ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে নির্বাচনের আহ্বান খালেদা জিয়ার
৭ বছর পর বিএনপির বর্ধিত সভা, অংশ নিচ্ছেন সাড়ে ৪ হাজার নেতাকর্মী
- আপডেট সময় : ০২:৫৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 319

রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত দলের বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এ আহ্বান জানান তিনি। লন্ডনে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
৭ বছর পর বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমাদের শেষ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকেরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে। এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসররা ও বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে।
চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও সবসময় নেতাকর্মীদের পাশে থাকার কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘ পনের বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লক্ষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখনও আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন- আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে।
তিনি বলেন, আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আপনাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরও উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে আমাদের এতদিনকার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সব সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার- “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়”।
বক্তৃতার শুরুতে ছয় বৎসর পর ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে আজকের মতো সবাই একত্রিত হতে পারার কথা উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করেন তিনি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে শহীদ এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় শহীদদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
বর্ধিত সভায় অংশ নিচ্ছেন সাড়ে ৪ হাজার নেতাকর্মী
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এই বর্ধিত সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব কর্মকর্তা ও সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন। দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরাও অংশ নিয়েছেন। সভায় মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা উপস্থিত আছেন।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ও মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক যে প্রার্থী প্রাথমিক চিঠি পেয়েছিলেন, তারাও এই সভায় অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, সভায় সারাদেশ থেকে সাড়ে ৪ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন। বর্ধিত সভা উপলক্ষ্যে আমরা বিএনপি পরিবার ‘আস্থা’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে।
সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সকালের নাস্তা, দুপুরে খাবার, বিকেলের নাস্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকবে চা-কফির ব্যবস্থা।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রয়ারি রাজধানীর ‘লা মেরিডিয়ানে’ বিএনপির বর্ধিত কমিটির সভা হয়। যেখানে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। এর ৪ দিন পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠায় আওয়ামী লীগ সরকার।


















