ঢাকা ০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

প্রবাসীরা ভোটার হচ্ছেন কিন্তু কোন পদ্ধতিতে?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / 263
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হলেও এবারই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে চারটি পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে কমিশন।

এই চার পদ্ধতি হলো: প্রক্সি ভোটিং, অনলাইন ভোটিং, পোস্টাল ব্যালট এবং সশরীরে ভোটদান। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “এই চারটি পদ্ধতি নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে মতামত চেয়েছি। আমরা এমন একটি পদ্ধতিই অনুসরণ করব, যেটি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হবে।”

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকেই এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি।

তবে এসব পদ্ধতির প্রায় সবগুলোতেই কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, পেপার ট্রেইল না থাকলে এসব পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

চলতি মাসেই চূড়ান্ত হতে পারে পদ্ধতি

গত দুই মাস ধরে বিভিন্ন পর্যালোচনা শেষে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রক্সি, অনলাইন এবং পোস্টাল ভোটিংয়ের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সরাসরি ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাও প্রস্তাবনায় উঠে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, “নির্বাচন কমিশনের হাতে সময় কম, সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে যেখানে সম্ভব সেখানে পোস্টাল এবং যেসব দেশে সুযোগ আছে, সেখানে সরাসরি ভোট চালু করা যেতে পারে।”

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের মতামত জানাতে ১৫ মে পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছিল ইসি। এখন প্রাপ্ত পরামর্শগুলো বিশ্লেষণ করে চলতি মাসেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে কমিশন।

প্রক্সি ভোটিংয়ের দিকে ঝুঁকছে কি ইসি?

এই পদ্ধতিতে প্রবাসী ভোটাররা একটি অ্যাপের মাধ্যমে ফেস রিকগনিশন ব্যবহার করে নিবন্ধন করবেন এবং প্রি-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন। এরপর যিনি তার হয়ে ভোট দেবেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ওই নিবন্ধনের সময় জমা দিতে হবে।

প্রক্সি ভোটার নিজেও তার ভোট দিতে পারবেন। এটি অনেকটা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র মতো।

ইসি জানায়, এই নিবন্ধনের ভিত্তিতে কারা প্রক্সি হিসেবে ভোট দেবেন, তা ভোটার তালিকায় উল্লেখ থাকবে এবং আলাদা কোনো তালিকা তৈরির প্রয়োজন হবে না।

প্রক্সি ভোটের সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি

তবে প্রক্সি পদ্ধতির নানা দুর্বলতা ও জটিলতার কথাও উঠে এসেছে। গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইসির এক সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রক্সি ভোটকে চূড়ান্ত পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রক্সি ভোটিংয়ে সবচেয়ে বড় সংকট হলো, প্রবাসীর হয়ে প্রতিনিধি ভোট দিলেও সেটি সত্যিই তার ইচ্ছার প্রতিফলন কি না, তা নিশ্চিত করা কঠিন।

অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, “বন্ধু বা আত্মীয়কে ভোট দিতে বললেও সে কি প্রবাসীর মত অনুযায়ী ভোট দেবে? না দিলে ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হবে না?”

তিনি আরও বলেন, “এই পদ্ধতি হলে রাজনৈতিক দলগুলো অর্থের বিনিময়ে প্রক্সি ঠিক করে ভোট কিনে নিতে পারে।”

বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনায় অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিংয়ের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত উঠে এসেছে। ইসির পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. আব্দুল আলীম বলেন, “প্রক্সি যদি আমার বাবা, ভাই কিংবা বোনও হয়, তবুও সে তার ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিতে পারে—এই শঙ্কাটাই সবচেয়ে বড়।”

অনলাইন ও পোস্টাল ভোটিংয়ের চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট নিয়েও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহার করে একটি সুরক্ষিত অনলাইন সিস্টেম গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

তবে এতে পুনঃগণনার সুযোগ না থাকা এবং হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অধ্যাপক কামাল বলেন, “প্রথমত, ভোটার যা ভোট দিলেন, তা ঠিকভাবে গণনা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনলাইন ভোটে পুনঃগণনার সুযোগ নেই।”

এক্ষেত্রে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও ভাবছে ইসি। এতে ভোটাররা নিজের মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে ভোট দিতে পারবেন বলে জানান ড. আব্দুল আলীম।

তবে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন হলে এই সীমিত সময়ের মধ্যেই পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হতে পারে।

পোস্টাল ভোটের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বলা হচ্ছে, ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনতে সময় বেশি লাগে, যা বর্তমান আইন অনুযায়ী বাস্তবায়ন কঠিন।

তবে যদি প্রক্সি, পোস্টাল বা অনলাইন পদ্ধতিতে কোন জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে সরাসরি ভোট আয়োজনের কথাও ভাবছে ইসি।

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যসহ কিছু দেশে গণতান্ত্রিক অনুশীলন না থাকায় সেখানে ভোট আয়োজন কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. আলীম।

এই সব বিষয় মাথায় রেখে ইসি বলছে, হয়তো একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি গ্রহণযোগ্য পন্থা নির্ধারণ করা হতে পারে।

সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “সময়, ব্যয় ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় এমন একটি উপায় খুঁজে বের করবো, যা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হবে।”

প্রবাসীদের ভোট: আলোচনার পটভূমি

নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৩৭ লাখ। এর মধ্যে প্রবাসে প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ ভোটার রয়েছেন, যারা এতদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরেই তারা ভোটাধিকারের সুযোগ দাবি করে আসছিলেন।

গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসীদের ভোটাধিকার চালুর পক্ষে মত দেন।

এরপর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। সেই কমিশনের অন্যতম প্রস্তাব ছিল প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, “প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও তাই প্রয়োজন।”

এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি-সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে ইসি।

এই কমিটির কাজই হলো প্রবাসীদের জন্য প্রস্তাবিত পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ করা।

সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “সময়, ব্যয় এবং মানের দিকগুলো বিবেচনায় রেখে যে পদ্ধতিটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, সেটিই বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

প্রবাসীরা ভোটার হচ্ছেন কিন্তু কোন পদ্ধতিতে?

আপডেট সময় : ০১:১৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হলেও এবারই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে চারটি পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে কমিশন।

এই চার পদ্ধতি হলো: প্রক্সি ভোটিং, অনলাইন ভোটিং, পোস্টাল ব্যালট এবং সশরীরে ভোটদান। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “এই চারটি পদ্ধতি নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে মতামত চেয়েছি। আমরা এমন একটি পদ্ধতিই অনুসরণ করব, যেটি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হবে।”

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকেই এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি।

তবে এসব পদ্ধতির প্রায় সবগুলোতেই কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, পেপার ট্রেইল না থাকলে এসব পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

চলতি মাসেই চূড়ান্ত হতে পারে পদ্ধতি

গত দুই মাস ধরে বিভিন্ন পর্যালোচনা শেষে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রক্সি, অনলাইন এবং পোস্টাল ভোটিংয়ের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সরাসরি ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাও প্রস্তাবনায় উঠে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, “নির্বাচন কমিশনের হাতে সময় কম, সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে যেখানে সম্ভব সেখানে পোস্টাল এবং যেসব দেশে সুযোগ আছে, সেখানে সরাসরি ভোট চালু করা যেতে পারে।”

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের মতামত জানাতে ১৫ মে পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছিল ইসি। এখন প্রাপ্ত পরামর্শগুলো বিশ্লেষণ করে চলতি মাসেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে কমিশন।

প্রক্সি ভোটিংয়ের দিকে ঝুঁকছে কি ইসি?

এই পদ্ধতিতে প্রবাসী ভোটাররা একটি অ্যাপের মাধ্যমে ফেস রিকগনিশন ব্যবহার করে নিবন্ধন করবেন এবং প্রি-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন। এরপর যিনি তার হয়ে ভোট দেবেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ওই নিবন্ধনের সময় জমা দিতে হবে।

প্রক্সি ভোটার নিজেও তার ভোট দিতে পারবেন। এটি অনেকটা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র মতো।

ইসি জানায়, এই নিবন্ধনের ভিত্তিতে কারা প্রক্সি হিসেবে ভোট দেবেন, তা ভোটার তালিকায় উল্লেখ থাকবে এবং আলাদা কোনো তালিকা তৈরির প্রয়োজন হবে না।

প্রক্সি ভোটের সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি

তবে প্রক্সি পদ্ধতির নানা দুর্বলতা ও জটিলতার কথাও উঠে এসেছে। গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইসির এক সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রক্সি ভোটকে চূড়ান্ত পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রক্সি ভোটিংয়ে সবচেয়ে বড় সংকট হলো, প্রবাসীর হয়ে প্রতিনিধি ভোট দিলেও সেটি সত্যিই তার ইচ্ছার প্রতিফলন কি না, তা নিশ্চিত করা কঠিন।

অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, “বন্ধু বা আত্মীয়কে ভোট দিতে বললেও সে কি প্রবাসীর মত অনুযায়ী ভোট দেবে? না দিলে ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হবে না?”

তিনি আরও বলেন, “এই পদ্ধতি হলে রাজনৈতিক দলগুলো অর্থের বিনিময়ে প্রক্সি ঠিক করে ভোট কিনে নিতে পারে।”

বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনায় অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিংয়ের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত উঠে এসেছে। ইসির পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. আব্দুল আলীম বলেন, “প্রক্সি যদি আমার বাবা, ভাই কিংবা বোনও হয়, তবুও সে তার ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিতে পারে—এই শঙ্কাটাই সবচেয়ে বড়।”

অনলাইন ও পোস্টাল ভোটিংয়ের চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট নিয়েও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহার করে একটি সুরক্ষিত অনলাইন সিস্টেম গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

তবে এতে পুনঃগণনার সুযোগ না থাকা এবং হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অধ্যাপক কামাল বলেন, “প্রথমত, ভোটার যা ভোট দিলেন, তা ঠিকভাবে গণনা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনলাইন ভোটে পুনঃগণনার সুযোগ নেই।”

এক্ষেত্রে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও ভাবছে ইসি। এতে ভোটাররা নিজের মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে ভোট দিতে পারবেন বলে জানান ড. আব্দুল আলীম।

তবে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন হলে এই সীমিত সময়ের মধ্যেই পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হতে পারে।

পোস্টাল ভোটের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বলা হচ্ছে, ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনতে সময় বেশি লাগে, যা বর্তমান আইন অনুযায়ী বাস্তবায়ন কঠিন।

তবে যদি প্রক্সি, পোস্টাল বা অনলাইন পদ্ধতিতে কোন জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে সরাসরি ভোট আয়োজনের কথাও ভাবছে ইসি।

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যসহ কিছু দেশে গণতান্ত্রিক অনুশীলন না থাকায় সেখানে ভোট আয়োজন কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. আলীম।

এই সব বিষয় মাথায় রেখে ইসি বলছে, হয়তো একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি গ্রহণযোগ্য পন্থা নির্ধারণ করা হতে পারে।

সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “সময়, ব্যয় ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় এমন একটি উপায় খুঁজে বের করবো, যা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হবে।”

প্রবাসীদের ভোট: আলোচনার পটভূমি

নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৩৭ লাখ। এর মধ্যে প্রবাসে প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ ভোটার রয়েছেন, যারা এতদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরেই তারা ভোটাধিকারের সুযোগ দাবি করে আসছিলেন।

গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসীদের ভোটাধিকার চালুর পক্ষে মত দেন।

এরপর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। সেই কমিশনের অন্যতম প্রস্তাব ছিল প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, “প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও তাই প্রয়োজন।”

এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি-সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে ইসি।

এই কমিটির কাজই হলো প্রবাসীদের জন্য প্রস্তাবিত পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ করা।

সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “সময়, ব্যয় এবং মানের দিকগুলো বিবেচনায় রেখে যে পদ্ধতিটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, সেটিই বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।”