নতুন বিল উত্থাপন ও বিল পাসের হিড়িক
তাকমিল এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদানসংক্রান্ত আইন-২০১৮’ সংসদে উত্থাপিত
- আপডেট সময় : ০৬:০২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / 1954
সরকারের শেষ সময়ে দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে বিলের ছড়াছড়ি চলছে। নতুন বিল উত্থাপন ও আগে উত্থাপিত বিল পাসের হিড়িক পড়েছে। বিলের কারণে মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব দেয়া হচ্ছে টেবিলে। আর ৭১ বিধির জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকছে না। অধিবেশনের কার্যতালিকায় না থাকা সত্ত্বেও মাত্র ১০ মিনিটের নোটিসে বিল উত্থাপিত হতে দেখা গেছে। আর স্বল্প সময়ের এ অধিবেশনে বিল উত্থাপন ও পাসের জন্য তাড়াহুড়া করছে সরকার। গত কয়েকদিনের অধিবেশনের তথ্যের ভিত্তিতে এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংসদের চলতি অধিবেশন শুরু হয়েছে গত ৯ সেপ্টেম্বর। চলবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ অধিবেশনের প্রথম দিন শোক প্রস্তাবের পর মুলতবি হয়। আবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তৃতীয় দিনের অধিবেশন চলে মাত্র ৪৫ মিনিট। বাকি আট দিনে ১০-১২টি বিল পাস এবং প্রায় ২২টি বিল উত্থাপন করতে চায় সরকারি দল। এমনকি প্রথা ভেঙে চলতি অধিবেশনেই আল হাইআতুল উলয়ালিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীন ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদানসংক্রান্ত আইন-২০১৮’ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিশেষ ক্ষমতা বলে বিলটি উত্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
চলতি অধিবেশনে গতকাল পর্যন্ত ৫টি বিল পাস ও ডজন খানেক বিল উত্থাপিত হয়েছে। অধিকাংশ দিন মাগরিবের নামাজের পর ঘণ্টা দুয়েক চলা অধিবেশনে গড়ে ২টি বিল পাস ও ৪টি উত্থাপিত হয়েছে। চলতি অধিবেশনে উত্থাপিত বিলগুলো অক্টোবরের অধিবেশনে পাস হতে পারে। সে কারণে প্রতিদিন ৪-৫টি বিল উত্থাপনের জন্য বেশ তাড়াহুড়া করতে দেখা গেছে সংসদে সভাপতিত্বকারী স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে।
গত বৃহস্পতিবার আলোচিত সড়ক পরিবহন বিল সংসদে উত্থাপন করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিলটিতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তিন-চার জন সংসদ সদস্য বেশ কিছু সংশোধনী দিলেও তা দ্রুততার সঙ্গে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। এ দিন সংসদে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয় মাত্র ২০ মিনিটে।
এদিকে বিল যাচাইবাছাই বা সংশোধনীর সুযোগ না দিয়েই তড়িঘড়ি পাস বা উত্থাপিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক এমপি। এ বিষয়ে ফকরুল ইমাম বলেছেন, সরকারের শেষ সময়ে তারা বেশ কিছু বিল পাস করাতে চায়, সে কারণে তাড়াহুড়ো করছে। এজন্য অনেক বিলে সংসদীয় রীতিনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয় থেকে যাচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।
এ বিষয়ে ট্রারান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, জাতীয় সংসদের অন্যতম মূল কাজ আইন প্রণয়ন করা। অথচ সংসদে এর পেছনে মাত্র ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয় এবং প্রতিটি বিল পাস করতে গড়ে সময় লেগেছে মাত্র ৩৫ মিনিট। এতে বিলগুলোতে অনেক ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী, একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সংসদ নির্বাচনের জন্য মেয়াদের শেষ ৯০ দিনে এই বিধানের শিথিলতা রয়েছে। অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ বসার বাধ্যবাধকতা নেই। সে কারণে ১৪ অক্টোবর ১০ম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন বসাতে চায় সরকার। যাতে বাকি বিলগুলো তারা পাস করে নিতে পারে।




















