ঢাকা ০৬:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

দয়া নয়, ঈদের ছুটি শ্রমজীবি মুসলমানদের অধিকার
মো: এনাম উদ্দিন

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:১৬:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুন ২০২২
  • / 809
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্রিটেনে মুসলমানদের দুটি বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদের দিন ছুটির দাবী দীর্ঘ দিনের। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও পারিবারিক- সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে এই দিনে আনন্দ ভাগাভাগি করে চলার তাগিদ ইসলামে সুনিদৃষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বিষয়টি যে আমাদের মুসলিম সম্পদ্রায়ের বেশীরভাগ মানুষ জানেন না- তা বলা যাবে না।

বলা যায়, ব্রিটেনে বিশেষ করে মুসলিম বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন না । তাঁদের অনুধাবনে যেন নেই এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব।

ব্রিটেনে ‘রাইস এন্ড কারী’ শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশী কমিউনিটির অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে কারী ইন্ড্রাস্ট্রির ভূমিকা অসীম। বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে শতকরা ৯০/৯৫ ভাগ রেস্টুরেন্ট মালিক ও স্টাফ মুসলমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেষ্টুরেন্টগুলোতে ঈদের ছুটি নেই। ক্যাটারার্সরা ঈদের দিন ছুটি নিলেও স্টাফদের জন্য সে সুযোগ নেই। উপরন্ত, ব্রিটেনের ছোট শহর বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের রেষ্টুরেন্টগুলোর ষ্টাফদের ঈদের নামাজ পড়ার সুযোগটিও জুটেনা।

বলা হয়- ব্রিটেনে বাংলাদেশেী মালিকানাধীন প্রায় ১২ হাজার রেস্ট্রুরেন্ট ও টেকওয়ে রয়েছে। যেখানে কাজ করছেন প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক। এই ইন্ড্রাস্ট্রির সংখ্যাগরিষ্ট শ্রমিক হলেন বাংলাদেশী এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কমিউনিটিতে অর্থনৈতিক ভিত্তি গঠনে এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক দীর্ঘদিন থেকে মুসলমানদের দুটি বড় উৎসবে ছুটি দাবী জানিয়ে আসলেও তা আজ অবধি উপেক্ষিত হয়ে আসছে।

ঈদের ছুটি না পাওয়ার কারণ খুব সরল ও স্পষ্ট। স্টাফদের মোটাদাগে অভিযোগ হলো- মালিকপক্ষ মাত্র দুদিনের ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির হিসাব কষেই মূলত এতোদিন থেকে ঈদের ছুটি দিচ্ছেন না । কিন্তু, পরোক্ষভাবে দীর্ঘমেয়াদী অনুমেয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

 খ.

আমরা টাকার পিছনে এমনভাবে ছুটছি যে আসল সুখ যে কী, কিসেইবা আনন্দ; বেঁহুশের মত বেমালুম ভুলে যাচ্ছি কিংবা সচেতনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছি। ব্রিটেনে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ভূমিকা এদেশের অর্থনীতি তথা আমাদের কমিউনিটির জন্য অনস্বীকার্য -একথা বলাই বাহুল্য। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে টাকা সুখ, আনন্দ ও প্রয়োজনের জন্য। আমরা জানি আমাদের কত টাকা আছে কিন্তু আমরা জানি না আমাদের জীবনে আমাদের জন্য আর কতটা সময় আছে।

ঈদে সাম্য , ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার চর্চা হয়। মালিকপক্ষ একটু মানবিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ নিয়ে বিষয়টি দেখলেই – অগণিত পরিবার তাদের বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে,স্বজন-প্রতিবেশীদের নিয়ে অনাবিল আনন্দ ও তৃপ্তি নিয়ে ঈদকে উপভোগ করতে পারেন।

অথচ মাত্র কিছু লাভের আশায় সংখ্যালঘিষ্ট ব্যবসায়ীরা সংখ্যাঘরিষ্ট ষ্টাফ ও তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দে দূ:খ ও মন খারাপের অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। চাইনিজরা তাদের বড় দিনে অনেক ক্ষেত্রে সপ্তাহ-দুয়েক ব্যবসা বন্ধ রাখে। আর ক্রীসমাস ডে-তে বন্ধ রাখতে বাধ্য। অন্যান্য ধর্মালম্বীরা তাদের ধর্মীয় উৎসব দিনে ব্যবসা বন্ধ রাখে। এতে করে তাঁদের ব্যবসা লাটে উঠেছে বলে কোন উদাহরণ নেই।

ঈদের দিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে মালিকপক্ষ যেভাবে তিরস্কার ও ঘৃণা পাচ্ছেন। তার পরিবর্তে বছরের দুই ঈদে ছুটি ঘোষণা দিলে অগণিত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের দোয়া পেতে পারেন সহজে। তাছাড়া মানষিক সতেজতা ও ফুরফুরে মেজাজে কাজে ফিরার কারণে কাজের গুণগত মান সুরক্ষা পায়;যা ব্যবসার জন্য সার্বিকভাবে ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য।

তবে আশার কথা হচ্ছে -ঈদের দিন এখন অনেকে তাঁদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। আমাদের উচিত যারা ঈদের দিন তাঁদের ব্যবসা বন্ধ রাখছেন তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা। যে সব প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা ছুটির সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের উচিত এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞবোধ প্রকাশ করা ও কাজের গুণগত মান বাড়িয়ে ব্যবসাকে আরও সমৃদ্ধ করা।

৫২বাংলা ও সাপ্তাহিক পত্রিকার –‘যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই’- সামাজিক আন্দোলনটি বৃটেনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক।মানুষ জাগ্রত হোক। দাবী আদায়ে দৃঢ়প্রতিবাদি ও প্রত্যয়ী হোক- এই প্রত্যাশা।

সকল ধর্মের শ্রমিকদের তাদের উৎসব দিনে ছুটির দাবীতে সোচ্চার হওয়া এখন সময়ের দাবী। ঈদের ছুটি- শ্রমজীবি মুসলমানদের অধিকার; দয়া নয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে, দাবি আদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র-এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

মো: এনাম উদ্দিন, সাবেক শিক্ষক ও হেড অফ প্রোগ্রাম,৫২বাংলা

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দয়া নয়, ঈদের ছুটি শ্রমজীবি মুসলমানদের অধিকার
মো: এনাম উদ্দিন

আপডেট সময় : ০৬:১৬:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুন ২০২২

ব্রিটেনে মুসলমানদের দুটি বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদের দিন ছুটির দাবী দীর্ঘ দিনের। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও পারিবারিক- সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে এই দিনে আনন্দ ভাগাভাগি করে চলার তাগিদ ইসলামে সুনিদৃষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বিষয়টি যে আমাদের মুসলিম সম্পদ্রায়ের বেশীরভাগ মানুষ জানেন না- তা বলা যাবে না।

বলা যায়, ব্রিটেনে বিশেষ করে মুসলিম বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন না । তাঁদের অনুধাবনে যেন নেই এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব।

ব্রিটেনে ‘রাইস এন্ড কারী’ শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশী কমিউনিটির অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে কারী ইন্ড্রাস্ট্রির ভূমিকা অসীম। বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে শতকরা ৯০/৯৫ ভাগ রেস্টুরেন্ট মালিক ও স্টাফ মুসলমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেষ্টুরেন্টগুলোতে ঈদের ছুটি নেই। ক্যাটারার্সরা ঈদের দিন ছুটি নিলেও স্টাফদের জন্য সে সুযোগ নেই। উপরন্ত, ব্রিটেনের ছোট শহর বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের রেষ্টুরেন্টগুলোর ষ্টাফদের ঈদের নামাজ পড়ার সুযোগটিও জুটেনা।

বলা হয়- ব্রিটেনে বাংলাদেশেী মালিকানাধীন প্রায় ১২ হাজার রেস্ট্রুরেন্ট ও টেকওয়ে রয়েছে। যেখানে কাজ করছেন প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক। এই ইন্ড্রাস্ট্রির সংখ্যাগরিষ্ট শ্রমিক হলেন বাংলাদেশী এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কমিউনিটিতে অর্থনৈতিক ভিত্তি গঠনে এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক দীর্ঘদিন থেকে মুসলমানদের দুটি বড় উৎসবে ছুটি দাবী জানিয়ে আসলেও তা আজ অবধি উপেক্ষিত হয়ে আসছে।

ঈদের ছুটি না পাওয়ার কারণ খুব সরল ও স্পষ্ট। স্টাফদের মোটাদাগে অভিযোগ হলো- মালিকপক্ষ মাত্র দুদিনের ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির হিসাব কষেই মূলত এতোদিন থেকে ঈদের ছুটি দিচ্ছেন না । কিন্তু, পরোক্ষভাবে দীর্ঘমেয়াদী অনুমেয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

 খ.

আমরা টাকার পিছনে এমনভাবে ছুটছি যে আসল সুখ যে কী, কিসেইবা আনন্দ; বেঁহুশের মত বেমালুম ভুলে যাচ্ছি কিংবা সচেতনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছি। ব্রিটেনে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ভূমিকা এদেশের অর্থনীতি তথা আমাদের কমিউনিটির জন্য অনস্বীকার্য -একথা বলাই বাহুল্য। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে টাকা সুখ, আনন্দ ও প্রয়োজনের জন্য। আমরা জানি আমাদের কত টাকা আছে কিন্তু আমরা জানি না আমাদের জীবনে আমাদের জন্য আর কতটা সময় আছে।

ঈদে সাম্য , ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার চর্চা হয়। মালিকপক্ষ একটু মানবিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ নিয়ে বিষয়টি দেখলেই – অগণিত পরিবার তাদের বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে,স্বজন-প্রতিবেশীদের নিয়ে অনাবিল আনন্দ ও তৃপ্তি নিয়ে ঈদকে উপভোগ করতে পারেন।

অথচ মাত্র কিছু লাভের আশায় সংখ্যালঘিষ্ট ব্যবসায়ীরা সংখ্যাঘরিষ্ট ষ্টাফ ও তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দে দূ:খ ও মন খারাপের অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। চাইনিজরা তাদের বড় দিনে অনেক ক্ষেত্রে সপ্তাহ-দুয়েক ব্যবসা বন্ধ রাখে। আর ক্রীসমাস ডে-তে বন্ধ রাখতে বাধ্য। অন্যান্য ধর্মালম্বীরা তাদের ধর্মীয় উৎসব দিনে ব্যবসা বন্ধ রাখে। এতে করে তাঁদের ব্যবসা লাটে উঠেছে বলে কোন উদাহরণ নেই।

ঈদের দিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে মালিকপক্ষ যেভাবে তিরস্কার ও ঘৃণা পাচ্ছেন। তার পরিবর্তে বছরের দুই ঈদে ছুটি ঘোষণা দিলে অগণিত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের দোয়া পেতে পারেন সহজে। তাছাড়া মানষিক সতেজতা ও ফুরফুরে মেজাজে কাজে ফিরার কারণে কাজের গুণগত মান সুরক্ষা পায়;যা ব্যবসার জন্য সার্বিকভাবে ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য।

তবে আশার কথা হচ্ছে -ঈদের দিন এখন অনেকে তাঁদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। আমাদের উচিত যারা ঈদের দিন তাঁদের ব্যবসা বন্ধ রাখছেন তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা। যে সব প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা ছুটির সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের উচিত এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞবোধ প্রকাশ করা ও কাজের গুণগত মান বাড়িয়ে ব্যবসাকে আরও সমৃদ্ধ করা।

৫২বাংলা ও সাপ্তাহিক পত্রিকার –‘যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই’- সামাজিক আন্দোলনটি বৃটেনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক।মানুষ জাগ্রত হোক। দাবী আদায়ে দৃঢ়প্রতিবাদি ও প্রত্যয়ী হোক- এই প্রত্যাশা।

সকল ধর্মের শ্রমিকদের তাদের উৎসব দিনে ছুটির দাবীতে সোচ্চার হওয়া এখন সময়ের দাবী। ঈদের ছুটি- শ্রমজীবি মুসলমানদের অধিকার; দয়া নয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে, দাবি আদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র-এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

মো: এনাম উদ্দিন, সাবেক শিক্ষক ও হেড অফ প্রোগ্রাম,৫২বাংলা