ঢাকা ০৯:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

বিজিবি সদস্য নিহত, মিয়ানমার সীমান্তে বাড়ছে আরাকান আর্মির হুমকি
ল্যান্ডমাইনে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন বাংলাদেশি আহত

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:২৬:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • / 68

মিয়ানমার সীমান্তে বাড়ছে আরাকান আর্মির হুমকি

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির পেতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্য মারা গেছেন। পাহাড়ি এই সীমান্ত এখন বিজিবি সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে— সর্বশেষ এই ঘটনাই তার প্রমাণ।

নিহত নায়েক মো. আখতার হোসেন (৩৫) কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন। গত ১২ অক্টোবর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে টহলের সময় শূন্যরেখার কাছে মাইন বিস্ফোরণে তার ডান পা উড়ে যায়। প্রথমে রামু সেনানিবাস হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তিনি মারা যান।

বিজিবি কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে সরকারি বাহিনী সরে যাওয়ার পর বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকেই তারা সীমান্তজুড়ে এমনকি নো-ম্যানস ল্যান্ডের কিছু অংশেও ল্যান্ডমাইন পেতে রাখে বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মিয়ানমারের সিতওয়েতে নিযুক্ত সাবেক কনসাল জেনারেল মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “সীমান্তে নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা ও যেকোনো উসকানিমূলক ঘটনা ঠেকাতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মোকাবিলায় আরাকান আর্মি কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে সীমান্তজুড়ে নির্বিচারে মাইন পুঁতে রেখেছে।”

এমদাদুলের মতে, “বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে মাইন অপসারণ অভিযান চালানো জরুরি।”

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরু থেকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত শুরুর পর থেকে অন্তত ৬৫ জন বাংলাদেশি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। এছাড়া ২০২৪ সালে দুজন রোহিঙ্গা নিহত ও ২০২৩ সালে পাঁচজন আহত হন।

বিজিবির রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিজিবি সদস্য শূন্যরেখায় দায়িত্ব পালনকালে আহত হন। ওই এলাকায় কোনো মাইন থাকার কথা নয়, কিন্তু আরাকান আর্মি আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে সেখানে মাইন পুঁতে রেখেছে।”

আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি, তবে এখনো কোনো সাড়া পাইনি।” ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে মাইন অপসারণ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ভোলার নিজ গ্রামে পূর্ণ সামরিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আখতার হোসেনকে দাফন করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে বিজিবি জানায়, “দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার এই সর্বোচ্চ ত্যাগ বিজিবি চিরদিন স্মরণে রাখবে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির দুছড়ি থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং পর্যন্ত সীমান্তজুড়ে এখন নিয়মিত সংঘর্ষ হচ্ছে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা, আরএসও ও আরার মধ্যে। গত ২৫ অক্টোবর হোয়াইক্যং এলাকায় সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলিতে আহত হন বাংলাদেশি নারী চেনোয়ারা বেগম।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সিরাজুল মোস্তফা বলেন, “নাফ নদীর তীরে যাদের চিংড়িঘের বা কাঁকড়ার ফাঁদ আছে, তারা এখন ভয়ে সেগুলো দেখতে যাচ্ছেন না।”

এ বিষয়ে কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, সংঘর্ষগুলো মিয়ানমারের ভেতরে ঘটছে। “কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী যেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলছি এবং টহল জোরদার করেছি।”

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণের ঘটনা। সরকারি তথ্য বলছে, গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত আরাকান আর্মি অন্তত ১১৬ জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করেছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে অপহৃত ২৩৫ জনের মধ্যে ১২৪ জন ফিরে এলেও এখনো ৬২ জন রোহিঙ্গাসহ ১১১ জন তাদের হাতে বন্দী।

টেকনাফ কউকখালী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজিদ আহমেদ বলেন, “জেলেরা এখন সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।”

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী এখনো ১০৬ জন জেলে বন্দী আছেন। তিনি বলেন, “আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের কোনো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম না থাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

বিজিবি সদস্য নিহত, মিয়ানমার সীমান্তে বাড়ছে আরাকান আর্মির হুমকি
ল্যান্ডমাইনে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন বাংলাদেশি আহত

আপডেট সময় : ০১:২৬:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির পেতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্য মারা গেছেন। পাহাড়ি এই সীমান্ত এখন বিজিবি সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে— সর্বশেষ এই ঘটনাই তার প্রমাণ।

নিহত নায়েক মো. আখতার হোসেন (৩৫) কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন। গত ১২ অক্টোবর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে টহলের সময় শূন্যরেখার কাছে মাইন বিস্ফোরণে তার ডান পা উড়ে যায়। প্রথমে রামু সেনানিবাস হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তিনি মারা যান।

বিজিবি কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে সরকারি বাহিনী সরে যাওয়ার পর বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকেই তারা সীমান্তজুড়ে এমনকি নো-ম্যানস ল্যান্ডের কিছু অংশেও ল্যান্ডমাইন পেতে রাখে বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মিয়ানমারের সিতওয়েতে নিযুক্ত সাবেক কনসাল জেনারেল মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “সীমান্তে নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা ও যেকোনো উসকানিমূলক ঘটনা ঠেকাতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মোকাবিলায় আরাকান আর্মি কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে সীমান্তজুড়ে নির্বিচারে মাইন পুঁতে রেখেছে।”

এমদাদুলের মতে, “বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে মাইন অপসারণ অভিযান চালানো জরুরি।”

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরু থেকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত শুরুর পর থেকে অন্তত ৬৫ জন বাংলাদেশি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। এছাড়া ২০২৪ সালে দুজন রোহিঙ্গা নিহত ও ২০২৩ সালে পাঁচজন আহত হন।

বিজিবির রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিজিবি সদস্য শূন্যরেখায় দায়িত্ব পালনকালে আহত হন। ওই এলাকায় কোনো মাইন থাকার কথা নয়, কিন্তু আরাকান আর্মি আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে সেখানে মাইন পুঁতে রেখেছে।”

আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি, তবে এখনো কোনো সাড়া পাইনি।” ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে মাইন অপসারণ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ভোলার নিজ গ্রামে পূর্ণ সামরিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আখতার হোসেনকে দাফন করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে বিজিবি জানায়, “দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার এই সর্বোচ্চ ত্যাগ বিজিবি চিরদিন স্মরণে রাখবে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির দুছড়ি থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং পর্যন্ত সীমান্তজুড়ে এখন নিয়মিত সংঘর্ষ হচ্ছে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা, আরএসও ও আরার মধ্যে। গত ২৫ অক্টোবর হোয়াইক্যং এলাকায় সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলিতে আহত হন বাংলাদেশি নারী চেনোয়ারা বেগম।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সিরাজুল মোস্তফা বলেন, “নাফ নদীর তীরে যাদের চিংড়িঘের বা কাঁকড়ার ফাঁদ আছে, তারা এখন ভয়ে সেগুলো দেখতে যাচ্ছেন না।”

এ বিষয়ে কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, সংঘর্ষগুলো মিয়ানমারের ভেতরে ঘটছে। “কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী যেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলছি এবং টহল জোরদার করেছি।”

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণের ঘটনা। সরকারি তথ্য বলছে, গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত আরাকান আর্মি অন্তত ১১৬ জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করেছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে অপহৃত ২৩৫ জনের মধ্যে ১২৪ জন ফিরে এলেও এখনো ৬২ জন রোহিঙ্গাসহ ১১১ জন তাদের হাতে বন্দী।

টেকনাফ কউকখালী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজিদ আহমেদ বলেন, “জেলেরা এখন সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।”

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী এখনো ১০৬ জন জেলে বন্দী আছেন। তিনি বলেন, “আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের কোনো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম না থাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।”