পদত্যাগে রাজি নন এনসিপির দুই উপদেষ্টা, সেপ্টেম্বরে বলা হয়েছিল
- আপডেট সময় : ০২:১২:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
- / 154
অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে তাঁরা আরও কিছু সময় নিতে চেয়েছেন। এই দুই উপদেষ্টা হলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো।
সূত্রটি জানায়, মাহফুজ আলম এখন পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনি সরকারে থেকে দায়িত্ব পালন করতে চান। অপরদিকে, আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
দুই উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আসিফ মাহমুদ গত ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি পদত্যাগ করবেন। অন্যদিকে মাহফুজ আলম ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, “দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি যে আমি কখন নামব। মানে, আমি কখন নামব, আমি জানি না।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা প্রধান উপদেষ্টাসহ ২৩ জন, তাঁদের মধ্যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি।
সূত্র বলছে, ছাত্র প্রতিনিধিদের অন্তত একজন যেন উপদেষ্টা পরিষদে থেকে যান—এটি চান ছাত্র উপদেষ্টারা। তাঁদের ধারণা, কেউ না থাকলে পরিষদের ভেতরে তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন ছাত্র প্রতিনিধি মো. নাহিদ ইসলাম। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হন। এনসিপি গঠন করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণেরা।
মাহফুজ আলম শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে গত বছরের ২৮ আগস্ট নিয়োগ পান। পরে ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তবে তখন তাঁকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নাহিদ ইসলাম পদত্যাগের পর তাঁকে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফকে সরিয়ে গত বছরের নভেম্বরে তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এই দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা এনসিপির ঘনিষ্ঠ এবং দলটির পরামর্শক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। সর্বশেষ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে ১৪ অক্টোবর রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে। সেখানে দলের অন্যান্য নেতাদের পাশাপাশি অংশ নেন একজন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাও।
তবে এনসিপি নেতাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় বিভিন্ন দলের কাছ থেকে নাম নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে শুধু দুজন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে পদত্যাগের জন্য বলা তাঁদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। এ বিষয়টি গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা তুলেছেন বলে জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দলীয় সংযোগ থাকা সদস্যদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, উপদেষ্টাদের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ তৈরি করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরও অভিযোগ করেছেন, পরিষদের কিছু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
বিষয়টি নিয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে যেসব মন্তব্য আসছে, তা সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। এসব বক্তব্য জনগণের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করতে পারে। তাই এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “দুই ছাত্র উপদেষ্টার উচিত হয় পদত্যাগ করা, না হয় স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া যে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং এনসিপির সঙ্গে তাঁদের কোনো প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য সম্পর্ক নেই।”


















