ঢাকা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি, ভাঙলেন সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / 75

নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র জোহরান মামদানি

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে কোনো মুসলমান কিংবা দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র হননি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি হয়ে গেলেন শহরটির গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র।

বিজয়ী হওয়ার পর প্রথম ভাষণে মামদানি বলেন, নিউ ইয়র্কবাসী পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে—একটি সামর্থ্যবান শহরের পক্ষে রায় দিয়েছে।

তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক রাজবংশকে উৎখাত করেছি।” তাঁর ভাষায়, নিউইয়র্ক শহর “নতুনভাবে জন্ম নিয়েছে।”

তাঁর জয় অনেক আগেই অনুমান করা হচ্ছিল।

নির্বাচনের আগেই শহরের বিভিন্ন স্থানে মামদানির সমর্থকরা উৎসব শুরু করেন। বিপুলসংখ্যক সমর্থক ও ভোটার সেখানে আনন্দ-উল্লাসে যোগ দেন।

ব্রুকলিন প্যারামাউন্ট থিয়েটারে মামদানি নির্বাচনী রাতের পার্টির আয়োজন করেন। উৎসবের পরিবেশে অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় করেন।

ওই পার্টিতে দেখা গেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম বিরোধী হিসেবে পরিচিত নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসকে—তাকে ভিড়ের সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা যায়।

এদিকে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী কার্টিস স্লিওয়াও ইতোমধ্যে মামদানিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

স্লিওয়া বলেন, “আমাদের একজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।” মঙ্গলবার রাতে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমি তাকে শুভকামনা জানাই, কারণ তিনি ভালো করলে আমরাও ভালো করব।”

নির্বাচনকেন্দ্রিক ওয়াচ পার্টি ও বারগুলোতেও মানুষের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়তে থাকে।

ম্যানহাটনের এক ওয়াচ পার্টিতে—যা কোনো প্রার্থীর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না—মামদানির জয়ের আলোচনায় কয়েক দফা করতালি, চিৎকার ও উল্লাস দেখা যায়।

একজন বলেন, “এটা একটা বিরাট ব্যাপার।”

মধ্য ব্রুকলিনের একটি বারের মানুষ জোরে জোরে চিৎকার ও উল্লাস করেন। কারণ মার্কিন গণমাধ্যমের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়—মামদানি ৫১ শতাংশ এবং কুওমো ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

এর ফলে গত ১০০ বছরের বেশি সময় পর নিউ ইয়র্ক শহর সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র পেল। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আগে সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র ছিলেন হিউ জে গ্রান্ট, যিনি ১৮৮৯ সালে নির্বাচিত হন।

সিটি বোর্ড অব ইলেকশনস এক্স-এ পোস্ট করে জানায়, পাঁচ দশকের মধ্যে এবার ভোটার উপস্থিতি ছিল সর্বোচ্চ।

পোস্টে বলা হয়, “আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দুই মিলিয়ন ভোট পেয়েছি—১৯৬৯ সালের পর প্রথমবারের মতো!”

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান ও মন্তব্যের কারণে এবার নির্বাচন আরও বেশি আলোচনায় আসে।

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বামপন্থি প্রার্থী জোহরান মামদানির মেয়র প্রার্থীতা জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। জরিপেও তিনি এগিয়ে ছিলেন।

জোহরানকে ঠেকাতে শেষ সময়ে নিজেই ভোটের মাঠে নামেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি সরাসরি আহ্বান জানান যাতে মামদানি নির্বাচিত না হন।

তিনি সতর্ক করে বলেন—মামদানি মেয়র হলে নিউ ইয়র্কে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ দেওয়া হবে না।

জোহরান মামদানির মেয়র হওয়া বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৯২ সালের পর তিনি শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রথম মুসলিম মেয়র।

কেবল এই কারণেই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার বিরুদ্ধে তাঁর জয়কে অসাধারণ বলা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি তিনি এমন এক রাজনৈতিক ধারার প্রতীক, যেটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বামপন্থিরা বহুদিন ধরে খুঁজে আসছিলেন।

অন্যদিকে একই দিনে ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান প্রার্থী উইনসোম আর্ল-সিয়ার্সকে হারিয়ে জিতেছেন ডেমোক্র্যাট অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার।

নিজের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর স্প্যানবার্গার সমর্থক ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে লক্ষ্য করে বলেন, “আজ রাতে আমরা সমগ্র বিশ্বকে একটি বার্তা পাঠিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, তারা “বিশৃঙ্খলার বাইরে” শান্ত ভার্জিনিয়া বেছে নিয়েছে।

ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি বলেছে, এটি প্রমাণ করে যে ভোটাররা “ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের উগ্র এজেন্ডাকে প্রত্যাখ্যান করছে।”

স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। ডিএনসি তাকে বলেন, তিনি “সমস্ত ভার্জিনিয়ানের নেতা।”

এছাড়া মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়—নিউ জার্সির গভর্নর পদে জিতেছেন ডেমোক্র্যাট মিকি শেরিল।

তিনি রিপাবলিকান জ্যাক সিয়াত্তারেলিকে পরাজিত করেছেন এমন এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, যেখানে রাজ্যের ব্যয়বৃদ্ধির ইস্যুটি প্রধান ছিল। এটিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এক ধরনের গণভোট হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি, ভাঙলেন সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড

আপডেট সময় : ০৭:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে কোনো মুসলমান কিংবা দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র হননি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি হয়ে গেলেন শহরটির গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র।

বিজয়ী হওয়ার পর প্রথম ভাষণে মামদানি বলেন, নিউ ইয়র্কবাসী পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে—একটি সামর্থ্যবান শহরের পক্ষে রায় দিয়েছে।

তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক রাজবংশকে উৎখাত করেছি।” তাঁর ভাষায়, নিউইয়র্ক শহর “নতুনভাবে জন্ম নিয়েছে।”

তাঁর জয় অনেক আগেই অনুমান করা হচ্ছিল।

নির্বাচনের আগেই শহরের বিভিন্ন স্থানে মামদানির সমর্থকরা উৎসব শুরু করেন। বিপুলসংখ্যক সমর্থক ও ভোটার সেখানে আনন্দ-উল্লাসে যোগ দেন।

ব্রুকলিন প্যারামাউন্ট থিয়েটারে মামদানি নির্বাচনী রাতের পার্টির আয়োজন করেন। উৎসবের পরিবেশে অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় করেন।

ওই পার্টিতে দেখা গেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম বিরোধী হিসেবে পরিচিত নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসকে—তাকে ভিড়ের সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা যায়।

এদিকে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী কার্টিস স্লিওয়াও ইতোমধ্যে মামদানিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

স্লিওয়া বলেন, “আমাদের একজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।” মঙ্গলবার রাতে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমি তাকে শুভকামনা জানাই, কারণ তিনি ভালো করলে আমরাও ভালো করব।”

নির্বাচনকেন্দ্রিক ওয়াচ পার্টি ও বারগুলোতেও মানুষের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়তে থাকে।

ম্যানহাটনের এক ওয়াচ পার্টিতে—যা কোনো প্রার্থীর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না—মামদানির জয়ের আলোচনায় কয়েক দফা করতালি, চিৎকার ও উল্লাস দেখা যায়।

একজন বলেন, “এটা একটা বিরাট ব্যাপার।”

মধ্য ব্রুকলিনের একটি বারের মানুষ জোরে জোরে চিৎকার ও উল্লাস করেন। কারণ মার্কিন গণমাধ্যমের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়—মামদানি ৫১ শতাংশ এবং কুওমো ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

এর ফলে গত ১০০ বছরের বেশি সময় পর নিউ ইয়র্ক শহর সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র পেল। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আগে সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র ছিলেন হিউ জে গ্রান্ট, যিনি ১৮৮৯ সালে নির্বাচিত হন।

সিটি বোর্ড অব ইলেকশনস এক্স-এ পোস্ট করে জানায়, পাঁচ দশকের মধ্যে এবার ভোটার উপস্থিতি ছিল সর্বোচ্চ।

পোস্টে বলা হয়, “আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দুই মিলিয়ন ভোট পেয়েছি—১৯৬৯ সালের পর প্রথমবারের মতো!”

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান ও মন্তব্যের কারণে এবার নির্বাচন আরও বেশি আলোচনায় আসে।

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বামপন্থি প্রার্থী জোহরান মামদানির মেয়র প্রার্থীতা জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। জরিপেও তিনি এগিয়ে ছিলেন।

জোহরানকে ঠেকাতে শেষ সময়ে নিজেই ভোটের মাঠে নামেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি সরাসরি আহ্বান জানান যাতে মামদানি নির্বাচিত না হন।

তিনি সতর্ক করে বলেন—মামদানি মেয়র হলে নিউ ইয়র্কে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ দেওয়া হবে না।

জোহরান মামদানির মেয়র হওয়া বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৯২ সালের পর তিনি শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রথম মুসলিম মেয়র।

কেবল এই কারণেই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার বিরুদ্ধে তাঁর জয়কে অসাধারণ বলা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি তিনি এমন এক রাজনৈতিক ধারার প্রতীক, যেটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বামপন্থিরা বহুদিন ধরে খুঁজে আসছিলেন।

অন্যদিকে একই দিনে ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান প্রার্থী উইনসোম আর্ল-সিয়ার্সকে হারিয়ে জিতেছেন ডেমোক্র্যাট অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার।

নিজের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর স্প্যানবার্গার সমর্থক ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে লক্ষ্য করে বলেন, “আজ রাতে আমরা সমগ্র বিশ্বকে একটি বার্তা পাঠিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, তারা “বিশৃঙ্খলার বাইরে” শান্ত ভার্জিনিয়া বেছে নিয়েছে।

ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি বলেছে, এটি প্রমাণ করে যে ভোটাররা “ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের উগ্র এজেন্ডাকে প্রত্যাখ্যান করছে।”

স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। ডিএনসি তাকে বলেন, তিনি “সমস্ত ভার্জিনিয়ানের নেতা।”

এছাড়া মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়—নিউ জার্সির গভর্নর পদে জিতেছেন ডেমোক্র্যাট মিকি শেরিল।

তিনি রিপাবলিকান জ্যাক সিয়াত্তারেলিকে পরাজিত করেছেন এমন এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, যেখানে রাজ্যের ব্যয়বৃদ্ধির ইস্যুটি প্রধান ছিল। এটিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এক ধরনের গণভোট হিসেবেও দেখা হচ্ছে।