ঢাকা ১০:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে চার লেন সড়ক প্রকল্প
সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:২৬:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • / 364
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি


আহমেদ ফয়সাল, বিয়ানীবাজার (সিলেট)

দুই বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়কের ভূমি অধিগ্রহণ শুরুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সিলেট জেলা প্রশাসকের দপ্তরে চিঠি আদান-প্রদান, সার্বিক পর্যালোচনা এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মাসিক সভার সিদ্ধান্ত পাঠানোর মধ্যে আটকে আছে চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ।
এ প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে যথাসময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুরু করা সম্ভব হবে না।

শেওলা স্থলবন্দরকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সহজে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল একনেকে এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। প্রায় ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এ মহাসড়কের কাজে খরচ হবে চার হাজার ২৫৭ কোটি সাত লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই হাজার ৮৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। অবশিষ্ট এক হাজার ৩৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেবে সরকার। মেগা এ প্রকল্পটি ১ জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে উদ্বেগের বিষয়, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও অধিগ্রহণে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের গড়িমসির কারণে প্রকল্পের কাজ আটকে আছে।

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় দেশি ও বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর। এখনও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন না হওয়ার কারণে পুরো প্রকল্প থমকে আছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল সিলেটের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ সভায় চার লেন মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত প্রকল্পে যুক্ত চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ এবং অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সেখানে বলা হয়, ভারত সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার কিছু সংখ্যক যাত্রী পরিবহন ছাড়া এ রাস্তায় তেমন যান চলাচল নেই। তাই প্রস্তাবিত চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ আপাতত জনগুরুত্বপূর্ণ নয় এবং সরকারি অর্থ অপচয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। সভায় এ আলোচনায় আরও কিছু বিষয় সংযুক্ত করে সিদ্ধান্তটি ৮ মে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, একনেকে অনুমোদন হওয়ার আগে প্রায় তিন বছর এ প্রকল্প নিয়ে সার্ভে করা হয়েছে। প্রতিদিন কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে এবং কী ধরনের গাড়ি চলাচল করে, তা খতিয়ে দেখা হয়। সেতুর বিয়ানীবাজার অংশে শেওলা স্থলবন্দরসহ বেশ কিছু শিল্পকারখানা রয়েছে। তাছাড়া সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলাসহ আশপাশ এলাকায় যে পরিমাণ ভবন নির্মাণ সামগ্রী ভারী যানবাহন দিয়ে পরিবহন হয়। অথচ অজ্ঞাত কারণে শেওলা স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি পণ্য কাজে জড়িত ভারি পণ্য পরিবহন, কয়েকটি শিল্পকারখানা ও ভবন নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শেওলা স্থলবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কমর উদ্দিন বলেন, এই বন্দর দিয়ে ভারতে সিমেন্ট, সজীব ও প্রাণ গ্রুপের পণ্যসহ বেশ কিছু পণ্য রপ্তানি হয় এবং ভারত থেকে পাথর, ফলসহ আরও অনেক ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়। বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি একটু মন্দা গেলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ২০০ ভারি যান প্রবেশ করে। এ পাথর দেশীয় পরিবহনের মাধ্যমে কুশিয়ারা নদীর শেওলা সেতু দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছায়। শেওলা সেতুর বর্তমান জীর্ণ অবস্থার কারণে প্রায়ই ভারী যানবাহন আটকা পড়ে। তিনি চার লেনে মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করলে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে জানান।

এছাড়া, বর্ষাকালে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে ঘন ঘন বন্যা দেখা দেওয়ায় সিলেট-চারখাই সড়ক বর্ষার অধিকাংশ সময় পানিতে ডুবে থাকে। ডুবে যাওয়া সড়কে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে সড়কের বেহাল দশা হয়। ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এ কারণেও এ সড়কের উন্নয়ন জরুরী।

সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উৎপল সামন্ত বলেন, কুশিয়ারা নদীর ওপর থাকা শেওলা সেতুটি জীর্ণ হয়ে গেছে। সেতুর স্থায়িত্ব কমপক্ষে ৫০ বছর থাকার কথা হলেও ৩০ বছর পার হওয়ার আগেই এটির অবস্থা খারাপ। প্রস্তাবিত চার লেনের সেতু ৬০ মিটার দীর্ঘ, ২১ মিটার প্রস্থ এবং বর্ষাকালে নদীর সর্বোচ্চ পানির স্তর বিবেচনা করে সে স্তর থেকে ৪০ মিটার উচ্চতা রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় সার্ভে, প্রকৌশল দিক এবং ভারী যানবাহনসহ যাত্রীবাহী যান চলাচল পর্যালোচনা করে প্রকল্পে চার লেনের সেতু অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৪৭ দশমিক ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৪২ দশমিক ৮০ লাখ ঘনফুট মাটির কাজ, ৪২ দশমিক ৯৮৫ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, এক হাজার ৫৭৫ জন মাস-পরামর্শক সেবা, ৩১টি কালভার্ট, তিনটি সেতু, একটি ফ্লাইওভার, ছয়টি ওভারপাস, দুটি আন্ডারপাস, চারটি ফুট ওভারব্রিজ, সাতটি পথচারী পারাপার, একটি টোল প্লাজা নির্মাণ এবং প্রায় ৪৩ কিলোমিটার চার লেন এবং এ মহাসড়কের উভয় পাশে ধীরগতির দুটি সার্ভিস লেন করা হবে।

এদিকে গত ১৮ জুন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হকের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ ভবনের ডিপিডিসি সম্মেলন কক্ষে স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্তকাজের প্যাকেজ তিনটি লট, চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, ছয়টি একক পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পাঁচটি ভৌতসেবা প্যাকেজ রয়েছে। ইতোমধ্যে একক পরামর্শক প্যাকেজ চারটি এবং দুটি পারমর্শক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ, দুটি ভৌত সেবা প্যাকেজ ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের ডিজাইন ও সেফগার্ড ডকুমেন্ট উন্নয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক বলেন, সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেনের মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চালমান। কাজ বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে, সেটি জানতে প্রকল্প পরিচালক কিংবা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে চার লেন সড়ক প্রকল্প
সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক

আপডেট সময় : ০৪:২৬:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫


আহমেদ ফয়সাল, বিয়ানীবাজার (সিলেট)

দুই বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়কের ভূমি অধিগ্রহণ শুরুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সিলেট জেলা প্রশাসকের দপ্তরে চিঠি আদান-প্রদান, সার্বিক পর্যালোচনা এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মাসিক সভার সিদ্ধান্ত পাঠানোর মধ্যে আটকে আছে চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ।
এ প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে যথাসময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুরু করা সম্ভব হবে না।

শেওলা স্থলবন্দরকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সহজে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল একনেকে এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। প্রায় ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এ মহাসড়কের কাজে খরচ হবে চার হাজার ২৫৭ কোটি সাত লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই হাজার ৮৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। অবশিষ্ট এক হাজার ৩৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেবে সরকার। মেগা এ প্রকল্পটি ১ জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে উদ্বেগের বিষয়, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও অধিগ্রহণে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের গড়িমসির কারণে প্রকল্পের কাজ আটকে আছে।

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় দেশি ও বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর। এখনও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন না হওয়ার কারণে পুরো প্রকল্প থমকে আছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল সিলেটের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ সভায় চার লেন মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত প্রকল্পে যুক্ত চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ এবং অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সেখানে বলা হয়, ভারত সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার কিছু সংখ্যক যাত্রী পরিবহন ছাড়া এ রাস্তায় তেমন যান চলাচল নেই। তাই প্রস্তাবিত চার লেন সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ আপাতত জনগুরুত্বপূর্ণ নয় এবং সরকারি অর্থ অপচয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। সভায় এ আলোচনায় আরও কিছু বিষয় সংযুক্ত করে সিদ্ধান্তটি ৮ মে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, একনেকে অনুমোদন হওয়ার আগে প্রায় তিন বছর এ প্রকল্প নিয়ে সার্ভে করা হয়েছে। প্রতিদিন কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে এবং কী ধরনের গাড়ি চলাচল করে, তা খতিয়ে দেখা হয়। সেতুর বিয়ানীবাজার অংশে শেওলা স্থলবন্দরসহ বেশ কিছু শিল্পকারখানা রয়েছে। তাছাড়া সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলাসহ আশপাশ এলাকায় যে পরিমাণ ভবন নির্মাণ সামগ্রী ভারী যানবাহন দিয়ে পরিবহন হয়। অথচ অজ্ঞাত কারণে শেওলা স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি পণ্য কাজে জড়িত ভারি পণ্য পরিবহন, কয়েকটি শিল্পকারখানা ও ভবন নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শেওলা স্থলবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কমর উদ্দিন বলেন, এই বন্দর দিয়ে ভারতে সিমেন্ট, সজীব ও প্রাণ গ্রুপের পণ্যসহ বেশ কিছু পণ্য রপ্তানি হয় এবং ভারত থেকে পাথর, ফলসহ আরও অনেক ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়। বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি একটু মন্দা গেলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পাথর ও চুনাপাথর নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ২০০ ভারি যান প্রবেশ করে। এ পাথর দেশীয় পরিবহনের মাধ্যমে কুশিয়ারা নদীর শেওলা সেতু দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছায়। শেওলা সেতুর বর্তমান জীর্ণ অবস্থার কারণে প্রায়ই ভারী যানবাহন আটকা পড়ে। তিনি চার লেনে মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করলে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে জানান।

এছাড়া, বর্ষাকালে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে ঘন ঘন বন্যা দেখা দেওয়ায় সিলেট-চারখাই সড়ক বর্ষার অধিকাংশ সময় পানিতে ডুবে থাকে। ডুবে যাওয়া সড়কে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে সড়কের বেহাল দশা হয়। ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এ কারণেও এ সড়কের উন্নয়ন জরুরী।

সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উৎপল সামন্ত বলেন, কুশিয়ারা নদীর ওপর থাকা শেওলা সেতুটি জীর্ণ হয়ে গেছে। সেতুর স্থায়িত্ব কমপক্ষে ৫০ বছর থাকার কথা হলেও ৩০ বছর পার হওয়ার আগেই এটির অবস্থা খারাপ। প্রস্তাবিত চার লেনের সেতু ৬০ মিটার দীর্ঘ, ২১ মিটার প্রস্থ এবং বর্ষাকালে নদীর সর্বোচ্চ পানির স্তর বিবেচনা করে সে স্তর থেকে ৪০ মিটার উচ্চতা রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় সার্ভে, প্রকৌশল দিক এবং ভারী যানবাহনসহ যাত্রীবাহী যান চলাচল পর্যালোচনা করে প্রকল্পে চার লেনের সেতু অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৪৭ দশমিক ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৪২ দশমিক ৮০ লাখ ঘনফুট মাটির কাজ, ৪২ দশমিক ৯৮৫ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, এক হাজার ৫৭৫ জন মাস-পরামর্শক সেবা, ৩১টি কালভার্ট, তিনটি সেতু, একটি ফ্লাইওভার, ছয়টি ওভারপাস, দুটি আন্ডারপাস, চারটি ফুট ওভারব্রিজ, সাতটি পথচারী পারাপার, একটি টোল প্লাজা নির্মাণ এবং প্রায় ৪৩ কিলোমিটার চার লেন এবং এ মহাসড়কের উভয় পাশে ধীরগতির দুটি সার্ভিস লেন করা হবে।

এদিকে গত ১৮ জুন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হকের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ ভবনের ডিপিডিসি সম্মেলন কক্ষে স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেন মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্তকাজের প্যাকেজ তিনটি লট, চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, ছয়টি একক পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পাঁচটি ভৌতসেবা প্যাকেজ রয়েছে। ইতোমধ্যে একক পরামর্শক প্যাকেজ চারটি এবং দুটি পারমর্শক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ, দুটি ভৌত সেবা প্যাকেজ ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের ডিজাইন ও সেফগার্ড ডকুমেন্ট উন্নয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক বলেন, সিলেট-চারখাই-শেওলা চার লেনের মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চালমান। কাজ বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে, সেটি জানতে প্রকল্প পরিচালক কিংবা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।