বঙ্গবন্ধু ভবন ভাঙতে বুলডোজার কোথা থেকে এলো
দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির শঙ্কা: ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব
- আপডেট সময় : ০৯:৪৪:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 284

বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনসহ দেশের নানা স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এসময় ভেকু ও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে দেখা যায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি। খুলনা ও কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙার সময়ও ভেকু ও বুলডোজার ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
অনেকেই বলছেন, আগেই ঘোষণা দেয়া কর্মসূচি ঠেকাতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন? একইসঙ্গে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এসব বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
এ নিয়ে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখানে মনে হয় সরকারের ভেতর থেকে সমর্থন রয়েছে। না হলে তো এভাবে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে এই পদক্ষেপ নেয়া কিংবা এই কর্মযজ্ঞে পাবলিককে উত্তেজিত করে অস্থিরতা তৈরি করা – এটা তো সরকারের ভেতরের সমর্থন ছাড়া হওয়ার কথা না।”
একইসঙ্গে উপদেষ্টাদের দিকেও আঙুল তুলে তিনি বলেন, “আমরা তো দেখি নাই সরকারের ভেতর থেকে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বরং সরকারের উপদেষ্টাদের কারও কারও ফেসবুকে লেখাতেও আমরা দেখেছি যে এটাতে সমর্থন রয়েছে। সরকার যদি এই ধরনের কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেয় তাহলে তো নৈরাজ্য তৈরি হবেই।”
অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, এই ঘটনায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
বিশেষ করে এই বুলডোজার কোথা থেকে এলো- এমন প্রশ্নও তুলে তিনি বলেন, “সরকার যদি এভাবে এটাতে ইনভলভ হয়ে যায় সেটা খুবই দুঃখজনক এবং খুবই উদ্বগের কারণ। এরকম পথ থেকে সরকারকে অবিলম্বে সরে আসা উচিত।”
বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ও সারা দেশে ভাঙচুর-লুটপাটের নিন্দা আসকের
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা স্থাপনায় ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, “বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে সারা রাত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানান স্থাপনায় ভাঙচুর ও হামলার এই ঘটনাগুলোকে আইনের শাসন, আইনের সমান আশ্রয় লাভ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের পরিপন্থী বলে আসক মনে করে।”
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে আসক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, “ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা এবং ধ্বংস করার মতো একটি ঘোষণা গতকাল (বুধবার) দিন জুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাতে দেখা যায়।”
“এর পরপরই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে ছাত্র-জনতা নামে একদল লোক জড়ো হয়ে ভাঙচুর, তাণ্ডব, লুটপাট শুরু করে। এক পর্যায়ে সেখানে আগুন দেয়া হয়।”
আইন ও সালিশ কেন্দ্র গণমাধ্যমের সংবাদের বরাত দিয়ে বলছে, সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা ছিল না, বরং সেনাবাহিনীর দলটি এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরে সারা দেশে এই ভাঙচুর ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির সুধা সদনে লাগানো আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ‘নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায়’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই মানবাধিকার সংস্থাটি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের চেতনার প্রতি আসক পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল এবং সমর্থন করে বলে জানিয়েছে আসক।
একইসাথে আসক মনে করে, “চলমান তাণ্ডবগুলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা হুমকিস্বরূপ।”
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আইন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে আসকের পক্ষ থেকে।
শেখ হাসিনাকে ‘বিরত রাখতে’ ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব
ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতির কারণে গতকাল বুধবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর ও আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। শেখ হাসিনা যাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ধরনের বক্তব্য না দেন, তাকে বিরত রাখার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে এবং তাদের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তা বলে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।



















