নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করল তালেবান
- আপডেট সময় : ০৬:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 194
চার বছর আগে তালেবান আফগানিস্তানে পুনরায় ক্ষমতা দখল করলে অনেকে ভেবেছিলেন, আগের মতো আর নাও থাকতে পারে তারা। নেতাদের বক্তব্যেও কিছুটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছিল। তবে সময় যতই এগোচ্ছে, পুরোনো তালেবানকেই আবার দেখা যাচ্ছে।
সর্বশেষ নির্দেশে তালেবান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা বই বাদ দিয়েছে। একইসঙ্গে মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি সম্পর্কিত শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নারীদের লেখা দেড়শ বইয়ের তালিকায় রয়েছে সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি নামের একটি বইও। মোট ৬৮০টি বইকে নিষিদ্ধ তালিকায় রাখা হয়েছে। এগুলোকে বলা হয়েছে ‘শরিয়াবিরোধী’ এবং ‘তালেবান নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও জানানো হয়েছে, তারা ১৮টি বিষয় আর পড়াতে পারবে না। তালেবানের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় শরিয়ার মৌলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ সিদ্ধান্তকে ২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, অনৈতিকতা ঠেকাতেই এ ব্যবস্থা।
যদিও এসব বিধিনিষেধ সাধারণ জীবনেও প্রভাব ফেলছে, তবে নারী ও মেয়েদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে গুরুতর।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে মেয়েদের পড়াশোনা নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২৪ সালের শেষের দিকে ধাত্রীবিদ্যা সম্পর্কিত কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের বিষয়ক অধ্যয়নও নিশানায় এসেছে। নিষিদ্ধ ১৮টি বিষয়ে ছয়টি নারী-সম্পর্কিত, যার মধ্যে রয়েছে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন এবং উইমেনস সোশিওলজি।
আন্তর্জাতিক সমালোচনার জবাবে তালেবান সরকার দাবি করে আসছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নারীদের অধিকার রক্ষা করে।
নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিবিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
‘বিশাল শূন্যতা’
নিষিদ্ধ বইগুলো পর্যালোচনাকারী কমিটির এক সদস্য বিবিসি আফগানকে বলেন, “নারীদের লেখা কোনও বই পড়ানোর অনুমতি নেই।”
তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগে বিচার উপমন্ত্রী ছিলেন জাকিয়া আদেলি। তিনি এ সিদ্ধান্তে একটুও বিস্মিত নন।
তিনি বিবিসিকে বলেন, “গত চার বছরে তালেবান যা করেছে, তা বিবেচনা করলে পাঠ্যক্রমে এ ধরনের পরিবর্তন তাদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক নয়।
“নারীবিদ্বেষী মানসিকতা ও নীতির কারণে যখন নারীদের পড়াশোনার সুযোগই নেই, তখন তাদের চিন্তা, মতামত ও লেখালেখিও দমন হবে, সেটাই স্বাভাবিক।”
নিষিদ্ধ তালিকায় নিজের লেখা একটি বই থাকার কথাও জানান জাকিয়া আদেলি।
গত আগস্টের শেষ দিকে জারি হওয়া এই নতুন নির্দেশে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাডেমিক উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিউবি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, এ সিদ্ধান্ত ধর্মীয় আলেম ও বিশেষজ্ঞদের প্যানেলের পরামর্শে নেওয়া হয়েছে।
নারীদের লেখা বইয়ের পাশাপাশি নিষিদ্ধের তালিকায় পড়েছে প্রতিবেশী ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও।
বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, আফগান পাঠ্যক্রমে ইরানি বিষয়বস্তু ঢোকা ঠেকাতেই এ পদক্ষেপ।
সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি বই রয়েছে, এর মধ্যে ৩১০টি লেখা ইরানি লেখকদের বা প্রকাশিত হয়েছে ইরানে।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে শিক্ষায় বিরাট শূন্যতা তৈরি হবে, যা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলেন, “ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক শিক্ষা সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রাথমিক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। এগুলো বাদ দেওয়ায় উচ্চশিক্ষায় এক বিশাল ফাঁক তৈরি হয়েছে।”
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বিবিসিকে বলেন, এখন তাদের তালেবান সরকারের বিধি-নিষেধ মেনে পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় তৈরি করতে হচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই অধ্যায়গুলো আদৌ বৈশ্বিক মানদণ্ডে প্রস্তুত করা যাবে কি না।

















