বিয়ানীবাজারে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় “নাকার কৃষক বিদ্রোহ দিবস” পালন
- আপডেট সময় : ০৯:০৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০২০
- / 865
এক ঐতিহাসিক রক্তক্ষয়ী অধিকার আদায়ের সংগ্রামের নাম নানকার কৃষক বিদ্রোহ। ব্রিটিশ আমলে নান বা রুটি দিয়ে কেনা গোলামকে নানকার বলা হতো। নানকার প্রথায় তৎকালীন জমিদারেরা কৃষকদের গোলাম বানিয়ে খাদ্য-শস্য ও অধিকার শোষণ করত। নানকার প্রথা বিলোপ, কৃষকের জমির অধিকার আদায় ও জমিদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সিলেট অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে কৃষকেরা তখন প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট পুলিশ, ইপিআর আর জমিদারদের পেটোয়া বাহিনী সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার তিলপাড়া ইউনিয়নের সানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে শহীদ হয়েছিলেন ব্রজনাথ দাস(৫০), কটুমনি দাস (৪৭), প্রসন্ন কুমার দাস (৫০), পবিত্র কুমার দাস (৪৫) ও অমূল্য কুমার দাস (১৭)।
ওই ঘটনার ১৫ দিন আগে সুনাই নদীতে জমিদারের পোষ্যদের লাঠির আঘাতে নিহত হন রজনী দাস নামের এক কৃষক।
তাঁদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৫০ সালে তৎকালীন সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করে কৃষকদের জমির মালিকানার স্বীকৃতি দেন। তখন থেকে সেই নানকার আন্দোলনের মহান শহীদদের স্মরণে প্রতি বছর ১৮ আগস্ট ‘নানকার বিদ্রোহ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি ও স্থানীয়েরা। তবে আজ প্রায় ৭১ বছরেও মেলেনি সেই আন্দোলনের কোন জাতীয় স্বীকৃতি, যা আমাদের পুরো জাতিকে জমিদারি প্রথার শোষণ থেকে মুক্তি দিয়েছিল।
প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিয়ানীবাজার উপজেলা কমিটি যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭১ তম ঐতিহাসিক নানকার কৃষক বিদ্রোহ দিবস পালন করেছে।
কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁরা কৃষক শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের সানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে নির্মিত শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বিকাল ৩ টায় স্থানীয় পঞ্চখন্ড গোলাবিয়া পাবলিক লাইব্রেরীর হল রুমে নানকার বিদ্রোহের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সিপিবি বিয়ানীবাজার উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোঃ আনিসুর রহমানের পরিচালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন বিয়ানীবাজার সিপিবির সভাপতি কমরেড এড. আবুল কাসেম।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হাবিবুল ইসলাম খোকা বিশেষ অতিথি ছিলেন বিয়ানীবাজার মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কমরেড ফয়সল আহমদ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবি বিয়ানীবাজার উপজেলা কমিটির সভাপতি কমরেড দয়াময় কুমার দে,সিপিবি নেতা প্রভাষক বিজিত আচার্য্য, বিয়ানীবাজার ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আবুল,পৌর কাউন্সিলর সিপিবি নেতা কমরেড আকছার হোসেন,যুব ইউনিয়নের সভাপতি ফাহিম আহমদ চৌধুরী,সাধারণ সম্পাদক কমরেড আব্দুর রহমান, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সুজন দাস,ইশতিয়াক হিমেল, হরিষ চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, কৃষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও শোষণ মুক্তির আগ পর্যন্ত এই সংগ্রাম চলবে। আলোচনায় নানকার কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসকে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তরুণ সমাজকে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের ইতিহাস জানাতে অনুরোধ করেন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের স্বীকৃতি দাবি করেন।



















