ঢাকা ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’র হাতে সরকারি অনুদানের চেক

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:২৮:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / 364
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সারা দেশের মতো মৌলভীবাজারের কুলাউড়াতেও ছড়িয়ে পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। তবে সেখানকার পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলক শান্ত। দুই দিন ধরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় মাত্র দুই-তিনজন সামান্য আহত হন। অথচ সরকারি অনুদানের তালিকায় দেখা যায়, কুলাউড়ার ২৮ জন ছাত্র-জনতা পেয়েছেন ২৮ লাখ টাকা—প্রতি জনে এক লাখ টাকা করে।

এই তালিকা দেখে বিস্মিত স্থানীয় আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, এই তালিকায় অধিকাংশ নাম আন্দোলনে অংশই নেননি, আহত হওয়া তো দূরের কথা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। রিপোর্ট করেছেন রূপালী বাংলাদেশ এর সেলিম আহমেদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলা শাখার অন্যতম সমন্বয়ক ওসমান গণি স্বীকার করেন, কুলাউড়ায় বড় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে সুনামগঞ্জেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। আহত না হয়েও ‘আহত’ হিসেবে সরকারি চেক পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আল হেলাল। এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় আন্দোলনকারীরা। সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মেহেদী হাসান সাকিব বলেন, “আল হেলাল কখনোই আন্দোলনে ছিলেন না। প্রশাসনের আগাম প্রস্তুত তালিকায় তার নাম ঢুকে গেছে।”

এ রকমই আরেকটি ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে। সেখানে সাবেক মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ইভা আলমের মেয়ে রাইসা আলমকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কলেজছাত্র মিনহাজুর রহমান শ্রাবণ (১৭) হামলার শিকার হন। অভিযোগ উঠেছে, ইভা আলমের স্বামী ও স্থানীয় ইউপি সচিব শাহ আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা তাকে কুপিয়ে আহত করেছেন।

শুধু কয়েকটি জেলা নয়, সারাদেশেই এভাবে ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’রা সরকারি অনুদান ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত বা অংশগ্রহণ না করেও অনেকেই নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে প্রমাণ করে নিয়েছেন অর্থ সহায়তা ও অন্যান্য সুবিধা। অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মতো অপরাধে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এক সময় যেমন ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ ইস্যু নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল, এখন তেমনি দেখা যাচ্ছে ‘ভুয়া জুলাই যোদ্ধা’দের কর্মকাণ্ড। যাচাই-বাছাই না হওয়ায় অসংখ্য ভুয়া নাম সরকারি তালিকায় ঢুকে পড়েছে।

তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মো. ইলিয়াছ হোসেন হিরন নামের একজন ব্যক্তিগত কারণে আহত হয়ে নিটোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানতে পারেন যে, আন্দোলনে আহতরা সরকারিভাবে সহায়তা পাবেন। তখনই ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিয়ে নিজেকে গুলিবিদ্ধ দাবি করেন। এরপর তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। পরে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকেও এক লাখ টাকা সহায়তা নেন। সমালোচনার মুখে পড়লে গত ১৫ এপ্রিল তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি আন্দোলনে আহত হননি এবং প্রতারণার মাধ্যমে অনুদান নিয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অনুদানের চেক পেয়েছেন বাদল বেপারি ও শাওন বেপারি নামের পিতা-পুত্র। অথচ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

প্রকৃত ‘জুলাই যোদ্ধা’রা যখন চিকিৎসা ও স্বীকৃতির জন্য পথে পথে ঘুরছেন, তখন ভুয়ারা লুটেপুটে খাচ্ছেন সরকারি অর্থ। গত বছর ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত পটুয়াখালীর আশিকুর রহমান হৃদয় চিকিৎসার অভাবে মারা যান। একটি গুলি অপসারণের মতো সামর্থ্য তার পরিবারের ছিল না।

গত শনিবারও শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’। জামালপুরের ইসলামপুরের মো. সম্রাট হোসেন জানান, তার শরীরে এখনো ৪০টি গুলি রয়েছে। “আমার একটা চোখ অন্ধ, আরেকটায় ঝাপসা দেখি। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কিছুই পাচ্ছি না,” বলেন তিনি।

সরকার গঠিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ বলছে, তারা ইতোমধ্যে ৮৩৪ জনকে ‘জুলাই শহিদ’, ৪৯৩ জনকে ‘ক’ ক্যাটাগরির গুরুতর আহত, ৯০৮ জনকে ‘খ’ ক্যাটাগরি এবং ১০ হাজার ৬৪২ জনকে ‘গ’ ক্যাটাগরির ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে গেজেটভুক্ত করেছে। এই গেজেট প্রস্তুত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে।

সরকার ইতোমধ্যে ক্যাটাগরিভুক্ত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের মধ্যে এককালীন ১ লাখ টাকা করে অনুদান বিতরণ শুরু করেছে। রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া বাকি সব বিভাগে এ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে এই তালিকায় ভুয়া নাম উঠে আসায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা শহরের শীর্ষ আন্দোলনকারীরা বলছেন, আন্দোলনের প্রকৃত কর্মীরা পিছিয়ে পড়ছেন, আর কিছু সুযোগসন্ধানী নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন। এর আগেও ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকেও ভুয়া ব্যক্তি অনুদান নিয়েছেন। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কুলাউড়ার ২৮ জনকে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, “জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীরাও এখন ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। অথচ শহিদ পরিবার ও আহতরা বঞ্চিত। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।”

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী জানান, “ভুয়া গেজেটের ব্যাপারে আমরা কঠোর। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্বচ্ছ তালিকা তৈরি এবং অনিয়ম রোধে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’র হাতে সরকারি অনুদানের চেক

আপডেট সময় : ০২:২৮:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সারা দেশের মতো মৌলভীবাজারের কুলাউড়াতেও ছড়িয়ে পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। তবে সেখানকার পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলক শান্ত। দুই দিন ধরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় মাত্র দুই-তিনজন সামান্য আহত হন। অথচ সরকারি অনুদানের তালিকায় দেখা যায়, কুলাউড়ার ২৮ জন ছাত্র-জনতা পেয়েছেন ২৮ লাখ টাকা—প্রতি জনে এক লাখ টাকা করে।

এই তালিকা দেখে বিস্মিত স্থানীয় আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, এই তালিকায় অধিকাংশ নাম আন্দোলনে অংশই নেননি, আহত হওয়া তো দূরের কথা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। রিপোর্ট করেছেন রূপালী বাংলাদেশ এর সেলিম আহমেদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলা শাখার অন্যতম সমন্বয়ক ওসমান গণি স্বীকার করেন, কুলাউড়ায় বড় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে সুনামগঞ্জেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। আহত না হয়েও ‘আহত’ হিসেবে সরকারি চেক পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আল হেলাল। এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় আন্দোলনকারীরা। সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মেহেদী হাসান সাকিব বলেন, “আল হেলাল কখনোই আন্দোলনে ছিলেন না। প্রশাসনের আগাম প্রস্তুত তালিকায় তার নাম ঢুকে গেছে।”

এ রকমই আরেকটি ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে। সেখানে সাবেক মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ইভা আলমের মেয়ে রাইসা আলমকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কলেজছাত্র মিনহাজুর রহমান শ্রাবণ (১৭) হামলার শিকার হন। অভিযোগ উঠেছে, ইভা আলমের স্বামী ও স্থানীয় ইউপি সচিব শাহ আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা তাকে কুপিয়ে আহত করেছেন।

শুধু কয়েকটি জেলা নয়, সারাদেশেই এভাবে ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’রা সরকারি অনুদান ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত বা অংশগ্রহণ না করেও অনেকেই নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে প্রমাণ করে নিয়েছেন অর্থ সহায়তা ও অন্যান্য সুবিধা। অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মতো অপরাধে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এক সময় যেমন ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ ইস্যু নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল, এখন তেমনি দেখা যাচ্ছে ‘ভুয়া জুলাই যোদ্ধা’দের কর্মকাণ্ড। যাচাই-বাছাই না হওয়ায় অসংখ্য ভুয়া নাম সরকারি তালিকায় ঢুকে পড়েছে।

তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মো. ইলিয়াছ হোসেন হিরন নামের একজন ব্যক্তিগত কারণে আহত হয়ে নিটোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানতে পারেন যে, আন্দোলনে আহতরা সরকারিভাবে সহায়তা পাবেন। তখনই ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিয়ে নিজেকে গুলিবিদ্ধ দাবি করেন। এরপর তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। পরে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকেও এক লাখ টাকা সহায়তা নেন। সমালোচনার মুখে পড়লে গত ১৫ এপ্রিল তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি আন্দোলনে আহত হননি এবং প্রতারণার মাধ্যমে অনুদান নিয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অনুদানের চেক পেয়েছেন বাদল বেপারি ও শাওন বেপারি নামের পিতা-পুত্র। অথচ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

প্রকৃত ‘জুলাই যোদ্ধা’রা যখন চিকিৎসা ও স্বীকৃতির জন্য পথে পথে ঘুরছেন, তখন ভুয়ারা লুটেপুটে খাচ্ছেন সরকারি অর্থ। গত বছর ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত পটুয়াখালীর আশিকুর রহমান হৃদয় চিকিৎসার অভাবে মারা যান। একটি গুলি অপসারণের মতো সামর্থ্য তার পরিবারের ছিল না।

গত শনিবারও শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’। জামালপুরের ইসলামপুরের মো. সম্রাট হোসেন জানান, তার শরীরে এখনো ৪০টি গুলি রয়েছে। “আমার একটা চোখ অন্ধ, আরেকটায় ঝাপসা দেখি। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কিছুই পাচ্ছি না,” বলেন তিনি।

সরকার গঠিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ বলছে, তারা ইতোমধ্যে ৮৩৪ জনকে ‘জুলাই শহিদ’, ৪৯৩ জনকে ‘ক’ ক্যাটাগরির গুরুতর আহত, ৯০৮ জনকে ‘খ’ ক্যাটাগরি এবং ১০ হাজার ৬৪২ জনকে ‘গ’ ক্যাটাগরির ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে গেজেটভুক্ত করেছে। এই গেজেট প্রস্তুত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে।

সরকার ইতোমধ্যে ক্যাটাগরিভুক্ত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের মধ্যে এককালীন ১ লাখ টাকা করে অনুদান বিতরণ শুরু করেছে। রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া বাকি সব বিভাগে এ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে এই তালিকায় ভুয়া নাম উঠে আসায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা শহরের শীর্ষ আন্দোলনকারীরা বলছেন, আন্দোলনের প্রকৃত কর্মীরা পিছিয়ে পড়ছেন, আর কিছু সুযোগসন্ধানী নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন। এর আগেও ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকেও ভুয়া ব্যক্তি অনুদান নিয়েছেন। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কুলাউড়ার ২৮ জনকে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, “জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীরাও এখন ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। অথচ শহিদ পরিবার ও আহতরা বঞ্চিত। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।”

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী জানান, “ভুয়া গেজেটের ব্যাপারে আমরা কঠোর। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্বচ্ছ তালিকা তৈরি এবং অনিয়ম রোধে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।”