ঢাকা ১১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

ঢাকায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ঃ পুলিশ নিয়ে বিপাকে সরকার

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:৫৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 86
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভোরে কিংবা সন্ধ্যার পর মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট পরে হঠাৎ করেই রাস্তায় নেমে আসেন কয়েকজন। সামনে থাকে ব্যানার, স্লোগানে ভরে ওঠে— “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।” দৌড়ের গতিতে ছুটতে থাকে মিছিল। এভাবেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মিত রাস্তায় নামছেন। রাজধানীতে তাদের এমন ঝটিকা মিছিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ।

প্রথম দিকে এসব মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম হলেও ধীরে ধীরে মিছিল বড় হচ্ছে। বদলাচ্ছে কৌশলও। একদল মিছিল করলে আরেকদল থাকে আটক হলে ছাড়িয়ে আনার জন্য। নিয়মিত এ ধরনের মিছিলের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারও।

পুলিশের পদক্ষেপ ও কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার

ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে না পারায় এরই মধ্যে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার হয়েছেন। পুলিশের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল—১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকাজুড়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল হবে। সে অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর নির্দেশনায় সকাল থেকে একাধিক কমিশনার, ডিসি ও অতিরিক্ত কমিশনার মাঠে অবস্থান নেন।

তবে বিকেলে মোহাম্মদপুর থানা পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম টহলে থাকার কথা থাকা গাড়ি থানার ভেতরে দেখতে পান। এতে সহকারী পুলিশ কমিশনার, অপারেশন্স পরিদর্শক ও এসআই-কে প্রত্যাহার করা হয়।

সব থানায় কড়া নির্দেশনা গেছে—নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা যাতে একত্র হতে না পারে, একত্র হওয়ার আগেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে থানার ওসি ও জোনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একের পর এক ঝটিকা মিছিল

ঢাকায় প্রতিদিনই একাধিক ঝটিকা মিছিল হচ্ছে। এসব মিছিলের ভিডিও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ফেসবুক পেজ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

  • ১৮ সেপ্টেম্বর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় মিছিল শেষে ১১ জন আটক।

  • ১৯ সেপ্টেম্বর কারওয়ান বাজারে সমবেত হওয়া অবস্থায় ছাত্রলীগ কর্মী আবির হোসেন আটক।

  • ১৬ সেপ্টেম্বর শ্যামলীতে মিছিলের পর সংঘাত, কয়েকজন আটক।

  • ৫ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি ও তেজগাঁওয়ে একযোগে মিছিল।

  • রাতেও মিছিল—১৬ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের দিলকুশায়, পুলিশ পাঁচজন আটক করে।

  • ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলামোটর ও গুলশানে মিছিলের সময় ১১ জন গ্রেফতার।

  • ৯ সেপ্টেম্বর মিরপুরে মিছিল শেষে ১৮ জন আটক।

ঢাকার বাইরেও বিভাগীয় শহরগুলোতে একইভাবে ঝটিকা মিছিল হচ্ছে।

বিদেশ থেকে অর্থ ও নির্দেশনা

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এসব মিছিল ঢাকায় হলেও অংশ নিচ্ছেন ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা। যাতে স্থানীয়রা চিনতে না পারে এবং দ্রুত মিছিল শেষ করে সরে যেতে পারে। বিদেশে পালানো নেতাকর্মীরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আটক অনেকেই পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, বিদেশ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের আতঙ্ক

ডিএমপি কমিশনার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—যে থানায় ঝটিকা মিছিল হবে, সেই থানার ওসি ও পরিদর্শককে জবাবদিহি করতে হবে, প্রয়োজনে প্রত্যাহার করা হবে। ইতিমধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার দুই পরিদর্শক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের দাবি, হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের জন্য ৫-১০ জন মিলে মিছিল করলে পুলিশ যাওয়ার আগেই তারা সটকে পড়ে। পরে ছবি-ভিডিও দেখে গ্রেফতার করতে হচ্ছে।

সরকারের অবস্থান

৭ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানো হবে, নেপথ্যের হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন—পুলিশের কোনো নিষ্ক্রিয়তা ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেফতার, পুরস্কার ও পুলিশের মন্তব্য

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “এ পর্যন্ত ঢাকায় ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিককে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ধরিয়ে দিলে পুলিশকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে—এমন গুঞ্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশের ভালো কাজকে আইনগতভাবে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নির্দিষ্টভাবে ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে কোনো পুরস্কার ঘোষণা হয়নি।”

ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের হলেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহানগরের নেতারা। তিনি বলেন, “আমরা সজাগ আছি, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ঢাকায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ঃ পুলিশ নিয়ে বিপাকে সরকার

আপডেট সময় : ১১:৫৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভোরে কিংবা সন্ধ্যার পর মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট পরে হঠাৎ করেই রাস্তায় নেমে আসেন কয়েকজন। সামনে থাকে ব্যানার, স্লোগানে ভরে ওঠে— “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।” দৌড়ের গতিতে ছুটতে থাকে মিছিল। এভাবেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মিত রাস্তায় নামছেন। রাজধানীতে তাদের এমন ঝটিকা মিছিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ।

প্রথম দিকে এসব মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম হলেও ধীরে ধীরে মিছিল বড় হচ্ছে। বদলাচ্ছে কৌশলও। একদল মিছিল করলে আরেকদল থাকে আটক হলে ছাড়িয়ে আনার জন্য। নিয়মিত এ ধরনের মিছিলের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারও।

পুলিশের পদক্ষেপ ও কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার

ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে না পারায় এরই মধ্যে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার হয়েছেন। পুলিশের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল—১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকাজুড়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল হবে। সে অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর নির্দেশনায় সকাল থেকে একাধিক কমিশনার, ডিসি ও অতিরিক্ত কমিশনার মাঠে অবস্থান নেন।

তবে বিকেলে মোহাম্মদপুর থানা পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম টহলে থাকার কথা থাকা গাড়ি থানার ভেতরে দেখতে পান। এতে সহকারী পুলিশ কমিশনার, অপারেশন্স পরিদর্শক ও এসআই-কে প্রত্যাহার করা হয়।

সব থানায় কড়া নির্দেশনা গেছে—নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা যাতে একত্র হতে না পারে, একত্র হওয়ার আগেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে থানার ওসি ও জোনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একের পর এক ঝটিকা মিছিল

ঢাকায় প্রতিদিনই একাধিক ঝটিকা মিছিল হচ্ছে। এসব মিছিলের ভিডিও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ফেসবুক পেজ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

  • ১৮ সেপ্টেম্বর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় মিছিল শেষে ১১ জন আটক।

  • ১৯ সেপ্টেম্বর কারওয়ান বাজারে সমবেত হওয়া অবস্থায় ছাত্রলীগ কর্মী আবির হোসেন আটক।

  • ১৬ সেপ্টেম্বর শ্যামলীতে মিছিলের পর সংঘাত, কয়েকজন আটক।

  • ৫ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি ও তেজগাঁওয়ে একযোগে মিছিল।

  • রাতেও মিছিল—১৬ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের দিলকুশায়, পুলিশ পাঁচজন আটক করে।

  • ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলামোটর ও গুলশানে মিছিলের সময় ১১ জন গ্রেফতার।

  • ৯ সেপ্টেম্বর মিরপুরে মিছিল শেষে ১৮ জন আটক।

ঢাকার বাইরেও বিভাগীয় শহরগুলোতে একইভাবে ঝটিকা মিছিল হচ্ছে।

বিদেশ থেকে অর্থ ও নির্দেশনা

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এসব মিছিল ঢাকায় হলেও অংশ নিচ্ছেন ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা। যাতে স্থানীয়রা চিনতে না পারে এবং দ্রুত মিছিল শেষ করে সরে যেতে পারে। বিদেশে পালানো নেতাকর্মীরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আটক অনেকেই পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, বিদেশ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের আতঙ্ক

ডিএমপি কমিশনার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—যে থানায় ঝটিকা মিছিল হবে, সেই থানার ওসি ও পরিদর্শককে জবাবদিহি করতে হবে, প্রয়োজনে প্রত্যাহার করা হবে। ইতিমধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার দুই পরিদর্শক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের দাবি, হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের জন্য ৫-১০ জন মিলে মিছিল করলে পুলিশ যাওয়ার আগেই তারা সটকে পড়ে। পরে ছবি-ভিডিও দেখে গ্রেফতার করতে হচ্ছে।

সরকারের অবস্থান

৭ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়ানো হবে, নেপথ্যের হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন—পুলিশের কোনো নিষ্ক্রিয়তা ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেফতার, পুরস্কার ও পুলিশের মন্তব্য

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “এ পর্যন্ত ঢাকায় ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিককে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ধরিয়ে দিলে পুলিশকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে—এমন গুঞ্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশের ভালো কাজকে আইনগতভাবে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নির্দিষ্টভাবে ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে কোনো পুরস্কার ঘোষণা হয়নি।”

ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের হলেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহানগরের নেতারা। তিনি বলেন, “আমরা সজাগ আছি, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত।”