয়ে যাবে।”
আহতের সংখ্যায় গরমিলের বিষয়ে তিনি বলেন, “এই সংখ্যাটা একেবারেই যে সবসময় একই থাকবে, বিষয়টা তা নয়। কোনও কোনও রোগীকে বাসায়ও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুতরাং বলব যে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৯। এটা কিছুক্ষণ পর আবার বদলও হতে পারে।”
বিভ্রান্তি সৃষ্টির কারণ তুলে ধরে ডা. সায়েদুর বলেন, “এটা একটা ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন ছিল … সেখানে রেকর্ড কিপিং এবং মুভমেন্টের কারণে সংখ্যাটা কিছুটা ওঠানামা করছে। গতকাল অনেকেরই সঙ্গেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে বলতে পারিনি। একজন শিক্ষকের কথা গতকালই বলা হয়েছিল, আজ বলছি আরও একজন শিক্ষকও মৃত্যুবরণ করেছেন।”


















