ঢাকা ০৯:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:০২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / 109

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত তিন বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেনি, বরং বেড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হারও বেড়ে ৫ দশমিক ৬ থেকে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মিলনায়তনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণা প্রতিবেদন ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

পিপিআরসি জানায়, দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে মূলত তিনটি সংকট ভূমিকা রেখেছে—কোভিড-১৯ মহামারি (২০২০-২২), বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের পরিবারের গড় আয় কমলেও খরচ বেড়েছে। বর্তমানে শহরে একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা হলেও খরচ ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। অন্যদিকে গ্রামে আয় কিছুটা বেড়েছে, তবে জাতীয় পর্যায়ে সঞ্চয় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারের মাসিক ব্যয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে খাদ্যে। চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াত খাতেও উল্লেখযোগ্য ব্যয় হচ্ছে।

আগস্টের পর ঘুষ কমেছে

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টের পর ঘুষের পরিমাণ কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আগস্টের আগে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়েছে; আগস্টের পরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে সরকারি অফিসে, এরপর পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।

হোসেন জিল্লুর রহমানের পর্যবেক্ষণ

গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনকালে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারও সঙ্গত কারণে ক্ষুদ্র অর্থনীতির তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে অর্থনীতির পরিকল্পনায় এখন জনমুখী দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু জিডিপি নিয়ে আলোচনা না করে সমতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা ও নাগরিক কল্যাণকে আলোচনায় আনতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় পাঁচটি নতুন ঝুঁকি বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন—
১. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্রমবর্ধমান বোঝা; এর জন্য নতুন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দরকার।
২. নারীপ্রধান পরিবারগুলো সমাজের সবচেয়ে নিচের স্তরে অবস্থান করছে, এদের জন্য বিশেষ সহায়তা জরুরি।
৩. ঋণের বোঝা বাড়ছে, যা বড় সংকটে রূপ নিচ্ছে।
৪. খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ক্রমে বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।
৫. এসডিজি অর্জনে স্যানিটেশন সংকট বড় চ্যালেঞ্জ। এখনো প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ নন-স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করে।

কর্মসংস্থানে জরুরি অবস্থা

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন,
“আমরা এখন কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি। অন্তত ৩৮ শতাংশ মানুষ বলছেন তারা কাজ করছেন, কিন্তু বাস্তবে তারা ছদ্মবেশী বেকার। নারীদের অংশগ্রহণ ২৬ শতাংশে সীমিত। তাই কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ধরনের ভাবনা এবং জরুরি পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে—২০২২ সালে করোনাভাইরাস, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তন। এতে সম্ভাবনার পাশাপাশি অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে।

তার মতে, বর্তমানে প্রায় ১৮ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও যেকোনো সময় নিচে নেমে যেতে পারে। এদেরকেও আলোচনায় আনা দরকার।

তিনি বলেন, “টিসিবি থেকে যারা কেনাকাটা করে তাদের ভিজ্যুয়াল ডায়েরি করলে বোঝা যাবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সেখানে আসছে।”

আশার দিকও আছে

সবকিছুতে হতাশার চিত্র না থাকলেও দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণে সমাজে শ্রেণিবৈষম্য এবং আশাবাদ-নৈরাশ্যের বিভাজন বাড়ছে বলে সতর্ক করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। দরিদ্র মানুষের মধ্যে নৈরাশ্যের প্রবণতা বেশি, ধনী শ্রেণির মধ্যে তা তুলনামূলকভাবে কম।

তবে তিনি ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন। তার মতে, রেমিট্যান্স, পারিবারিক ভোগের বাজার, ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এবং জ্বালানির স্মার্ট ব্যবহার অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে ৭৪ শতাংশ পরিবার স্মার্টফোন ব্যবহার করছে, আর তরুণ প্রজন্ম থাকলে সেই হার ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে

আপডেট সময় : ০৬:০২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

গত তিন বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেনি, বরং বেড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হারও বেড়ে ৫ দশমিক ৬ থেকে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মিলনায়তনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণা প্রতিবেদন ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

পিপিআরসি জানায়, দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে মূলত তিনটি সংকট ভূমিকা রেখেছে—কোভিড-১৯ মহামারি (২০২০-২২), বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের পরিবারের গড় আয় কমলেও খরচ বেড়েছে। বর্তমানে শহরে একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা হলেও খরচ ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। অন্যদিকে গ্রামে আয় কিছুটা বেড়েছে, তবে জাতীয় পর্যায়ে সঞ্চয় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারের মাসিক ব্যয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে খাদ্যে। চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াত খাতেও উল্লেখযোগ্য ব্যয় হচ্ছে।

আগস্টের পর ঘুষ কমেছে

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টের পর ঘুষের পরিমাণ কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আগস্টের আগে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়েছে; আগস্টের পরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে সরকারি অফিসে, এরপর পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।

হোসেন জিল্লুর রহমানের পর্যবেক্ষণ

গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনকালে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারও সঙ্গত কারণে ক্ষুদ্র অর্থনীতির তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে অর্থনীতির পরিকল্পনায় এখন জনমুখী দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু জিডিপি নিয়ে আলোচনা না করে সমতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা ও নাগরিক কল্যাণকে আলোচনায় আনতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় পাঁচটি নতুন ঝুঁকি বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন—
১. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্রমবর্ধমান বোঝা; এর জন্য নতুন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দরকার।
২. নারীপ্রধান পরিবারগুলো সমাজের সবচেয়ে নিচের স্তরে অবস্থান করছে, এদের জন্য বিশেষ সহায়তা জরুরি।
৩. ঋণের বোঝা বাড়ছে, যা বড় সংকটে রূপ নিচ্ছে।
৪. খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ক্রমে বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।
৫. এসডিজি অর্জনে স্যানিটেশন সংকট বড় চ্যালেঞ্জ। এখনো প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ নন-স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করে।

কর্মসংস্থানে জরুরি অবস্থা

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন,
“আমরা এখন কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি। অন্তত ৩৮ শতাংশ মানুষ বলছেন তারা কাজ করছেন, কিন্তু বাস্তবে তারা ছদ্মবেশী বেকার। নারীদের অংশগ্রহণ ২৬ শতাংশে সীমিত। তাই কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ধরনের ভাবনা এবং জরুরি পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে—২০২২ সালে করোনাভাইরাস, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তন। এতে সম্ভাবনার পাশাপাশি অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে।

তার মতে, বর্তমানে প্রায় ১৮ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও যেকোনো সময় নিচে নেমে যেতে পারে। এদেরকেও আলোচনায় আনা দরকার।

তিনি বলেন, “টিসিবি থেকে যারা কেনাকাটা করে তাদের ভিজ্যুয়াল ডায়েরি করলে বোঝা যাবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সেখানে আসছে।”

আশার দিকও আছে

সবকিছুতে হতাশার চিত্র না থাকলেও দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণে সমাজে শ্রেণিবৈষম্য এবং আশাবাদ-নৈরাশ্যের বিভাজন বাড়ছে বলে সতর্ক করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। দরিদ্র মানুষের মধ্যে নৈরাশ্যের প্রবণতা বেশি, ধনী শ্রেণির মধ্যে তা তুলনামূলকভাবে কম।

তবে তিনি ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন। তার মতে, রেমিট্যান্স, পারিবারিক ভোগের বাজার, ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এবং জ্বালানির স্মার্ট ব্যবহার অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে ৭৪ শতাংশ পরিবার স্মার্টফোন ব্যবহার করছে, আর তরুণ প্রজন্ম থাকলে সেই হার ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।