বেসরকারি খাতে যাচ্ছে নগদ: গভর্নর
- আপডেট সময় : ০৫:২৬:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- / 82
মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) খাতে প্রতিযোগিতা বাড়াতে সরকার নগদকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, “আমরা এমএফএস খাতের পরিধি ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে চাই। এ কারণেই নগদকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ জন্য বিনিয়োগকারী আনা হবে।”
গভর্নর আরও বলেন, “বর্তমানে ডাক বিভাগের অধীনে নগদ পরিচালিত হচ্ছে। তবে ডাক বিভাগের এটি চালানোর সক্ষমতা নেই, তাই সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।”
বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আইসিএমএবি ও মাস্টারকার্ডের উদ্যোগে আয়োজিত ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট-২০২৫ এ তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের ২১ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর নগদের আগের পর্ষদ ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তার দায়িত্বকালে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে নগদে। এ প্রেক্ষিতে ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই দিন বদিউজ্জামানের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।
১৫ দিনের মধ্যেই তাকে সরিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মো. মোতাছিম বিল্লাহকে নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরপর প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে এমএফএস কোম্পানিটি উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই শুরু করে।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সও দেওয়া হয়।
ক্যাশলেস সামিটে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “বাংলাদেশে কিউআরকোড এখনো জনপ্রিয় হয়নি, তবে এটি জনপ্রিয় করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে কিউআরকোড গ্রহণ করতে হবে, এটি বাধ্যতামূলক।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো গ্রাহক ক্যাশলেস পেমেন্ট করতে চায়, তবে সেটি গ্রহণ করতে হবে। কাস্টমারকে বলা যাবে না ক্যাশলেস সিস্টেম নেই। এজেন্ট ব্যাংকিং পুরোপুরি ডিজিটাল করা হবে। সব ধরনের ঋণও ক্যাশলেস প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। আমাদের এমন একটি পর্যায়ে যেতে হবে যেখানে কারও অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ অর্থ তোলার প্রয়োজন হবে না। অনেকে বলেন ক্যাশ আউট চার্জ বেশি—আমি বলব এটি কমানো উচিত।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
উদ্বোধনী সেশনে ‘ক্যাশলেস অর্থনীতি গঠনে ফিনটেকের ভূমিকা’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম. মাসরুর রিয়াজ।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মো. শারাফাত উল্লাহ খান বলেন, “ডিজিটাল ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। দেশে এই খাতে বড় সুযোগ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রায় ১২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ব্যাংক হিসাবধারী হলেও ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন না এবং ডেবিট কার্ডও নেই তাদের কাছে। বর্তমানে মাত্র ৪.৬ কোটি মানুষ ডিজিটাল গেটওয়ে ব্যবহার করছেন।”
সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে ঝুঁকি রয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি বজায় রাখতে হবে। গ্রাহকের আস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুরক্ষা ব্যবস্থা যত বাড়বে, গ্রাহকের আস্থাও তত বাড়বে। পাশাপাশি প্রসেসিং সময় কমিয়ে গ্রাহকের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।”
সামিটের সমাপনী পর্বে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ‘রেগুলেটরি রিফর্মস ও পলিসি রোডম্যাপ ফর অ্যা ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, “৮৫ শতাংশ মানুষ এখনো নগদ টাকার ওপর নির্ভরশীল। তাদের ক্যাশলেস সিস্টেমে আনতে হবে। তবে প্রতারণা ও সাইবার ঝুঁকিও রয়েছে, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও টাকা চুরি হতে পারে। বর্তমানে ৫৬ শতাংশ লেনদেন অনলাইনে হচ্ছে। ইউটিলিটি বিল, টিকেটসহ অনেক কিছুই অনলাইনে দিচ্ছি।”
দ্য সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, “ফোন কিনলে গরিব মানুষের ওপরও ১১.৭৫ শতাংশ ভ্যাট, আর আইফোন ক্রেতার জন্যও একই ভ্যাট। গরিবের ভ্যাট কমিয়ে ধনীদের ভ্যাট বাড়ানো উচিত।”
আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ (এফসিএমএ) বলেন, “বাংলাদেশ আর্থিক রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আছে। ক্যাশলেস অর্থনীতি এখন ভবিষ্যতের লক্ষ্য নয়, বরং বর্তমানের প্রয়োজন। আজকের স্লোগান—নো ক্যাশ, নো করাপশন। তবে দুর্নীতিবাজরা শিখে গেছে টাকায় সব সম্ভব।”
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, “ক্যাশলেস সমাজ উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে, দক্ষতা বাড়ায় এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে। আজকের সংলাপ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যতমুখী অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নেবে।”
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান (এফসিএমএ), বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, দ্য লিগ্যাল সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং পার্টনার অনিতা গাজী রহমান।
এছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বিকাশ লিমিটেডের সিসিও আলী আহমেদ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের পরিচালক জাকিয়া সুলতানা এবং সেবা প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা আদনান ইমতিয়াজ হালিম আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা সঞ্চালনা করেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার জিশান কিংশুক হক। তিনি জানান, দেশে এমএফএস হিসাব রয়েছে ১০ কোটির বেশি, যার মধ্যে একাই বিকাশের হিসাব ৮ কোটির ওপরে।

















